দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, তার এবারের যুক্তরাষ্ট্র সফরে এই প্রথম কোনো মার্কিনি বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন করেননি।
বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি ওয়াশিংটন সফরে মার্কিন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সরকারি সফর শেষে বস্টনের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দেন তিনি।
বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক তার যুক্তরাষ্ট্র সফর, বাংলাদেশে আগাম নির্বাচনে বর্হিবিশ্বের চাপ এবং জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার বিষয়ে কথা বলেন। তোফায়েল আহমেদ দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, আগামী ৫ বছর পরই বাংলদেশে আরেকটি নির্বাচন হবে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই আসে না। বাংলাদেশে আগাম নির্বাচনের জন্য বর্হিবিশ্বের কোনো চাপ নেই।
তিনি বলেন, নির্বাচনের পরে দেশে এমন একটি কথা উঠেছিল। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা এবং সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক ও ম্যাসাচুসেটসের প্রায় ডজন খানেক কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের মুখে এ বিষয়ে কোনো কথাই শুনিনি।
তারা এমন কোনো কিছু ভাবছেন বলেও ধারণা করছি না। তোফায়েল বলেন, এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র এসে দেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হইনি। তারা কেউ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি, বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়েও কোনো কথা বলেননি। দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা বিশওয়ালের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ উঠলে তোফায়েল জানান, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আপনাদের মনে কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপি কিছুতেই নির্বাচনে আসতে চায়নি। তারা থাইল্যান্ডের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছিল।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন হওয়ায় আজ বাংলাদেশের অবস্থা থাইল্যান্ডের মতো হয়নি। তোফায়েল বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে। যার জন্য রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো সুযোগ দেখছেন না বলে উল্লেখ করে তোফায়েল আহমেদ আরো বলেন, এ সরকার ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।
বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার বিষয়ে কতোটুকু সম্ভাবনা রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে জিএসপি সুবিধা বহাল নেই। তারাও স্বীকার করেছেন, অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এটা বিবেচনায় নিয়ে আমি মনে করি কংগ্রেস যদি জিএসপি কর্মসূচি নবায়ন করে, তাহলে জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে কোনো বাধার সৃষ্টি হবে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরো যোগ করেন, আমি তাদের কথার জবাব দিয়েছি। আমি এখানে না এলে জানতাম না এসব অভিযোগের কথা। হার্ভার্ড বিশ্বাবদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাড়ে ৩ হাজার তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে। সেখানে দু একটি ছোট খাটো গোলযোগ হতে পারে। কিন্তু শ্রমিক নির্যাতন, শ্রমিক হত্যার অভিযোগের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই- সে কথাই আমি তুলে ধরেছি। এটাও বলেছি, ১৯১১ সালে নিউইয়র্কের একটি কারখানাতে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। তারপর ২৬ বছর লেগেছে তাদের একটি শ্রম আইন করতে।
আর রানা প্লাজা ধসের পর মাত্র দু’মাসেই বাংলাদেশে শ্রম অইন সংশোধন হয়েছে। শ্রমিকদের সহায়তায় শ্রমিকবান্ধব আইন করেছি। তোফায়েল আহমেদ বলেন, ওয়াশিংটন সফরে এসে যাদের সঙ্গে আলাপ করেছি, তাদের সবাই বলেছেন, রিমার্কেবল প্রগ্রেস হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করে তারা বলেছেন, বাংলাদেশ ‘মিরাকল’ ঘটিয়েছে তৈরি পোশাক খাতে।
নিশা বিশওয়াল দেশাইয়ের সঙ্গে আর কি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এ প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, নিশা দেশাই, প্রেসিডেন্টের প্রিন্সিপ্রাল অ্যাডভাইজারসহ সবার কাছেই বলেছি, বিশ্বের অনেক দেশই ডিউটি ফ্রি, কোটা ফ্রি পণ্য প্রবেশাধিকার দিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র দিচ্ছে না। অথচ স্বাধীনতার পর শূন্য হাতে শুরু করে আজ বিশ্বে বাংলাদেশ একটি মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
৬২টি দেশে ৩৪৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য ব্যবসা থেকে আজ বাংলাদেশ ২১২টি দেশে মোট ৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ৮৮ হাজার পণ্য রফতানি করে।