ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের মামলা প্রসঙ্গে সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, ঠুনকো অভিযোগে একজন নোবেল লরিয়েটকে প্রায় প্রতিদিন আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার লন্ডন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দুঃশাসনের কালে কারোই রেহাই নেই। আপনি রাজনীতি করনে কিংবা না করেন, কেউই নিরাপদ নন। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহারও রেহাই মেলেনি। কারণ কী? কারণ শেখ হাসিনা এখন কেবলমাত্র একটি কলের পুতুল। শেখ হাসিনার ক্ষমতার নাটাই দেশের জনগণ কিংবা বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে নয়। শেখ হাসিনার ক্ষমতার নাটাই বাংলাদেশের সীমানার বাইরে। সুতরাং, আপনার কিংবা আপনাদের স্বার্থ দেখা তাবেদার শেখ হাসিনার পক্ষে সম্ভব নয়। এমনকি তাবেদার শেখ হাসিনা আপনার স্বার্থ দেখার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা কাউকে মানুষ বলেই গণ্য করছে না। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার থাবা থেকে বর্তমানে একজন নোবেল লরিয়েটেরও রেহাই মিলছে না। এক যুগের বেশি পার হলেও এখনো সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার হয়নি। গত ১৫ বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর একটি হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত কিংবা বিচার হয়নি। দেশে সংঘটিত একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনারও বিচার হয়নি। ব্যাংক খেকোদের বিচার হয়নি।
তারেক রহমান বলেন, বেগম খালেদা জিয়া, ড. ইউনূস, শহিদুল আলম, দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ এবং ভিন্নমতের মানুষের প্রতি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নির্মম আচরণ দেখেও এখনো যারা না দেখার ভান করছেন কিংবা এখনো যারা শেখ হাসিনার অবিচার-অনাচারের বিরুদ্ধে সাধ্যমতো প্রতিবাদী হয়ে উঠছেন না আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি চুপ করে থেকে কেউ নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবেন না।
এ বিষয়ে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, কেন এ কথা বললাম। এর কারণ আপনারা দেখেছেন, দেশের সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যা, এমনকি বিজিবি সদস্য মেরে ফেললেও বাংলাদেশের প্রতিবাদ করার সাহস নেই। বরং, দিন দুয়েক আগে ‘ডামি প্রধানমন্ত্রীর ডামি উপদেষ্টা’র একটি বক্তব্য রীতিমতো বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য উদ্বেগজনক। তিনি বলেছেন, সীমান্তে মৃত্যুর ঘটনা হত্যাকাণ্ড নয়, সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নাকি দুর্ঘটনা।
দেশের সবাই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো অজুহাত কিংবা ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থ প্রাধান্য দিয়ে যদি আমরা ঐকবদ্ধ না হই তবে একদিন আমাদেরকেও হয়তো নিজ ভূমিতেই নির্মম নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের ভাগ্য বরণ করতে হবে।
বক্তব্যে তিনি বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের উল্লেখ করে বলেন, কোনো ঘটনা-দুর্ঘটনা যখন নৈমিত্তিক হয় দাঁড়ায় তখন সেটি আর দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। যখন তখন যেখানে সেখানে আগুন লেগে ঘরবাড়ি, বস্তি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বহুতল ভবন পুড়ছে। শত শত মানুষ মরছে। শত শত কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। অথচ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রোধের জন্য ফায়ার সার্ভিসের আধুনিকায়ন নেই। আধুনিক সরঞ্জাম নেই।
বক্তব্যের শুরুতেই তিনি দেশের মানুষ আসন্ন পবিত্র রমজান মাসের শুভেচ্ছা জানান।
তিনি বলেন, পবিত্র রামাদান মাসে মানুষ একটু শান্তি এবং স্বস্তিকর পরিবেশে রোজা রাখবে, সেহরি করবে, ইফতার করবে, এবাদত বন্দেগি করবে, এমনটিই ছিল জনগণের আশা। কিন্তু দেশে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রতিদিন বেড়েই চলছে চাল-ডাল-লবন-তেল-চিনি-পেঁয়াজের দাম। এমনকি রোজাদারদের জন্য ইফতারের প্রধান অনুষঙ্গ খেজুরের দাম পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার ‘ডামি সরকার’ বলছে খেজুর নাকি বিলাসী পণ্য। এই অজুহাতে খেজুর আমদানির ওপর অস্বাভাবিক হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। সচেতন জনগণের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, রোজাদারদের কাছে খেজুর কি বিলাসী পণ্য? সাধারণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বর্তমানে দেশে ১১০ টাকা কেজি দরে আমদানি করা খেজুরের শুল্ক দিতে হয় ১৪০ টাকা। ১২০ টাকা কেজি দরে আমদানি করা খেজুরের শুল্ক দিতে ২১০ টাকা। প্রশ্ন হচ্ছে, খেজুরের ওপর এমন অস্বাভাবিক হারে শুল্ক আরোপ করলে বাজারে খেজুরের দাম কমবে কি করে? সুতরাং, অন্তত রমজান মাসের জন্য হলেও খেজুর আমদানির ওপর শুল্ক মওকুফ সময়ের দাবি।
তিনি বলেন, বছরের পর বছর ধরে অকারণে রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকা খরচ করেই চলেছে। দুর্নীতির মেগা প্রজেক্ট কুইক রেন্টালের মাধ্যমে ভর্তুকি কিংবা ক্যাপাসিটি চার্জের নামে দলীয় দুর্নীতিবাজদেরকে কমপক্ষে ১ লাখ কোটি টাকা দিয়েছে। অথচ, দেশের কোটি কোটি মুসলমানদের ইফতারের জন্য খেজুর আমদানির ওপর ভর্তুকি দূরে থাক উল্টো খেজুর আমদানির ওপর অস্বাভাবিক হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। বছরে একটি মাত্র মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ সারা দিন রোজা শেষে অর্থের অভাবে হয়তো ইফতারের সময় একটি খেজুর খেতে পারবেন না এটি অন্যায়। এটি অন্যায্য।
তারেক রহমান বলেন, দুর্নীতি ও অদক্ষতা আড়ালের অপচেষ্টা হিসাবে সরকার গোশতের পরিবর্তে কাঁঠাল দিয়ে বার্গার বানানো, খেজুরের পরিবর্তে বড়ই খাওয়ার হাস্যকর পরামর্শ দিয়ে জনগণের সঙ্গে মশকরা করছে। সারা দিন রোজা শেষে ধনী-গরিব সকল রোজাদারদের কাছে ইফতারের সময় খেজুর শুধুমাত্র সাধারণ একটি ফল হিসেবে বিবেচিত নয়, বরং এটি সুন্নত। এটি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষঙ্গ কিংবা রীতি। দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণ বিশ্বাস করে শেখ হাসিনার ডামি সরকার, অত্যন্ত সুক্ষ এবং পরিকল্পিতভাবেই দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় সংস্কৃতি এবং সামাজিক রীতি ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
তারেক রহমান প্রশ্ন করেন, দেশের জনগণের ধর্মীয় সংস্কৃতি এবং সামাজিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শেখ হাসিনা কাদেরকে খুশি করতে চায়?