রাজধানীর মিরপুরে কালশীর সংঘর্ষের নিহতদের স্বজনদের টাকা দিতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন শাসক দলের এমপি ইলিয়াস মোল্লা।
স্বজনদের হাতে টাকা গুঁজে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। গুঁজে দেওয়া টাকা এমপির মুখের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে নিহতের স্বজনরা এমপিকে বলেন, ১০ হত্যাকাণ্ডে আপনি জড়িত। টাকা দিয়ে খুনের ঘটনা থেকে বাঁচা যাবে না। আপনার ফাঁসি চাই।'
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে টাকা দিতে গেলেই এমন পরিস্থিতির শিকার হন এমপি ইলিয়াস মোল্লা। একপর্যায়ে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দ্রুত লোকজন নিয়ে গাড়িতে চড়ে সটকে পড়েন এমপি।
গত শনিবার কালশি ক্যাম্পে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভকালে বিহারিরা গতকাল রোববার স্থানীয় এমপি ইলিয়াস মোল্লার ফাঁসির দাবি জানিয়ে কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। সন্ধ্যার পর ১০ লাশের ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ কালসিতে নেওয়া হয়। পুরো এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় এসময়।
জানা গেছে, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এমপি ইলিয়াস মোল্লা ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে যান নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে। এ সময় স্বজনরা ইলিয়াস মোল্লাকে দেখেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এ সময় এমপি পরিবারের সবাইকে হারানো ইয়াসিনকে দুই লাখ টাকা দেবেন বলে মর্গে ঘোষণা দেন এবং নগদ হিসেবে তিনি ইয়াসিনের দিকে এক লাখ টাকা হাত বাড়িয়ে দেন।
এতে ইয়াসিন এবং উপস্থিত বিহারিরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা এমপিকে দোষারোপ করেন এবং সামনাসামনি তারা এমপির ফাঁসি দাবি করেন। এমপি ইলিয়াস এ সময় ইয়াসিনের কাছে টাকা গুঁজে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে চান। কিন্তু নিহতদের স্বজনরা ওই টাকা এমপিকে লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারেন।
টাকাগুলো এমপির মুখে লেগে নিচে পড়ে যায়। এ সময় দ্রুত সেখান চলে যান এমপি। পেছনে বিহারিরা তার ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। উপস্থিত সাংবাদিকদের এ সময় ইলিয়াস মোল্লা জানান, মর্গে ময়নাতদন্ত দেরি হওয়ার খবরে আমি এসেছিলাম চিকিৎসককে বলতে। লাশগুলো যেন তাড়াতাড়ি ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে দেন।
এদিকে সকাল থেকেই বিহারিরা মাথায় কালো ও সাদা কাপড় বেঁধে পল্লবীর কালশির নতুন সড়কে মিছিল শুরু করেন। বেলা পৌনে ১টা থেকে মিছিলটি তীব্র আকার ধারণ করে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে বিপুল পরিমাণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এদিকে বিহারি ক্যাম্পে ১০ জনকে হত্যার ঘটনায় পল্লবী থানায় ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পল্লবী থানার এসআই মনিরা জানান, মিরপুরের কালশির বিহারি ক্যাম্পে অগি্নসংযোগ ও সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জনের হত্যার জন্য পুলিশ বাদী হয়ে একটি, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় একটি, বাকি চারটি স্থানীয়রা করেছেন। তিনি আরও জানান, স্থানীয়দের দায়েরকৃত মামলা চারটি হলো- মামলা নং ২৭ থেকে যথাক্রমে ৩০ এবং পুলিশের পক্ষ থেকে দায়েরকৃত মামলা দুটি হলো ৩১ ও ৩২।
এদিকে অগ্নিদ্বগ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তের স্বার্থে আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডি। বেলা পৌনে ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত চলে তদন্তকাজের জন্য প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ। সিআইডির এই তদন্ত দলের নেতৃত্বে ছিলেন সিআইডির ইন্সপেক্টর প্রশান্ত কুমার দেবনাথ। এদিকে কালশির ঘটনায় পুলিশের চার সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তারা কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্পে অগি্নসংযোগের ঘটনায় হতাহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
মিরপুর জোনের উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, ঘটনা তদন্তে পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (অপরাধ) মীর রেজাউল আলমের নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই কমিটি দুপুরে বিহারি ক্যাম্প পরিদর্শন করেছে। উল্লেখ্য, মিরপুর পল্লবী থানাধীন কালশি রোডের কুর্মিটোলা এলাকায় বিহারি ক্যাম্পে পবিত্র শবেবরাতের রাতে আতশবাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে শনিবার ভোরে স্থানীয়, বিহারি ও পুলিশের সংঘর্ষে ৯ জন আগুনে দগ্ধ ও একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মোট ১০ জন নিহত হন।