দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ ম্যাজিস্ট্রট রোকন-উদ-দৌলা, এক সময় তাঁর নাম শুনলেই অন্তর-আত্মা কেঁপে উঠতো খাদ্যে ভেজাল মেশান অসাধু ব্যবসায়ীদের। সবসময়ই তারা আতঙ্কে থাকতো- এই বুঝি তিনি এলেন আর ধরা পড়ে গেল সব। কিন্তু এখন? এখন বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভেজালে ছেয়ে গেছে সমগ্র দেশের খাদ্য পণ্য।
দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে দেওয়া একান্ত এক সাক্ষাৎকারে একসময়ের অসাধু ব্যবসায়ীদের ত্রাস, বর্তমানে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর পরিচালক (আইন) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং সাবেক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রোকন-উদ-দৌলা জানান, ভেজাল অভিযানে যুক্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যদি যথাযথভাবে নিজ দায়িত্ব পাল করেন তবে বাংলাদেশে ভেজাল পণ্যের প্রসার প্রতিরোধ করা কোনো ব্যাপারই না।
ভোক্তাদের অভিযোগ, ভেজাল দূর করার ক্ষেত্রে রোকন-উদ-দৌলার মতো ম্যাজিস্ট্রেটের এখন অভাব রয়েছে। ভেজাল পণ্য প্রসারের কারণ সম্পর্কে রোকন-উদ-দৌলা বলেন, বিক্রেতাদের অতিরিক্ত অর্থের প্রতি লালসা ও আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না হওয়ার কারণেই সম্প্রতি সময়ে খাদ্যদ্রব্য এবং জীবণরক্ষাকারী ওষুধ থেকে শুরু করে প্রসাধনীসহ বিভিন্ন পণ্যে মাত্রাতিরিক্ত হারে নানা রকম ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে। বাড়ছে ভেজাল পণ্য।
তবে ভেজাল পণ্যের প্রসার রোধ সরকারের একার পক্ষে সম্ভব হবে না। এ জন্য ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সব মহলকেই সচেতন হতে হবে। কারণ ভেজাল পণ্য কিনে ক্রেতা শুধু একা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বিক্রেতারাও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এখন ফলের বাজারে যে সব ফল বিক্রি হয় সেগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রঙিন ও আকর্ষণীয়। যেমন তরমুজ কাটার পর এ ফলটির অভ্যন্তরে এখন মাত্রাতিরিক্ত লাল দেখায়। অথচ ১০ বছর আগেও তরমুজ কাটার পর এত অস্বাভাবিক রঙিন দেখাত না। এর কারণ এখন তরমুজে কাপড়ে ব্যবহৃত ক্ষতিকর রং ব্যবহার করা হচ্ছে।
আর ক্রেতারা তরমুজের লাল টকটকে রং দেখে আকৃষ্ট হচ্ছেন। কিন্তু তাদের বুঝতে হবে আকর্ষণীয় ও রঙিন দেখালেই যে পণ্যটি ভালো হবে এমনটি নয়। তিনি আরও বলেন, শৈশবে দেখেছি যে, কাঁচামাছ সন্ধ্যার পর পচে যেত। সে সময় সন্ধ্যার পর মাছের বাজারে কাঁচামাছ বিক্রি হতে দেখেনি। কিন্তু এখন আর বাজারে পচা মাছ দেখা যায় না। কারণ মাছে ক্ষতিকর ফরমালিন ব্যবহার করা হচ্ছে। আর ক্রেতারা তাজা মাছ ভেবে বাজারে গিয়ে ফরমালিনযুক্ত বিষাক্ত মাছ কিনছেন। আমি মনে করি ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের হাত থেকে রক্ষা পেতে ক্রেতাদের সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
রোকন-উদ-দৌলা আরও বলেন, রাসায়নিকমুক্ত সবজির দুই-একটিতে পোকা থাকা স্বাভাবিক। যেমন বেগুন কাটলে তার ভিতর আগে পোকা পাওয়া যেত। কিন্তু এখন ক্রেতারা ভালো জিনিস ক্রয়ের লোভে যাচাই-বাছাই করে দেখতে সুন্দর, আকর্ষণীয় ও পোকামুক্ত খাদ্যদ্রব্য কিনছেন। কিন্তু এ পণ্যগুলো যে বিষাক্ত তা ক্রেতাদের অজানাই থেকে যাচ্ছে। ভেজাল প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে কিনা তা জানতে চাইলে রোকন-উদ-দৌলা বলেন, আমাদের ভেজাল প্রতিরোধকারী সংস্থাগুলোর নিজ নিজ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিরা যদি নিজ দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে সততার সঙ্গে পালন করেন তবে খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য দ্রব্যে ভেজাল রোধ করা সম্ভব।
তবে এ ম্যাজিস্ট্রেট মনে করেন না যে, ভেজাল প্রতিরোধকারী সংস্থাগুলোর ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করার জন্য লোকবলের অভাব রয়েছে। যে লোকবল রয়েছে অভিযান পরিচালনা করার জন্য তাই যথেষ্ট। তার মতে, যার যার জায়গা থেকে ভেজাল অভিযানে যুক্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যদি যথাযথভাবে নিজ দায়িত্ব পালন করেন তবে বাংলাদেশের ভেজাল প্রতিরোধ করা কোনো ব্যাপার না।
ভেজাল খাদ্যদ্রব্য ও পণ্য ব্যবহারে জনস্বাস্থ্য কতটা হুমকিতে আছে তা জানতে চাইলে রোকন-উদ-দৌলা বলেন, প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে। মহামারী রোগ, মাতৃমৃত্যুহার ও নবজাতকের মৃত্যুহার কমছে। কিন্তু নানা রকম জটিল ও অজানা রোগবালাই বেড়েছে। ৬০-এর দশকে পুরো দেশে যেখানে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল হাতেগোনা সেখানে এখন নানারকম ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।
এ ছাড়া কিডনি, হার্ট ও ডায়াবেটিসসহ অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে।