ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ভুয়া বা ফেক ফেসবুক প্রোফাইল থেকে গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে আওয়ামী লীগের পক্ষে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও বিরোধী দলের ফেসবুক পেজের ১৯৭টি পোস্টে প্রায় একই ধরনের ২১ হাজারের বেশি মন্তব্য (কমেন্টস) করা হয়েছে। ১৯৭টি ফেসবুক পোস্টের ওপর গবেষণা করে এই তথ্য পেয়েছে স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং অরাজনৈতিক অনলাইন ভেরিফিকেশন ও মিডিয়া গবেষণা প্লাটফর্ম ডিসমিসল্যাব।
ডিসমিসল্যাব জানিয়েছে, তারা গবেষণায় দেখেছে ১ হাজার ৩৬৯টি ফেসবুক প্রোফাইল পরিচালিত হয়েছে বট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। এসব ফেসবুক প্রোফাইলগুলো থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষে ১৯৭টি পোস্টে সমন্বিতভাবে ২১ হাজারের বেশি মন্তব্য করা হয়েছে। আবার এসব অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন পোস্টে একই মন্তব্য করেছে। একই মন্তব্য বিভিন্ন প্রোফাইল থেকে পোস্ট করা হয়েছে।
বট নেটওয়ার্ক বিশেষ সফটওয়্যারের (বট) মাধ্যমে কাজ করা হয়। মূলত একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা। বট নেটওয়ার্কের কার্যক্রম পুরোপুরি না হলেও অন্তত আংশিকভাবে কম্পিউটারভিত্তিক বা স্বয়ংক্রিয়। তারা একটি তালিকা থেকে নির্দিষ্ট ‘কি-ওয়ার্ড’ বা শব্দ ধরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পোস্ট বাছাই করে। আরেকটি তালিকা থেকে বেছে নিয়ে মন্তব্য পোস্ট করে। এই প্রক্রিয়ায় কোথায় কী মন্তব্য পোস্ট করা হচ্ছে, সেখানে মানুষের নজরদারি নেই বললেই চলে।
ডিসমিসল্যাবের গবেষণায় দেখা যায়, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগ দিয়ে বট নেটওয়ার্কটি সক্রিয় হয়। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বট নেটওয়ার্কটি ঘুরেফিরে ৪৭৪টি একই ধরনের রাজনৈতিক মন্তব্য করেছে।
ডিসমিসল্যাবের গবেষণায় আরও দেখা যায়, মন্তব্যগুলো নির্বাচনের আগে তৈরি হলেও বট নেটওয়ার্কটি নির্বাচনের পরেও একই মন্তব্য পোস্ট করে গেছে। বট নেটওয়ার্কটি লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে দেশের প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম ও তৎকালীন বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পেজগুলোকে।
ডিসমিসল্যাব বলছে, প্রোফাইল ‘লকড’ নেই, এমন ১ হাজার ১২৪টি অ্যাকাউন্টের ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেগুলো ‘বাংলার খবর’ ও ‘আওয়ামী লীগ মিডিয়া সেল’-কে অনুসরণ করে। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগ মিডিয়া সেল পেজটি আর পাওয়া যাচ্ছে না।
বটের বোকামি
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে বা জুন মাসেও বট প্রোফাইলগুলো থেকে ‘আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন’, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে’ জাতীয় শব্দ ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ, মন্তব্যগুলো নির্বাচনের আগে তৈরি করা। কিন্তু তা নির্বাচনের পরেও নির্বিচারে পোস্ট করা হয়েছে।