দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ ক্ষমতায় আরোহণের এক মাস না হতেই অবৈধ বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে অভিযানের হুমিক দিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিরণ রিজিজু। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আগে ভারতের সেনাপ্রধান ও নুতন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বাংলাদেশীদের নিয়ে একই ধরণের বক্তব্য দিয়েছিলেন।
আর ভারতের নেতাদের এমন বক্তব্যের বিপরীতে বাংলাদেশে থাকা অবৈধ ভারতীয়দের বিষয়েও বাংলাদেশের ভাবা উচিত বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রায় ১২ লাখ ভারতীয় অবৈধভাবে বসবাস করছে।যাদের পাঠানো বিপুল বৈদেশিক মূদ্রার (২০,০০০ কোটি রুপী) কারনে বাংলাদেশ ভারতে রেমিটেন্স প্রেরনকারী ৫ম সর্বোচ্চ দেশ হয়েছে সম্প্রতি। শুধু তাই নয় এরা বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে বলেই বিভিন্ন সংস্থা অভিযোগ করে আসছে।
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী নরেন্দ্র মোদি অবৈধ বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে বিষেদগার করেন। নরেন্দ্র মোদির আগে দেশটির সেনাপ্রধানও ভারতের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশীরা ক্ষতিকর দাবি করে বক্তব্য দেন। দেশটির নেতাদের মতে, ভারতে প্রায় ২ কোটি বাংলাদেশী অবৈধভাবে বসবাস করে।
ভারত দেশটির নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশীদের দায়ী করলেও আসল চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাংলাদেশীরা ভারতের নিরাপত্তার জন্য মোটেও হুমকি নয় বরং বাংলাদেশে থাকা অবৈধ ভারতীয়রাই বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলার জন্য ক্ষতিকর।
বিভিন্ন সূত্রের মতে, পাসপোর্ট ও ভোটার আইডি কার্ড জাল করে ১২ লাখেরও বেশি ভারতীয় রাষ্ট্রজন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। যারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা অবনতি রাখছে পরোক্ষ ভুমিকা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংঘটিত নাশকতার জন্য এই ভারতীয়দের দায়ী করে করেছিলেন বিএনপির সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ১৯ দলের নেতারা। একইভাবে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পেছনে এই বিদেশী রাষ্ট্রজনরা গুপ্তঘাতকের ভূমিকা রাখে বলে জোর সন্দেহ পর্যবেক্ষকদের।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে থাকা ভারতীয়রা নিজেদের জীবন নির্বাহ করলেও কোনভাবেই এইদেশের অগ্রগতির প্রতি সহিষ্ণু নয়। ফলে, সুযোগ পেলেই সামান্য সুবিধার বিনিময়ে তারা বাংলাদেশ-বিরোধী নানান অন্তর্ঘাতমূলক কাজে জড়িয়ে যায় বলেই বিশ্লেষকরা জানান।
জানা যায়, বৈধ এবং অবৈধভাবে বসবাসকারী ভরতীয় রাষ্ট্রজনদের বেশির ভাগই গার্মেন্টস, ক্লিনিক, সিমেন্ট এবং ইপিজেড ব্যবসায় জড়িত।
এছাড়া বাংলাদেশের প্রায় শতাধিক গার্মেন্টেস মালিক ভারতীয় নাগরিক। আর তাদের মালিকানায় রয়েছে প্রায় সহস্রাধিক ফ্ল্যাটবাড়ি। এই সকল ফ্লাট ও বাসা মুদ্রা জাল ও পাচার চক্রের আড্ডা বলেও অভিযোগ আছে। একইভাবে বিদেশীদের বাসা ও ফ্লাটকে বাংলাদেশ বিরোধী শক্তিদের উত্থান ও মাদক পাচার কেন্দ্র বলেও মনে করা হয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, ভারত যদি দেশটিতে থাকা বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নামে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে, তবে বাংলাদেশের উচিত হবে অবৈধ ভারতীয়দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। ইতিমধ্যে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম অবৈধ ভারতীয়দের বের করে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
ফলে বাংলাদেশের নিজেদের স্বার্থ বিবেচনা করে অবৈধ ভারতীয়দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলেই মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।