চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ নেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৬৩৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। এ পরিসংখ্যান বলছে, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার গতি এখনও অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার গতি মোটেও স্বাভাবিক নয়।
কারণ জুলাই-এপ্রিল মাস পর্যন্ত সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে প্রকৃত ঋণ করেছে প্রায় ২১ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। কিন্তু এ সময় পর্যন্ত সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ করেনি। উল্টো আগের নেয়া ঋণের প্রায় ১৭ হাজার ১২৮ কোটি টাকা শোধ দেখানোয় সরকারের নিট ঋণ অনেক কম দেখা যাচ্ছে। যদিও সরকারের ব্যাংক ঋণ এখনও বাজেট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই রয়েছে। চলতি অর্থবছরে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে ২৫ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে ১৪ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা নেয়া হবে দীর্ঘমেয়াদে এবং ১১ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা নেয়া হবে স্বল্প মেয়াদে।
সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাত চাহিদানুযায়ী ঋণ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে এমন আশঙ্কা করা হয়। কিন্তু নির্বাচনপূর্ববর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ায় চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কম ছিল। এ কারণে সরকার ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ করলেও বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এমন মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, চলতি অর্থবছরের ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারের মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। যা গত বছরের ৩০ জুলাই ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৮১৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ফলে ১০ মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নেয়া নিট ঋণের স্থিতি হয়েছে ৪ হাজার ৬৩৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
২৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের নেয়া ঋণের মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯৮ হাজার ৩৪২ কোটি ৭১ লাখ টাকা। যা গত বছরের ৩০ জুলাই ছিল ৭৬ হাজার ৫৭৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ফলে প্রথম ১০ মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের নেয়া নিট ঋণের স্থিতি হয়েছে ২১ হাজার ৭৬৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
আর ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেয়া সরকারের ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৪ হাজার ১০৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। যা গত বছরের ৩০ জুলাই পর্যন্ত ছিল ৩১ হাজার ২৩১ কোটি টাকা।
ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের নিট ঋণের স্থিতি ঋণাত্মক (-) ১৭ হাজার ১২৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের নিট ঋণ নেয়ার পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৪০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে শেষ দুই মাসেই সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ করেছে ৬ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা।