নারায়ণগঞ্জে এখন মানুষের হাতে হাতে একটি চিঠি। বিক্রি হচ্ছে ফটোকপি। 'অতি জরুরি' উল্লেখ করা এই চিঠিটি প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের লেখা।
চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে মেয়র মর্যাদায় পৌরসভার প্রশাসক পদে বসাতে এলজিআরডি মন্ত্রীকে তিনি এ চিঠি দিয়েছিলেন।
২০০৯ সালের ৮ জুন লেখা এ চিঠির জোরে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের রেড ওয়ারেন্ট থেকে নূর হোসেনের নাম কাটা গিয়েছিল। চিঠিতে এইচ টি ইমাম নবগঠিত সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভায় নূর হোসেনকে প্রশাসক পদে নিয়োগ দিতে এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে 'বিশেষ অনুরোধ' জানান। চিঠির স্মারক নং : সম/উপদেষ্টা/০১/২০০৯-১৯।
এইচ টি ইমাম চিঠিতে নূর হোসেনকে তিন জায়গায় আওয়ামী লীগ নেতা লিখেছেন। একটি জায়গায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী নেতা হিসেবে উল্লেখ করেন। নূর হোসেন ওরফে হোসেন চেয়ারম্যান ২০০৯ সালের ২০ জুন দেশে ফেরেন।
ইন্টারপোলের ওয়েবপেইজে ২০১০ সালে বলা হয়, 'সশস্ত্র অপরাধ, হত্যা ও অঙ্গহানিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।' কিন্তু ২০১৪ সালে নূর হোসেন সম্পর্কে ইন্টারপোলের ওই ওয়েবপেইজে কোনো তথ্যই নেই। জানা যায়, এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে ওই একটিমাত্র চিঠি। জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাত বলেন, 'চিঠিটির কথা শুনে এলজিআরডি মন্ত্রী ও দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কাছে আপত্তি জানিয়েছিলাম।
' চিঠির মূল অংশে এইচ টি ইমাম উল্লেখ করেন, 'আবেদনকারী (নূর হোসেন) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী নেতা। সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তাকে অপসারণ করে। তিনি যাতে আইনের আশ্রয় নিতে না পারেন সে জন্য তাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহে ও বাসগৃহে হামলা চালানো হয় এবং তার পিতার মৃত্যুর পর জানাজায় অংশ পর্যন্ত নিতে দেওয়া হয়নি। তাই আওয়ামী লীগ নেতা জনাব মো. নূর হোসেনকে সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার পৌর-প্রশাসক হিসেবে নিয়োগের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।'
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে এইচ টি ইমামের প্যাডে লেখা চিঠিটির অনুলিপি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবকেও পাঠানো হয়। প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে গত ২৭ এপ্রিল অপহরণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
কয়েকদিন পর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দেশজুড়ে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করা এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় নূর হোসেন প্রধান আসামি। নারায়ণগঞ্জের অপরাধ সাম্রাজ্যের অন্যতম এই অধিপতি এখন পলাতক।