দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ঈদের আগে সরকার বিরোধী আন্দোলনে যাচ্ছে না। তারা তৃনমূল পর্যায়ে সংগঠন গোছাতে চায়। আর নব নিযুক্ত মোদী সরকার ‘কংগ্রেস প্রিয়’ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি কী নীতি গ্রহণ করে, তা বুঝে কর্মসূচি দিতে চায় তারা।
বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা এখন অনেকটাই ‘রিল্যাক্সড'৷ তাঁরা কেন্দ্রের ইঙ্গিতেই এই অবস্থান নিয়েছেন৷ ঢাকায় তৃণমূল পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, আপাতত তাঁদের কোনো আন্দোলনের প্রস্তুতি নেই৷ বরং তাঁরা কে কোন পদ পাবেন – তাই নিয়ে তদবির এবং লবিং করে সময় কাটাচ্ছেন।
তাঁরা জানান, জাতীয় কাউন্সিলের আগেই ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড, এমনকি পাড়া মহল্লার কমিটিও চূড়ান্ত করা হবে৷ কমিটি চূড়ান্ত করার পরই হয়ত নতুন কোনো আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হবে৷
তাই ঈদের আগে স্বাভাবিক কারণেই কোনো আন্দোলনের প্রস্তুতি নেই তাঁদের৷ এঁদেরই কয়েকজন জানান, ভারতে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি ক্ষমতায় আসায় বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন৷ তাঁদের সঙ্গে দেখা-সক্ষাতে তাঁরা উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করেছেন৷
তাঁরা মনে করেন, কংগ্রেস সরকারের ‘গুড বুক'-এ থাকলেও বিজেপি সরকারের ‘গুড বুক'-এ থাকার সম্ভাবনা কম বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের৷ তাই তাঁরা মোদী সরকারের নীতি ও পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণের পরই নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি দেবেন৷ নির্বাচনে বিজেপির প্রতিশ্রুতি ছিল – মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের অর্থনীতি নতুন গতি পাবে, গুজরাটের আদলে তিনি ভারতকে বদলে দেবেন৷ অবশ্য সমালোচকরা বলছেন, ‘কলঙ্কিত ভাবমূর্তি’ ঢাকতে এসব মোদীর ফাঁপা বুলি৷ তাঁর স্বৈরাচারী মেজাজ, শিক্ষা ও অর্থনীতির জ্ঞান নিয়েও ঠাট্টা-বিদ্রুপ হয়েছে৷
বলা হচ্ছে, ভোটাররা টানা তৃতীয়বার কংগ্রেসকে চায়নি বলেই বিজেপি জয় পেয়েছে৷ যদিও শেষ হাসি দেখা যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর মুখেই৷ ঢাকার বাইরে তৃণমূলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেও একই চিত্র পাওয়া গেছে৷ তাঁরাও জানান যে, তাঁরা নতুন কমিটি গঠন এবং দল গোছানোর কাজেই এখন ব্যস্ত৷ আপাতত তাঁদের কঠিন কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি বা নির্দেশনা নেই৷
তাই তাঁরা এ সব নিয়ে এখন তেমন ভাবছেনও না৷ কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে যে, পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি৷ ঈদ আর রোজার কারণে আরো আড়াই থেকে তিন মাস আন্দোলন জমানো যাবে না বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। এদিকে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সঠিক তথ্যই দিয়েছেন৷
কারণ বর্তমান সরকার যেভাবে নিপীড়কে পরিণত হয়েছে, তাতে অবস্থান শক্ত না করে সরকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়া বাস্তবসম্মত নয়৷ সে কারণেই অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার সংগঠনকে শক্তিশালী করার কাজ চলছে৷ বিশেষ করে তৃণমূলের নেতৃত্বকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে৷ এ অবস্থায় তাই সহসাই সরকার পরতনের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হচ্ছে না। তিনি বলেন, ভারতে মোদীর নেতৃত্বে বিজেপির জয়ে আমরা খুশি হলেও,তার চেয়েও বেশী খুশী হয়েছি আমরা কংগ্রেসের পতনে৷
কারণ তারা বাংলাদেশের একটি অগণতান্ত্রিক একতরফা নির্বাচনে নগ্নভাবে সমর্থণ দিয়েছে৷ তারা কূটনৈতিক শিষ্টাচারও রক্ষা করেনি৷ তাই এখন মোদী সরকার বাংলাদেশের ‘অবৈধ' সরকারের ক্ষেত্রে কী মনোভাব দেখায়, তা পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি। আহমেদ আজম খানের কথায়, ভারতের নতুন গণতান্ত্রিক সরকার, বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক সরকার না নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার দেখতে চায় – সেটাই এখন জানতে চায় বিএনপি৷ তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সরকার পতনের কঠোর আন্দোলনে যেতে সময় নিচ্ছে তাঁর দল।