ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর এবং আত্মীয় ছিলেন। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। একজন তাত্ত্বিক লেখক এবং বহুমাত্রিক মেধাবী রাজনীতিবিদ হিসেবে তার সুখ্যাতি ছিল। ৭৫’ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময় শেখ ফজলুল হক মনিকেও তার ধানমন্ডির বাসায় আক্রমণ করে ৭৫’ এর ঘাতকরা। সেই সময় শেখ ফজলুল হক মনি এবং তার অন্তঃসত্বা স্ত্রী আরজু মনিকে হত্যা করে নরপিশাচরা। অলৌকিকভাবে দুই শিশু শেখ ফজলে শামস পরশ এবং শেখ ফজলে নূর তাপস বেঁচে যান। পরবর্তীতে শেখ মনির ছোট ভাই শেখ সেলিম তাদেরকে পিতৃস্নেহে পালন করেন। দুইজনই আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব শুধু হননি, একজন শিক্ষিত নাগরিক হিসেবে তারা নিজেদেরকে গড়ে তুলেছেন।
পরশ যুবলীগের সভাপতি হওয়ার আগে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। অন্যদিকে তাপস প্রথিতযশা আইনজীবী হিসেবে ইতোমধ্যে সুনাম কুড়িয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের বহুমাত্রিক প্রতিভা সম্পন্ন এই রাজনীতিবিদের দুই পুত্রের বিরোধের খবর এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করেছে। এর বিরোধের রেশে হিসেবেই সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে বলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মনে করেন। আর একারণেই তারা কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি নন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির নির্বাচন পরবর্তী যে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে সে ঘটনায় যাদেরকে আসামী করা হয়েছে সেই আসামীদের তালিকায় এক নম্বরে আছেন নাহিদ সুলতানা যূথী। যিনি শেখ পরশের স্ত্রী।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, যূথীকে ঘিরেই পরশ এবং তাপসের মধ্যে এক ধরনের দূরত্ব এবং সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। যূথী আওয়ামী লীগ ঘরানার আইনজীবী হলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এর আগেও তাকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ ছিল। আর এই বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিলেন শেখ ফজলে নূর তাপস বলেও বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করে। শেখ তাপস চাননি যে যূথী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতৃত্বে আসুক। এখান থেকেই বিরোধের সূত্র। এবার নির্বাচনে তাপসকে চ্যালেঞ্জ করেই নাহিদ সুলতানা যূথী সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলেন বলেও বিভিন্ন সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে। আর এটির ফলে দুই ভাইয়ের বিরোধ আরও দৃশ্যমান হয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন।
বেশ কিছুদিন ধরেই দুই ভাইয়ের (পরশ এবং তাপস) মধ্যে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও এই যূথীর বিষয়টি তাদেরকে স্পর্শকাতর দ্বন্দ্বের দিকে নিয়ে যায়। এবং দ্বন্দ্ব এখন পর্যন্ত দূর হয়নি বলেও ধারণা করা হচ্ছে। যূথী কান্ডের কারণেই পরশের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়েছিল নাহিদ সুলতানা যূথীকে খোঁজার জন্য এবং তাকে না পেয়ে চলে যায় এটি আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। দুই ভাইয়ের বিরোধের কারণে আওয়ামী লীগ একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পরেছে বলেও একাধিক আওয়ামী লীগের নেতা নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে বলেছেন। একদিকে যেমন নাহিদ সুলতানা যূথী যে কান্ড করেছেন এবং তাকে যেহেতু আসামী করা হয়েছে সেজন্য বিচারের স্বার্থে হলেও তাকে গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন এবং অন্যদিকে তিনি যুবলীগের সভাপতির স্ত্রী। তাকে গ্রেপ্তার করার বিষয়টির সাথে অনেক কিছু জড়িত রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে শহীদ শেখ ফজলে হক মনির দুই পুত্রের বিরোধ আওয়ামী লীগে একটি অস্বস্তি তৈরি করেছে। তবে বিভিন্ন মহল মনে করছে যে, এই বিরোধ গুলো ব্যক্তিগত, ব্যক্তিগত বিরোধকে দলীয় বিরোধে জায়গা দেওয়া কোন ভাবেই উচিত নয়।