DMCA.com Protection Status
title="৭

প্রায় তীরে মোদীর তরী :নিজের জোরেই গদিতে যাচ্ছে এনডিএ, বলছে সমীক্ষা

image_88562_0ঝড়ের পূর্বাভাস ছিলই। আজ তামাম বুথফেরত সমীক্ষাও দাবি করল, সেই ঝোড়ো হাওয়াতেই পাল তুলে ভোট বৈতরণী পার হয়ে যাবে বিজেপি। অর্থাৎ বাস্তব হতে চলেছে তাদের স্লোগান: এ বার, মোদী সরকার। উল্টো দিকে ডুবতে চলেছে কংগ্রেসের নাও।

লোকসভা ভোটের শেষ দফার ভোট শেষ হয় আজ। তার পরপরই এবিপি আনন্দ-এসি নিয়েলসেন বুথ-ফেরত সমীক্ষায় জানিয়ে দেয়, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে চলেছে এনডিএ। যার অর্থ কেন্দ্রে সরকার গড়তে কোনও নতুন শরিক খুঁজতে হবে না বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীকে।

ওই সমীক্ষা বলছে, এনডিএ পেতে পারে ২৮১টি আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ২৭২টি আসনের থেকে যা ৯টি বেশি। ১৫ বছর আগে ঠিক এ ভাবেই অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল সর্বভারতীয় স্তরের এই ডানপন্থী জোট। এনডিএ সে বার পেয়েছিল ২৯৮টি আসন। এবিপি আনন্দর সমীক্ষা যদি বাস্তবে ফলে যায়, তবে সেই রেকর্ড হয়তো ভাঙতে পারবেন না মোদী। কিন্তু এই প্রথম দু’শো আসনের গণ্ডি পার করতে পারে বিজেপি। যা সম্ভব হয়নি বাজপেয়ীর আমলেও।

737347_10203852971593838_6782295439054994853_oসমীক্ষা বলছে, তুলনায় কংগ্রেস পিছিয়ে। এবিপি আনন্দর মতে, এই প্রথম একশোর অনেক নীচে পৌঁছতে পারে তারা। এনডিএ-র এক-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ মাত্র ৯৭টি আসন পেতে পারে ইউপিএ। দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ঝড় তোলা আপ পেতে পারে ৪টি, তার মধ্যে দু’টি দিল্লিতেই।

শুধু এবিপি আনন্দ নয়, আজ প্রায় সব ক’টি সমীক্ষাই মোটামুটি এ রকমই মোদী-ঝড়ের ইঙ্গিত দিয়েছে। সম্প্রতি চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটে যে পেশাদার সংস্থা প্রকৃত ফলাফলের সঙ্গে তাদের সমীক্ষা প্রায় হুবহু মিলিয়ে দিতে পেরেছিল, সেই ‘চাণক্য’ দাবি করেছে, এনডিএ তো বটেই, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে চলেছে বিজেপি-ও। মোদীকে কান্ডারি করে বিজেপিই পেতে পারে ২৯১টি আসন। এনডিএ পৌঁছতে পারে ৩৪০-এ।


এবং সে ক্ষেত্রে জাতীয় স্তরে ফের অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বেন তথাকথিত তৃতীয় শক্তি, অর্থাৎ জয়ললিতা, মায়াবতী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুলায়ম সিংহ যাদব, নবীন পট্টনায়েকেরা। উল্টে সিবিআই তদন্ত-সহ বিভিন্ন দুর্নীতির মামলা নিয়ে এই সব আঞ্চলিক নেতৃত্বের সঙ্কট ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বই কমবে না। সর্বোপরি, সর্বভারতীয় রাজনীতিতে আরও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে কংগ্রেস। প্রশ্ন উঠতে পারে রাহুল গাঁধীর নেতৃত্ব নিয়েও।বুথ ফেরত সমীক্ষার এমন পূর্বাভাস যদি সঠিক ধরা হয়, তবে এর পিছনে কী কারণ থাকতে পারে? এনডিএ-র এখনকার জোট যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যায়, তা হলে তাদের নতুন সঙ্গী খোঁজার দরকার হবে না। ফলে তারা এমন একটি সরকার দিতে পারবে, যা স্থায়ী। কারণ, নতুন সঙ্গী জোটাতে গেলেই নতুন শর্ত ঘাড়ে চাপার আশঙ্কা থাকে। তাতে নীতিপঙ্গুত্বের সমূহ সম্ভাবনা। এর ধাক্কায় উন্নয়নের কাজে এগোনোও কঠিন হতে পারে। যা হয়েছিল ইউপিএ-র দ্বিতীয় জমানায়। এখন এনডিএ স্পষ্ট বহুমত পেয়ে গেলে সে সব বাধা থাকবে না। নীতিপঙ্গুত্ব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে দেশের অর্থনীতিও। হতে পারে, সে কথা মাথায় রেখেই স্থায়িত্ব এবং মজবুত নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষায় বিজেপি-কে দু’হাত তুলে সমর্থন জানিয়েছে মানুষ।

এমনকী, কংগ্রেসের ভাঙনও আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।

এটাও ঠিক যে অতীতে বুথফেরত সমীক্ষা বহু বার মেলেনি। বিশেষ করে গত দুই লোকসভা ভোটে বুথফেরত সমীক্ষার সঙ্গে প্রকৃত ফলাফলের আসমান-জমিন ফারাক ছিল। সমীক্ষায় বিজেপি-কে এগিয়ে রাখা হলেও আখেরে দুই লোকসভা ভোটেই কেন্দ্রে সরকার গড়ে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট। সেই প্রেক্ষাপটে এ বারের সমীক্ষাও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। তার উপরে এ বারের বিভিন্ন সমীক্ষায় সামগ্রিক ছবি প্রায় এক ধরনের হলেও রাজ্যওয়াড়ি ফলের ক্ষেত্রে আশ্চর্য কিছু মতভেদ রয়ে গিয়েছে।

যেমন, এবিপি আনন্দের সমীক্ষা জানাচ্ছে, তেলঙ্গানার রাশ থাকবে কংগ্রেসের হাতে। কিন্তু টাইমস নাও এবং সিএনএন-আইবিএনের মতে, কংগ্রেসের তুলনায় ভাল ফল করবে তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি। এবিপি আনন্দের মতে বিহারে ১০টি আসন পেতে পারে লালুপ্রসাদের রাষ্ট্রীয় জনতা দল। কিন্তু টাইমস নাও-এর দাবি, বিহারে একটিও আসন পাবেন না লালু। মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব, অসম, দিল্লি, কর্নাটক নিয়েও বিভিন্ন বুথফেরত সমীক্ষার হিসাবে ফারাক রয়েছে। আরও মজার, ক’দিন আগে যে মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে বিরোধীদের কার্যত উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি, সেখানে কংগ্রেসকে ভরপুর লড়াইয়ে রেখেছে টাইমস নাও।

তবে মোটামুটি ভাবে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে বিজেপি-র বিপুল সাফল্যের সম্ভাবনা নিয়ে সকলেই একমত। তা ছাড়া শেষ মুহূর্তে চন্দ্রবাবু নায়ডুর সঙ্গে বিজেপি-র জোট যে অন্ধ্রে তাদের জন্য সোনা ফলাতে চলেছে, সে বিষয়েও মতৈক্য রয়েছে। সামগ্রিক ভাবে এবিপি আনন্দের মতে, যে সব রাজ্যে সরাসরি কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াই হয়েছে বিজেপির, সেখানে মোদী-বাহিনীর ভাল ফলের আশা রয়েছে। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, গুজরাতে কংগ্রেস কার্যত ধরাশায়ী হবে, দাবি তাদের। কিন্তু তাদের এ-ও বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশ ও বিহার ছাড়া যেখানে যেখানে মূলত আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়েছে বিজেপি-কে, সেখানে মোদী-ম্যাজিক বিশেষ কাজ না-করারই সম্ভাবনা। যার প্রধান দুই উদাহরণ ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ। বুথফেরত সমীক্ষা বলছে, এই দুই রাজ্যে বিজেপি ভোট-শতাংশ বাড়াতে সফল হলেও আসন পাওয়ার সম্ভাবনা বিশেষ নেই।

এই সমীক্ষাকে কী ভাবে দেখছে রাজনৈতিক দলগুলি?

কংগ্রেস যে এই পূর্বাভাস মানতে যে রাজি হবে না, তা প্রত্যাশিতই ছিল। হয়েছেও তাই। হাইকম্যান্ডের নির্দেশে বুথফেরত সমীক্ষা নিয়ে কোনও বিতর্কে আজ অংশ নেয়নি কংগ্রেস। পরিবর্তে সাত নম্বর রেস কোর্স রোডে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে ডাকেন সনিয়া গাঁধী। পরে কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, বুথফেরত সমীক্ষা আগেও মানিনি, এ বারও মানছি না। উল্টে কংগ্রেসের অনেকেই মনে করছেন, সমীক্ষা যা-ই বলুক, সংখ্যাগরিষ্ঠতার ধারে-কাছে পৌঁছবে না বিজেপি। তাই বিকল্প ব্যবস্থার জন্য জয়ললিতা, মায়াবতী, মমতার মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলির সঙ্গে আলোচনাও শুরু করে দিয়েছেন কংগ্রেসের রাজনৈতিক ম্যানেজাররা। দলীয় সূত্রে এ-ও বলা হচ্ছে, প্রয়োজনে বিজেপি-কে ঠেকাতে কেন্দ্রে তৃতীয় মোর্চা বা সে ধরনের কোনও জোটকে সমর্থনে পিছপা হবে না কংগ্রেস।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, কংগ্রেস যেমন এখনও আশা নিয়ে রয়েছে, তেমনই উৎকণ্ঠায় রয়েছে বিজেপি। বুথফেরত সমীক্ষা আজ বিজেপির মনোবল বাড়িয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু ঘরোয়া আলোচনায় শীর্ষ নেতারাও স্বীকার করছেন, বুথফেরত সমীক্ষা কী ভাবে উল্টে যেতে পারে, সেই অভিজ্ঞতা তাঁদের রয়েছে। তাই, প্রচারে গিয়ে যে সব আঞ্চলিক দলের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন মোদী, এখন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন দলের নেতারা। এ ব্যাপারে কাল আরএসএস নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছেন মোদীও। আগামী ৭২ ঘণ্টা এই রাজনৈতিক দৌত্যেরই প্রবল সম্ভাবনা।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!