ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আরাকান আর্মির যুদ্ধের প্রভাবে থমথমে রাখাইন সীমান্ত। গত কয়েকদিন চলমান এই যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। এতে প্রাণহানি হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার বেলা পর্যন্ত রাখাইনের মংডুতে তুমুল সংঘর্ষে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তজুড়ে কেঁপে ওঠে। পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ কারণে মংডুতে রোহিঙ্গারা টিকতে পারছে না। তারা প্রাণে বাঁচতে পালানোর চেষ্টা করছে। অনেকেই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত-নাফনদে বিজিবি-কোস্ট গার্ড সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, আরাকান আর্মি রাখাইনের মংডু শহর নিয়ন্ত্রণে নিতে সামরিক বাহিনীর ওপর হামলা বাড়িয়েছে। দেশটির সামরিক বাহিনীও শহরটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাল্টা আকাশপথসহ ত্রিমুখী হামলা চালাচ্ছে। এ কারণে রাজ্যের মংডু শহরের সুদাপাড়া, হাদিবিল, নুরুল্লা পাড়া, হাইর পাড়া, মুন্নী পাড়া, সাইরা পাড়া, ফাতনজা, ফেরানপ্রু, সিকদার পাড়া, হাঁড়ি পাড়া, হেতিল্লা পাড়ার বাসিন্দারা গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকেই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসার জন্য জড়ো হচ্ছে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, রাখাইনে দুই পক্ষের যুদ্ধের জেরে মংডু ও বুথিডংয়ে ৭০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা আটকা পড়েছে। আবার কিছু রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপায়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এদিকে বুধবার ভোরে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের একটি দল অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। তবে সীমান্তরক্ষীরা তাদের প্রতিহত করেছে।
এ বিষয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (৮-এপিবিএন) অধিনায়ক অ্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ আমির জাফর বলেন, রোহিঙ্গারা যুদ্ধের ফলে সেখানে টিকতে না পেরে বিভিন্ন দিকে ছুটছে। তারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাও করছে। আমাদের বাহিনীর তৎপরতার কারণে রোহিঙ্গারা সেভাবে প্রবেশ করতে পারছে না। তিনি বলেন, আমাদের পরিষ্কার বার্তা হচ্ছে, নতুন করে আর কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হবে না।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, যুদ্ধের নামে রাখাইনে নাটক চলছে। রাখাইনে যেসব রোহিঙ্গা রয়েছে তাদের নিশ্চিহ্ন করতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্য নাটক চলছে। তিনি রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে সেফজোন গড়ে তুলে তাদের সেখানে বসবাসের উপযোগী করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ জানান।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকালে ৩ হাজার ৩৫৪ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। পরে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। এদের মধ্যে ৮৪৮ জন নারী, ৭৪৯ শিশু ও ১৭৫৭ জন পুরুষ।
জানতে চাইলে টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিজিবি সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সীমান্ত অনুপ্রবেশ ঠেকানার পাশাপাশি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত রয়েছেন।