ইন্ডিয়ার লোকসভা নির্বাচন শেষ হলো মাত্র। দীর্ঘ ৩৬ দিনের এই নির্বাচনী প্রক্রিয়া ফলাফল ঘোষণা হবে ১৬ মে। নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক কেন, এরইমধে রাজনৈতিক নেতাদের গালিবাজি, হুমকি-ধামকি, কাদা ছোঁড়াছুঁড়িতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে দেশটির সাধারণ রাষ্ট্রজনরা। অবশ্য অনেকেই নেতাদের এমন গালির তুবড়ি ছোটানকে দেখছেন দেশটির গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার একমাত্র শর্ত হিসেবে। ইন্ডিয়ার রাজনৈতিক নেতারা নির্বাচনের মাঠে পরস্পরকে ঘায়েল করতে গালিকে বেছে নিলেও বলিউড ক্যাবিনেটে নেই কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ইন্ডিয়ার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস দেশটির শাসন কার্য পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দিয়েছে বলিউডের তারকাদের হাতে। কেমন সেই বলিউড ক্যাবিনেট, আর কারাই বা থাকছেন মন্ত্রীসভায়? হিন্দুস্তান টাইমসের বলিউড ক্যাবিনেট নিয়ে দৈনিক প্রথম বাংলাদেশের এই বিশেষ প্রতিবেদন।
অমিতাভ বচ্চন, প্রধানমন্ত্রী: বলিউডের বাদশা তিনি। সদা মিশুক ভারতের চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তি অমিতাভের প্রধানমন্ত্রীর পথে কোন বাধাই নেই। আবার সবাইকে একসাথে নিয়ে কিভাবে কাজ করতে হয় তা ইন্ডিয়ার রাজনীতিবিদদের ভাল করেই শিক্ষা দিতে পারবেন কুলি নম্বর ওয়ান অমিতাভ বচ্চন। চির যুবক অমিতাভকে ইন্ডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হলে, সমগ্র ইন্ডিয়াকে তিনি এক কাতারে দাঁড় করাতে পারবেন বলেই দাবি হিন্দুস্তান টাইমসের। এছাড়া তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞাও এই কাজে তাকে সফলতা এনে দেবে।
শাবানা আজমী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী: কিভাবে ঘর সামলাতে হয় তা নারীর চেয়ে ভালভাবে আর কে জানে। পুরুষ যতই চিৎকার করুক না কেন, সংসার সামলানর মত দক্ষতা তাদের নেই। তেমনি দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায়ও একজন নারী হতে পারেন পুরোপুরি সফল। আর এই কাজে সবচেয়ে যোগ্য অনিন্দ্য সুন্দরী শাবানা আজমী। রাজ্য সভার সদস্য হিসেবে এরই মধ্যে রাজনীতির ময়দানে আলো ছড়িয়েছে হাজারো ভক্তের হ্নদয়ে ঝড় তোলা শাবানা। মানবাধিকার ও সমাজকর্মী শাবানা আজমী এইডস, মৌলবাদীতা ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন রোধে কাজ করে যাচ্ছেন।
শাহরুখ খান, অর্থ মন্ত্রী: মন্দা আক্রান্ত ইন্ডিয়ার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দায়িত্ব নেওয়ার সবচেয়ে যোগ্য মানুষ শাহরুখ খান। বক্স অফিস হিট করা সব চলচ্চিত্র উপহার দেওয়া এই তারকা জানেন কিভাবে অর্থ উপার্জন করতে হয়। আইপিএলের দল কলকাতাকেও লাভজনক দলে পরিণত করেছেন তিনি। তাই ইন্ডিয়ার অর্থনীতি মডেল অর্থনীতিতে পরিণত করতে হিন্দুস্তান টাইমস আস্থা রেখেছে কিং খানের উপরে।
আমির খান, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়: ইন্ডিয়ার রাজনীতিবিদদের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা নেই আমির খানের। সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে তিনি কোন প্রার্থীকে ভোট দিবেন না বলে আগেই ঘোষণা করেছিলেন। সত্যমেভ জয়তে রিয়েলিটি শো দিয়ে সমাজকল্যাণ মূলক কাজে নিয়োজিত আমির খান পারেন, হাজারো জাতি ও গোষ্ঠী প্রথায় বিভক্ত ইন্ডিয়াকে একক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবে। সমগ্র ইন্ডিয়াবাসীকে একক দেশের রাষ্ট্রজনে পরিণত করতে। এছাড়া সত্য কথা বলার ক্ষেত্রে নির্ভীক সৈনিক আমির খান দেশ থেকে যাবতীয় অন্যায়-অনাচার দূর করতে পারবে বলেই মনে করছে পত্রিকাটি।
কঙ্গনা রাওয়াত, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী: ইন্ডিয়ার জনগণকে কি দেখান হবে আর কি দেখান হবে না, এটা নির্ধারণ করা একটু কঠিন। আর সেই দায়িত্ব কোন বয়োবৃদ্ধও দেওয়া যায় না। কারণ, বয়োবৃদ্ধরা আবার তরুণ সমাজের চাহিদা বোঝে না। ফলে এই মন্ত্রণালয়ের জন্য চাই একজন কম বয়স্ক মানুষ। আর সেক্ষেত্রে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি অবশ্যই কঙ্গনা রাওয়াত। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় নিয়ে তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, এমন মানুষ মনে হয় না সারা ইন্ডিয়া খুঁজে পাওয়া যাবে।
সালমান খান, যুব কল্যাণ মন্ত্রণালয়: ৪০ বছর পরে এসেও কিভাবে যুবা থাকতে হয়, তা শিখতে অবশ্যই সালমান খানের শরনাপন্ন হতে হবে। বডিগার্ড খ্যাত সালমান খান দেশটির তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া নিজের যুবা থাকার রহস্য দিয়ে যুবসমাজের অকাল বার্ধক্যরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে সাল্লু।
অজয় দেবগান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী: সমাজ ও দেশকে কিভাবে শত্রুর হাত থেকে মুক্ত রাখতে হয় তার সবচেয়ে ভাল জানার কথা অজয় দেবগানের। গঙ্গা জল, সিংগম চলচ্চিত্রের নায়ক অজয় দেশের ভিতরের ও বাইরের শত্রুদের দমন করবে শক্ত হাতে। তার অধীনে ইন্ডিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বের যেকোন দেশের তুলনায় ভাল হবে বলে মনে করে পত্রিকাটি। এছাড়া দেশের কাজে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে যুক্ত করায় অজয় দেবগানের জুড়ি নাই।
অক্ষয় কুমার, ক্রীড়া মন্ত্রী: ফিটনেসের কারণে ইন্ডিয়ার ক্রীড়া মন্ত্রী হওয়ার দৌঁড়ে একক প্রার্থী অক্ষয় কুমার। কারণ শেষ পর্যন্ত যেকোন ক্রীড়াই ফিটনেসের উপর নির্ভর করে। অক্ষয় ফিটনেস ধরে রাখতে সব সময়ই তরুণদের নানান পরামর্শ দিয়ে থাকে। বলি উডের চলচ্চিত্রে ফিটনেস ট্রেইনার হিসেবে স্বনামখ্যাত অক্ষয় ক্রীড়া মন্ত্রীর দায়িত্ব নিলে ইন্ডিয়ার খেলোয়াড়দের ফিটনেস অনেক বেড়ে যাবে। আর যে না জানে, ফিট খেলোয়াড় মানেই বিশ্ব জয়। এছাড়া অক্ষয় কুমার ক্রীড়া মন্ত্রীর দায়িত্ব নিলে ইন্ডিয়ার ক্রিকেটারদের মেদ পুরোপুরিই ঝরে যাবে।
ফারহান আক্তার, নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রণালয়: ইন্ডিয়া এখন নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে একজন পুরুষকে দেখতে প্রস্তুত। আর সেই ব্যক্তি যদি হন, অনাগত শিশু ও গর্ভবতীদের যত্নে বিশেষ পারদর্শী, তবে তো তারই এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়া উচিত। গায়ক-পরিচালক-প্রয়োজক-অভিনেতা ফারহান খান, সারা ইন্ডিয়া জুড়ে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলায় কাজ করছেন। এছাড়া হাস্যরসেও তিনি অপূর্ব। বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা ও সিনেমার অভিনয় দক্ষতা মিলিয়ে ফারহান খানই হবেন ইন্ডিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ও প্রভাবশালী মন্ত্রীদের একজন।
করণ জোহর, লোকসভা বিষয়কমন্ত্রী: ইন্ডিয়ার লোকসভা অধিবেশন মানেই ফাইল ছোড়াছুড়ি, গালি-গালাজ, মারামারি। আর এই সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করে, লোকসভার সদস্যদের কাছ থেকে কিভাবে কথা বের করে নিতে হবে সেটা ভালই জানা করণ জোহরের। এছাড়া কফি উইথ করণের উপস্থাপক এই প্রযোজক-পরিচালক খুবই ভাল আয়োজকও। ফলে লোকসভার পরিবেশ সুন্দর ও স্বাভাবিক রাখতে তিনিই যোগ্য ব্যক্তি। এছাড়া মাঝে মাঝে লোকসভার অধিবেশনের সময় পার্লামেন্ট সদস্যদের বিনোদনের জন্য হাসি, আড্ডা, গান ও নাচের ব্যবস্থা করতে চাইলে করণ জোহরই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি।