ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগ দল। এটা বর্জন করলেই শেষ।’ আজ শুক্রবার ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
৭ জানুয়ারি নির্বাচন প্রসঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আপনি তো ভেজাল লাগালেন। বললেন, সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশের লোক আমাদের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র লিপ্ত হয়েছিল, ভারত যদি পাশে না থাকত ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পূর্ণ করতে পারতাম না। এটা তো আমাদের দলের কেউ বলেনি। এখানে কী বুঝব? আজকে সবাই পণ্য বর্জনের কথা বলছে। তাহলে ভারতের সবচেয়ে বড় পণ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগ (সরকার), শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী)। এই সরকারকে বর্জন করার তো করছেই- এটা ফেলে দিলেই শেষ। এই একটা পণ্য বর্জন করলেই তো জাতি মুক্ত হয়, সব পণ্য বর্জনের প্রয়োজন হয় না।’
চিকিৎসাসহ নানা কারণে প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার উদ্দেশে দশ হাজার মানুষ পাসপোর্ট জমা দেন বলে মন্তব্য করেন গয়েশ্বর বলেন, ‘গড়ে ৮’শ টাকা করে হলেও প্রতিদিন ৮০ কোটি টাকা লাগে এ জন্য। যদি একটা মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে তার প্রতিদিন খরচ গড়ে ৫ হাজার টাকা। আসার সময় আবার ৫০ হাজার টাকার বাজার করেও আনেন। আরও অন্যান্য খরচ আছে। তাহলে বছরে কত টাকা বাংলাদেশ থেকে সেদেশে যায়, হিসাব করেছেন? পণ্য বর্জন কিসের বাংলাদেশের মানুষ যদি বলে, কাল থেকে ভারত যাব না, তাহলে দিল্লী বলবে, শেখ হাসিনা তোমাকে রাখতে গিয়ে আমরা বাঁচতে পারব না। বাংলাদেশের মানুষ ভারত না গেলে দেশটির অর্থনীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?’
১৯৪৭ সালে ১৫ আগস্ট ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার আগেই কিভাবে দেশকে সাজাবে তার পরিকল্পনা দেশটির নেতারা গ্রহণ করে বলে মন্তব্য করেন গয়েশ্বর তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে তারা বিদেশি পণ্য আমদানি করত না। তারা স্বদেশী পণ্য দিয়ে কষ্ট করে চলত। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর লুটপাট শুরু হল। তাদের নেতাই (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) বলেছেন, ‘‘সাত কোটি জনগণ, সাড়ে সাত কোটি কম্বল আমার কম্বল পাইলাম না।” তিনি এ-ও বলেছিলেন, “সবাই পায় তেলের খনি, হিরার খনি; আমি পেলাম চোরের খনি। যেদিকে তাকাই সব আমার লোক, সব চাটার দল খায়।” এখন শেখ মুজিবুর রহমান নেই, কিন্তু চাটার দল তো রয়ে গেছে। সেই দলের নাম হচ্ছে আওয়ামী চাটারলীগ। সেই দলের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও থিংকট্যাংক তারা আগামী একশ বছর পর দেশের কী হবে তা নিয়ে হিসাব কষে বলে মন্তব্য করেন গয়েশ্বর বলেন, ‘সেই অনুযায়ী তারা কাজ করে। তারা দেশের মধ্যে মাতব্বরি করে না। কিন্তু আমাদের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা তারা আমাদের (বিরোধী দল) পেছনে লেগে আছে। তারা দেশের জন্য কাজ করতে পারে না। যদি পারত তাহলে দেশে এতো চুরি ডাকাতি হত না। ৭ জানুয়ারির ডামি, স্বামী, সমকামী নির্বাচন কারা করছে?
সদ্য কারামুক্ত বিএনপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে পাশে রেখে গয়েশ্বর বলে, ‘মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের স্বীকার করতে হয়ত কষ্ট হবে- জেলখানায় যারা (বিএনপির) গেছে, ওখান পর্যন্ত তারা (গোয়েন্দা সংস্থার লোক) গেছে। হয় কাউকে কাতুকুতু দিছে, আকার ইঙ্গিতে ভয় দেখাইছে, লোভ দেখাইছে। শাহজাহান ওমর তো কাতুকুতু দেওয়ার আগেই কাত হয়ে পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের একজন বীরউত্তম, তার আর কিছু লাগে?’
শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ প্রসঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সেদিন আমিও মিছিল নিয়ে উপস্থিত ছিলাম। সেদিন শেখ মুজিবুর রহমান সংগ্রামের টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছে, সবাই বাঁশের লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল,যার যা ছিল তাই নিয়েই দাঁড়িয়ে ছিল। জিয়াউর রহমান দেশের মানুষের মনোভাব বুঝে যুদ্ধের ঘোষণা দিলে, খেলা শুরু হয়ে যায়। এই খেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরদের খেলা নয়। তারা অনেক রকমের খেলা খেলে।’
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যদি স্বাধীনতার পঠাক হন, তাহলে লেখক কোথায়? সেই কাগজটি কোথায়? জিয়াউর রহমানকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমাদের (বিএনপি) কোনো প্রচেষ্টার প্রয়োজন নেই। জিয়াউর রহমান নিজেই নিজের কর্মগুণে প্রতিষ্ঠিত জাতির অন্তরে, ইতিহাসে। জিয়াউর রহমানকে ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা কখনোই সম্ভব নয়। জিয়াউর রহমানকে প্রতিষ্ঠিত করতে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন নেই।’
আয়োজক সংগঠন ‘অন্তরে মম শহীদ জিয়ার’ উপদেষ্টা ঢালী আমিনুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলমের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাছের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ, এডভোকেট রফিক সিকদার, সাবেক যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর হাওলাদার, জাতীয়তাবাদী তাঁতি দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মনিরুজ্জামান মনিরসহ আরও অনেকে।