দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ কোণঠাসা অবস্থান থেকে সরতে পারছে না বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নানা চেষ্টা আর কৌশল অবলম্বন করেও সুবিধা করতে পারছে না তারা।
সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিরাট অংশের বিজয়ে কিছুটা চাঙ্গাভাব সৃষ্টি হলেও তার ফল ভোগ করতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
দল ও নেতাকর্মীদের অস্তিত্ব রক্ষা নিয়ে এখন হুমকির মুখে পড়েছে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা ও আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসায় বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতেও কিছুটা আশার সঞ্চার হলেও দেশে প্রশাসনের কঠোর নীতির মুখে দলটির টিকে থাকা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
এ জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলায় খুব সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলে জামায়াত সূত্র জানিয়েছে। এজন্য কেন্দ্রীয় নেতারা তৎপরতা চালাচ্ছেন। হতাশ নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতেই গোপনে নিয়মিত বৈঠক করছেন তারা এবং মাঝে মধ্যে দলীয় ও জাতীয় ইস্যুতে কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে।
এরই অংশ হিসেবে গুম-খুনের প্রতিবাদে আজ সারা দেশে দলটি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বলে ওই সূত্র স্বীকার করেছে। সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতার ও বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই মূলত কোণঠাসা হয়ে পড়ে জামায়াত।
নেতাদের রক্ষায় রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে দেনদরবার, আইনি লড়াইসহ নানা চেষ্টা করেও কোনো সুবিধা করতে পারেনি দলটি। শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় এবং গত বছর ডিসেম্বরে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর চরম হতাশ হয়ে পড়েন দলটির নেতাকর্মীরা। অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরেও একই ভাবে হতাশা কাজ করছে।
১৯ দলীয় জোটের মাধ্যমে আন্দোলন করে মহাজোট সরকারের পতন ঘটানোর স্বপ্ন দেখলেও তা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর তাই পুরনো সহিংস মনোভাব বাদ দিয়ে নতুন কৌশলে পরিস্থিতি উত্তরণের সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। সে অনুযায়ী তারা বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখা এবং ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালায়। কিন্তু এসব উদ্যোগের কোনো ইতিবাচক ফল পায়নি দলটি।
গত বছরের চেয়ে নতুন সরকারের পাঁচ মাসে গ্রেফতার-নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নিষিদ্ধের আবেদন এবং মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় বহাল ও কার্যকরের আশঙ্কায় সারা দেশে নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিকে সংগঠনের জন্য অত্যন্ত জটিল হিসেবে আখ্যায়িত করে শিবিরের সাবেক প্রচার সম্পাদক ও বর্তমানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় রুকন আতাউর রহমান সরকার বলেন, পরিস্থিতি বুঝে চলাফেরার জন্য নেতাকর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে। গেল পাঁচ বছরের মতো বর্তমান পরিস্থিতিও মোকাবিলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে তিনি জানান। জোটের মাধ্যমে শিগগিরই নতুন কর্মসূচি আসতে পারে বলেও তিনি জানান।
ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল জব্বার ও সেক্রেটারি আতিকুর সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, অবৈধ সরকারের অনুকম্পা পেতে পুলিশ ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের মতো নরঘাতকে পরিণত হয়েছে। পুলিশের লোমহর্ষক অত্যাচারে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। অবিলম্বে এসব বন্ধ না হলে ছাত্রসমাজকে নিয়ে শিবির কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেবে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি সারা দেশে গ্রেফতার-নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় জামায়াত-শিবিরের প্রায় সব নেতাকর্মী আত্মগোপনে আছেন। তারা ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নিজ কর্মস্থলেও যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে; সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালাচ্ছেন অত্যন্ত গোপনে। ভয় ও আতঙ্কে সাধারণ অনেক নেতাকর্মী এখন নিজেদের রক্ষা করতে প্রশাসন ও সরকারদলীয়দের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
এ অবস্থায় মাওলানা সাঈদীসহ শীর্ষ নেতাদের সাজা কার্যকর হলেও বড় ধরনের কোনো আন্দোলনে নামার সম্ভাবনা নেই বলে সংশ্লিষ্টরা আভাস দিয়েছেন। এক্ষেত্রে নাশকতা এড়িয়ে সাধারণ মানুষকে রাজপথে নামানোর কৌশল নেয়া হবে বলে দলীয় সূত্র জানায়। তবে বর্তমান সরকার পতন ও মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি জোটের সঙ্গে জামায়াত-শিবির আন্দোলনে নামার অপেক্ষায় রয়েছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।