ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগ ছাড়া সব নিয়োগ বাতিলের হুমকি দিয়েছে ছাত্রলীগ। বুধবার বিকেলে সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত কম্পিউটার ল্যাব সহকারী ইয়াহিয়া টিপুকে রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে আটকে মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহম্মেদকে কড়া ভাষায় শাসায় ছাত্রলীগ নেতারা। তারা বলেন, “ছাত্রলীগের বাইরে সব নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যাক্তির” নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
জানা গেছে, ইয়াহিয়া দৈনিক ৫৫০ টাকা মজুরিতে অস্থায়ীভিত্তিতে মনোবিজ্ঞান বিভাগের ল্যাব সহকারী পদে নিয়োগ পান। বুধবার দুুপুরে ইয়াহিয়া রেজিস্ট্রার অফিসে যোগদান করতে আসেন। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে রেজিস্ট্রার ভবনের ভেতরে আটকে মারধর করে।
ইয়াহিয়া অভিযোগ করেন, দুপুরে আমি চাকরিতে যোগদান করতে এসেছিলাম। ছাত্রলীগের নেতারা আমাকে জিজ্ঞেস করছে, আমি ছাত্রলীগ করি কি-না। আমি বলেছি, না। সাথে সাথে তারা আমাকে মারধর করে।
ইয়াহিয়াকে মারধর ও রেজিস্ট্রারকে হুমকি-ধমকি দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা ওয়াহিদুল ইসলাম রেজিস্ট্রারকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বাইরে সব নিয়োগ ‘ক্যান্সেল’ করতে হবে।
ওয়াহিদ রেজিস্ট্রারের দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলতে থাকেন, “এখনো পিছনে বসে আছে ও (ইয়াহিয়া)। ও ছাত্রলীগ করে না। তবুও ওরে চাকরি দিয়েছেন। ওর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ খাইছে ভিসি ম্যাম।”
ঘটনাস্থলে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা উপস্থিত ছিলেন। তারা অসৌজন্যমূলকভাবে রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় ছাত্রলীগের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোরশেদুল আলম রিফাত রেজিস্ট্রারকে হুমকি দেন, “ছাত্রলীগের বাইরের এগুলা ক্যান্সেল। ছাত্রলীগ কর্মী না। ছাত্রলীগের বাইরের নিয়োগ ক্যান্সেল। ছাত্রলীগের পোলারে নিয়োগ দিলে সমস্যা নাই। ছাত্রলীগের বাইরে যেগুলা, ওইগুলা ক্যান্সেল। ছাত্রলীগের পোলাপাইনের চাকরি লওয়ার অধিকার আছে। বাইরের পোলাপাইনের কী অধিকার? ছাত্রলীগের বাইরে সব ক্যান্সেল।”
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ছাত্রলীগ নেতাদের পক্ষে নতুন উপাচার্যকে এসব নিয়োগের ব্যাপারে বলার জন্য রেজিস্ট্রারকে নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন তারা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সুমন মামুন ও সাধারণ সম্পাদক মনসুর আলীকেও উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। তারাও ছাত্রলীগ নেতাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কয়েকজন সদস্যও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের বাংলা আউটলুককে বলেন, আমি যোগদান করার সাথে সাথেই এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলো। এটি আসলেই দুঃখজনক। এমন পরিবেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এবং প্রশাসনের জন্য হুমকি। আমি বৃহস্পতিবারই তদন্ত করব। এমন ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরকে আমরা ছাড় দেব না।