আজ অসীম মহিমান্বিত রাত পবিত্র লাইলাতুর বরাত। সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে ভাগ্য নির্ধারণের রাত এটি। তাৎপর্যপূর্ণ এ রাতে ধর্মপ্রাণ মোসলমানদের প্রতি আল্লাহর অশেষ রহমত ও দয়া বর্ষিত হয়। এ রাতে ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করা যায়। সারাদেশে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে রাতটি।
লাইলাতুল বরাত আরবি ভাষা। লাইল অর্থ রাত বা রজনী, আর বারাত অর্থ মুক্তি বা নিষ্কৃতি। অর্থাৎ লাইলাতুল বরাত মানে মুক্তির রাত।
লাইলাতুল বরাতকে ফারসিতে বলা হয় শবে বরাত। বাংলাদেশে ফারসি ভাষার প্রভাব ও প্রচলনের ফলে ‘শবে বরাত’ কথাটি বেশি প্রচলিত। শব অর্থ রজনী বা রাত। আর বরাত শব্দের অর্থ ভাগ্য বা সৌভাগ্য। এ অর্থে শবে বরাতকে ভাগ্য রজনী বলা হয়।
লাইলাতুল বারাতে আল্লাহর বিশেষ রহমত বর্ষিত হতে থাকে তার বান্দাদের ওপর। এ রাতে মানুষের ভালোমন্দ কাজের হিসাব-নিকাশ আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। সারা বছরের জন্য মানবজাতির যাবতীয় ফয়সালা, হায়াৎ-মউত, রিজিক, দৌলত, আমল ইত্যাদি নির্ধারণ করা হয়।
বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর নসিহত অনুযায়ী এ পবিত্র রাতে সাধারণত ইবাদত-বন্দেগির মাঝে নিমগ্ন থাকাই প্রতিটি মুসলমানের প্রধানতম কাজ।
লাইলাতুল বারাত উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশের মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররম, রাজধানীর গাউসুল আজম মসজিদ, গুলশান আজাদ মসজিদ, বনানী মসজিদ, বাইতুশ শরফ মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে রাতব্যাপী প্রার্থনা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমের খতিব প্রফেসর মাওলানা মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বাংলামেইলকে বলেন, ‘লাইলাতুল বারাত মানবজাতির গুণাহ মাফের জন্য সুবর্ণ সুযোগ স্বরূপ। পবিত্র এ রজনী মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য একটি মহান উপহার। এরাতে বান্দা তার ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে মশগুল থাকে। যে বান্দা তার গুণাহ মাফ না নিতে পারবে তার মতো দুর্ভাগা আর এই দুনিয়ায় নেই। সুতরাং সকল মুসলিম বান্দা-বান্দীর উচিৎ লাইলাতুল বারাতের যথাযথ মর্যাদা দেয়া।’
তিনি জানান, লাইলাতুল বারাত উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমে রাতব্যাপী নামায, কুরআন-হাদিস পাঠ ও পর্যালোচনা এবং যিকির আজকার অনুষ্ঠিত হবে। এসময় দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিমসহ সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ কামনা করে বিশেষভাবে দোয়া করা হবে।
লাইলাতুল বারাত উপলক্ষে রাজধানীতে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটতে পারে সেজন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ধর্মীয় ভাবগার্ম্ভীযপূর্ণ এরাতের পবিত্রতা রক্ষায় সব ধরনের আতশবাজি ও পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি।
বৃহস্পতিবার ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘শবে বরাত উপলক্ষে রাজধানীতে বাড়তি নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হবে। এ রাতে সকল প্রকার আতশবাজি ও পটকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শবে বরাতের পবিত্রতা রক্ষায় আপনাদের সচেতন হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। মুসল্লিগণের ইবাদত-বন্দেগিতে বিঘ্ন ঘটায় এমন কোনো কাজ আপনারা করবেন না বলে আমি আশা করি।