উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি-কে ভোট দিয়েছে ভারতের বেশিরভাগ ভোটাররা এবং এর ফলে দলটি তার বর্তমান জোটকে নিয়ে লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে বলে ভোট-ফেরত দু'টি জরিপে আভাস দেয়া হয়েছে।
সোমবার সিভোটার নামের একটি জরিপ সংস্থা এইসব আভাস দিয়েছে। ফলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মসনদে বসতে যাচ্ছেন বিজেপি’র এই নেতা।
এ জরিপের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে বিজেপি একাই ৫৪৩ আসনের মধ্যে ২৪৯টি আসন এবং তার জোটের শরিক দলগুলো পেতে পারে আরো ৪০টি আসন। সংস্থাটি বলেছে, ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের আসন সংখ্যা রেকর্ড মাত্রায় নেমে আসবে।
বিজেপি ও শরিক দলগুলোর জোট এনডিএ বা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স মোট ২৭২টি আসন পাবে বলে 'ইন্ডিয়া টুডে' গ্রুপের সমীক্ষায় আভাস দেয়া হয়েছে।
ভারতের সংসদ নির্বাচনে আজই ছিল ভোট গ্রহণের শেষ দিন। আগামী ১৬ ই মে এই নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের কথা রয়েছে।
নবম ও শেষ দফায় ভোট হয় পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উত্তর প্রদেশের ৪১টি আসনে। তবে সকলের দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত ছিল উত্তর প্রদেশের বারাণসী আসনের দিকে।
সংসদের ৫৪৩টি আসনের মধ্যে সোমবার শেষ দফায় ভোট হয় পশ্চিমবঙ্গের ১৭টি, বিহারের ৬টি এবং উত্তর প্রদেশের ১৮টি আসনে। এবারের নির্বাচনে ভোটের আনুপাতিক হার ৬৬ শতাংশের বেশি, যেটাকে গত তিনটি সাধারণ নির্বাচনের তুলনায় সর্বাধিক বলা যায়।
সোমবারের ভোটে যেসব হেভিওয়েট প্রার্থীর রাজনৈতিক ভাগ্য ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) বন্দি হয়, তাদের মধ্যে আছেন আজমগড় আসনে সমাজবাদী পার্টির সুপ্রীমো মুলায়েম সিং, বারাণসী আসনে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী, আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দোপাধ্যায় (উত্তর কোলকাতা), দীনেশ ত্রিবেদি (ব্যারাকপুর), সৌগত রায় (দমদম), কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অধীর চৌধুরি (বহরমপুর), সিপিআই-এমের প্রাক্তন বামফ্রন্ট অর্থমন্ত্রী অসীম দাসগুপ্ত (দমদম), সুভাষিনী আলি (ব্যারাকপুর) এবং বিজেপির তপন শিকদার প্রমুখ।
তবে গোটা দেশের নজর কেন্দ্রীভূত বারাণসী আসনের ফলাফলের দিকে। যেটা মোদীর কাছে এক মর্যাদার প্রশ্ন। দিল্লির সিংহাসনে বসার পথ মসৃণ করতে বিজেপিকে উত্তর প্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে পেতে হবে কমপক্ষে ৪০টি আসন। সেই লক্ষ্য নিয়েই মোদী চেয়েছেন মোদী ঢেউ-এ বারাণসীকে প্লাবিত করতে। ভোট প্রচারে তিনি একাই চষে বেড়িয়েছেন দেশ জুড়ে প্রায় তিন লাখ কিলোমিটার। তারমধ্যে উত্তর প্রদেশেই প্রায় ৪০ হাজার কিলোমিটার। জনসভা করেছেন ৪৪০টি। মোদী এখন হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিজেপির প্রতীক, অর্থাৎ মোদীই বিজেপি বা বিজেপিই মোদী। তবু বারাণসী কেন্দ্রে কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন আম আদমি পার্টির প্রধান দিল্লির ৪৯ দিনের মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
পশ্চিমবঙ্গে রক্তাক্ত পরিবেশে ভোট হয়। বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয় শাসকদল ও বিরোধী দলগুলির মধ্যে। আহত হন ২২ জনের বেশি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ মারপিট, ভাঙচুর, হুমকি দেয়া, ভয় দেখানো এইসব কিছুই করেছে তৃণমূল সমর্থকেরা। নাগরিক সমাজ মনে করছে ভোটের সময় সাবেক বামফ্রন্টের কৌশল নিয়েছে এবার তৃণমূল। বিজেপি এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গে অন্যান্য বারের চেয়ে এবারে প্রার্থী দিয়েছে অনেক বেশি। বিজেপিকে আটকাতে মুখ্যমন্ত্রী কোনো কিছু করতে বাকি রাখেননি, এমন কী ব্যক্তিগত স্তরে গালাগালির পর্যায়ে নেমে আসতেও দ্বিধা করেননি।