ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সরকার মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রমজানের ছুটি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার মাহফিল আয়োজনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।
মঙ্গলবার পহেলা রমজানে রাজধানীল বেইলি রোডের লেডিস ক্লাবে আলেম-ওলামা ও এতিমদের সঙ্গে বিএনপির ইফতার পার্টিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। দেশের ৯০ ভাগের বেশি মানুষ মুসলমান। পুরো রমজান জুড়ে সারাদেশের স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা বন্ধ থাকে। অথচ এ বছর কিন্তু তার ব্যতিক্রম। ডামি সরকার রমজানের অর্ধেক মাস দেশের সকল বিদ্যালয় খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ডামি সরকার প্রতিটি ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কী কারণে বিতর্ক সৃষ্টি করতে চায়? আপনারা নিশ্চয়ই সুক্ষ্মভাবে খেয়াল করলে দেখবেন, রমজান মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইফতার পার্টি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে গরুর গোশত নিয়ে শর্তারোপ করে বর্তমান ডামি সরকার মুসলিম জনগোষ্ঠী ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাইছে।
তারেক রহমান বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সীমাহীন লুটপাট, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের সবকিছুর দাম সাধারণ মানুষে নাগালের বাইরে। রমজানে খেজুরের শুল্ক বাড়িয়ে তারা সরকারি ব্যাংকগুলোতে ভর্তুকি দিচ্ছে। অথচ ব্যাংকগুলো তারাই লুটপাট করে শেষ করে দিয়েছে। এখন জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় সেগুলোতে ভর্তুকি দিচ্ছে। পক্ষান্তরে সাধারণ মানুষ রমজানে দুটি খেজুর খাবে, সেখানে তাদের কোনো নজর নেই। তা নিয়ে তাদের ডামি মন্ত্রীরা মশকরা করছেন। আসলে যে সরকারের জন্মই হয়েছে অবৈধ পথে, তারা নিয়মমাফিক কিছু করতে পারে না। তারা কেবল জনগণের সঙ্গে তামাশা করতে পারে।
তিনি বলেন, পবিত্র রমজান মাসে ডামি ও লুটেরা সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে তো পারছেই না, বরং নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের অজুহাত দিচ্ছে। অথচ বাস্তব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থার তথ্য বলছে, গত সাত মাস ধরে বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম কমা অব্যাহত রয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই, বিশেষ করে গত সাত মসে দুধ ও দুগ্ধপণ্যে ১৩ শতাংশ, ভোজ্য তেলে ১১ শতাংশ এবং মাংস জাতীয় খাবারের দাম ৮ শতাংশ কমেছে। সারা বিশ্বে দাম কমলেও কমেনি কেবল বাংলাদেশে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে পণ্যের দাম কমার সাথে বিশ্ব বাজারের কোনো সম্পর্ক নেই। দেশে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার পেছনে আওয়ামী লুটেরাদের সম্পর্ক। এই আওয়ামী লুটেরা আর টাকা পাচারকারীদের দমন করা না গেলে কখনো জিনিসপত্রের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে আসবে না।
তারেক রহমান বলেন, আজকে যেখানে আপনারা বসে ইফতার করছেন, তার খুব কাছেই বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে ৪৭ জন মানুষ পুড়ে মারা গেল। এর দায় কিন্তু কোনোভাবে এ ডামি সরকার এড়াতে পারে না। আজকে দেশে একটার পর একটা অগ্নিকাণ্ড ঘটে চলেছে। অথচ সরকার নির্বিকার। জনগণ বিশ্বাস করে অনেক অগ্নিকাণ্ডের পেছনে রয়েছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও দলীয় রাজনীতিক দুর্বৃত্ত, অব্যবস্থপনা কিংবা উচ্ছেদ, ভূমি ও জমি দখলের চেষ্টা।
তারেক রহমান বলেন, অথচ ডামি সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে নগরজুড়ে রেস্টুরেন্টগুলোতে প্রতিদিন অভিযান চালাচ্ছে। প্রতিদিন রেস্টুরেন্টের মালিক, কর্মচারীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে, গ্রেপ্তার করে নগদ অর্থ আদায় করছে। যেখানে অভিযান সেখানে অনিয়ম। এ সরকার তাহলে গত ১৫ বছরে কী করেছে? আসলে অবৈধভাবে যে সরকারের জন্ম, সে সরকারের পক্ষে নিয়মমাফিক কিছু করা সম্ভব নয়।
এখনো হোটেল-রেস্টুরেন্ট কর্মচারীদের হয়রানি করা হচ্ছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এসব মালিক ও কর্মচারীদের গ্রেপ্তার না করে বরং গত ১৫ বছরে বিনা ভোটের এমপি-মন্ত্রীদের গ্রেপ্তার করলে দেশে আইনশৃঙ্খলা ফিরে আসত।
দেশের আলেম সমাজের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, আলেম সমাজের মধ্যে যদি অন্য কোনো ইস্যু নিয়ে বিতর্ক বাড়তে থাকে, আমরা যদি দেশের ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে চলমান ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সচেতন না হই, আমার যদি নিজেদের অগ্রাধিকার নির্ধারণে ব্যর্থ হই, তবে সেদিন হয়তো বেশি দূরে নয় যে আমাদের নিজ ভূমিতে নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে। সেই আলামত মনে হয় ক্রমে সুষ্পস্ট হয়ে উঠছে।