বিভিন্ন বার, সমুদ্র সৈকত আর ব্যস্ত সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে স্থাপিত বড় পর্দার টেলিভিশনের সবার দৃৃষ্টি। বারগুলোতে ক্রেতাদের পরিবেশনায় ব্যস্ত পরিচারিকারা। রাস্তার দুইপাশে মেসি, নেইমার, রোনাল্ডোদের চিত্রকর্ম। থেমে গেছে অফিসের ব্যস্ত, নেই ক্রেতা-বিক্রেতার দরদাম, সবার দৃষ্টি অ্যারেনা করিন্থিয়ানসের দিকে। যেখানে কল্পিত ফুটবলে কিক করে বিশ্বকাপের উদ্বোধন করবেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের দিলমা রৌসেফ। ব্রাজিল বিশ্বকাপ উদ্বোধনের সময় এমন দৃশ্য ফুটে উঠবে ব্রাজিলের প্রতিটি শহরে ও নগরে।
গত কয়েক মাস আগেও যেখানে ব্রাজিলীয়রা বিশ্বকাপের বিরোধিতায় মুখর ছিল, তারাই এখন অংশ নিচ্ছে বিশ্বকাপ আয়োজনে। সকল দ্বিধা-দ্বন্দ্ব পিছনে ফেলে ব্রাজিলের মানুষ এখন চেয়ে আছে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আর ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের দিকে। ব্রাজিলের সাধারণ মানুষের রক্তের টানে সাড়া দিয়ে মেতেছে ফুটবল উন্মাদনায়।
ব্রাজিল বনাম ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচের দুই ঘন্টা আগে ব্রাজিলবাসীদের সকল ব্যস্ততা থেমে যাবে। বন্ধ হয়ে যাবে সকল শপিংমল, অফিস, কল-কারখানা। চলবে না কোন যানবাহনও। ব্রাজিলবাসীকে বিশ্বকাপ খেলা দেখার বিশেষ সুযোগ করে দিতে এই ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। আর সরকারের এই উদ্যোগে ভালই সাড়া দিয়েছে মানুষ। এরইমধ্যে অ্যারেনা করিন্থিয়ানসের বাইরে বসান বিশাল পর্দার সামনে ভিড় জমাতে শুরু করেছে দর্শকরা। ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সমুদ্র সৈকতগুলোতে শুরু হয়ে গেছে বীচ ফুটবল। সাধারণ মানুষের মধ্যে ফুটবল জ্বরের উত্তাপ তুলে ধরতে উঠেপড়ে লেগেছে দেশটির সংবাদমাধ্যমও। ব্রাজিলের সকল পত্রিকার প্রধান সংবাদে পরিণত হয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবল। বারগুলোতে গ্লাস থেকে উপচে পড়ছে পানীয়।
ব্রাজিল বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সারা বিশ্বকে দেখাতে প্রস্তুত বিপননকারীরাও। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দিয়েই শুরু হবে সেই যাত্রা। বিশ্বকাপের অংশ হতে ব্যস্ত সারা বিশ্বের মানুষ। ধারণা করা হচ্ছে, পৃথিবীর ৭ বিলিয়ন মানুষ এবারের বিশ্বকাপের কোন একটি ম্যাচ অবশ্যই দেখবে। ফিফাও ব্যস্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সার্বিক দিক দেখভাল করার জন্য। এরই মধ্যে জেনিফার লোপেজ আর আসাফের বিশ্বকাপে উপস্থিত না হওয়ার সংবাদ ঝড় তুলেছে সংবাদ মাধ্যমে। তবে সকল সমালোচনা পিছনে ফেলে সারা বিশ্বই সাম্বার তালে নেচে উঠবে বলেই মনে করছে ফিফা।
এদিকে বিশ্বকাপ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ফেসবুক-টুইটারও। বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে নিজেদের লভ্যাংশ ও গ্রাহক বাড়ানর দিকে নজর আছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আশা করছে সারা বিশ্বের প্রায় ৫০০ মিলিয়ন গ্রাহক ফেসবুক ব্যবহার করে উপভোগ করবে এবারের বিশ্বকাপ। একইভাবে টুইটারে খেলা উপভোগ করবে ২৫৫ মিলিয়ন মানুষ।
মাঠের বাইরের সমালোচনা বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষের দৃষ্টি এখন অ্যারেনা করিন্থিয়ানসের উদ্বোধনীর দিকে। যেখানে সাম্বার তালে নেচে উঠবে সারা বিশ্ব। ব্রাজিলবাসীর উদ্বোধনী আনন্দ ধরে রাখতে মাঠেও ভাল করতে হবে ব্রাজিলকে। আর সেই কাজে নেইমার-ফ্রেড-অস্কাররা কতটুকু সফল হবেন, তা দেখার জন্য বাংলাদেশের সময় মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা ছাড়া আর কোন উপায়ই নেই।