DMCA.com Protection Status
title="৭

প্রবল বর্ষনে চট্টগ্রাম নগরবাসী পানিবন্দি

1_80172মৌসুমের প্রথম ভারি বর্ষণে পানির নিচে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম শহর। কোথাও গলা সমান পানি, আবার কোথাও বুক সমান পানিতে বন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। টানা বর্ষণের ফলে বিপদসীমার ওপরে বইছে কর্ণফুলী, হালদা ও শঙ্খ নদীর পানি। পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত ঘরবাড়ি। সড়ক ডুবে, কালভার্ট ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাও। খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, রেয়াজ উদ্দিন বাজারে পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে কোটি কোটি টাকার পণ্য। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকায় চট্টগ্রামে এসব অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ভয় আর আতঙ্ক বিরাজ করছে।

 

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার পর্যন্ত টানা ৩২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সমুদ্রে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখান হয়েছে। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হওয়ার কারণে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। এদিকে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। একইসঙ্গে যমুনার তীরবর্তী পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। টানা বর্ষণে ফরিদপুর ও পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। রাজধানীতে বৃষ্টির কারণে গরমের তীব্রতা কিছুটা কমেছে। নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্যুরো ও সংবাদদাতাদের খবর_

 

চট্টগ্রাম : রাতভর বর্ষণের ফলে চট্টগ্রাম মহানগরী পানিতে ডুবে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। নগরীর অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। গ্যাস লাইনে পানি ঢোকায় গ্যাস সরবরাহেও বিঘ্ন ঘটছে। ওয়াসার পাইপলাইনে ঢুকে পড়েছে নোংরা পানি। সবমিলিয়ে দুর্যোগ আর দুর্ভোগের নগরীতে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ২৫০ জনবল দিয়ে নগরীর জলাবদ্ধতা মোকাবিলা করছে। প্রবল বর্ষণের কারণে চট্টগ্রামের ডিসি হিলের সীমানা দেয়ালের কিছু অংশ ভেঙে পড়লে তিনজন আহত হয়। চট্টগ্রামের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোর বিভিন্ন স্থানে ধস নামে। বর্ষণ অব্যাহত থাকলে প্রশাসন পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছে। পাহাড়ি লোকজনকে নিরাপদ জায়গায় চলে যাওয়ার জন্য দফায় দফায় চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে প্রবল বর্ষণে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হালিশহর এলাকায়। জোয়ার আর বৃষ্টির পানি এক হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক স্থানে পানির উচ্চতা ৫ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যায়। সাগরের জোয়ারের পানি খাল দিয়ে ঢুকে প্লাবিত করে হালিশহর ও আগ্রবাদের বড় একটি অংশ। পানির কারণে বিশাল এলাকাজুড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অতি বর্ষণের ফলে নগরীর কোথাও বুক আবার কোথাও কোমর সমান পানিতে ডুবে আছে এসব এলাকা। বিশেষ করে নগরীর বাকলিয়া, আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী, কালামিয়া বাজার, মুরাদপুর, শুলকবহর, রামপুরা, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, বহদ্দারহাট, নাসিরাবাদ, জালালাবাদ, কাপাসগোলা, ডিসি রোড, পাহাড়তলী, বন্দরসহ প্রায় পুরো নগরীই পানিতে ভাসছে। এসব এলাকার অধিকাংশ বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়েছে বৃষ্টির পানি। কোমর সমান পানি ঢুকে পড়েছে নগরীর বিভিন্ন মার্কেটেও। নগরীর খাতুনগঞ্জ, টেরিবাজার, আছাদগঞ্জ, চাক্তাই, রেয়াজুদ্দিন বাজার, ষোলশহর শপিং কমপ্লেঙ্সহ বেশকিছু মার্কেটের দোকান ও গুদাম সয়লাব হয়ে গেছে বৃষ্টির পানিতে। টানা বর্ষণের কারণে রক্ষা করা যাচ্ছে না মালামাল। এ অবস্থায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। দেশের অন্যতম প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। পানিতে ভিজে গেছে এসব ব্যবসা কেন্দ্রের অনেক দোকান ও গুদামের মালামাল। নগরীর অনেক নিচু এলাকার সড়কের পাশে অবস্থিত দোকানপাটেও পানি ঢুকে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির পানির পাশাপাশি চাক্তাই খাল থেকে উপচে পড়া জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে পাইকারি ব্যবসা কেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে।

 

ঢাকা : আজ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীতে ভ্যাপসা গরম কমেছে।

 

শুক্রবার দুপুরের দিকে সূর্যের দেখা মিললেও তাতে ছিল না তেমন তেজ। সারাটা দিন ছিল মেঘলা। কয়েকদিনের ভ্যাপসা গরমে রাজধানীবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণে গরম কিছুটা কমেছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। দুই থেকে তিন দিন টানা বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

রাজধানীতে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রবল বর্ষণ হয়। এতে রাজধানীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয় এবং সড়কগুলোতে জলজটের সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির কারণে অফিস ফেরত লোকজনকে পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। এ সময় যানবাহন কমে যায়। ফলে রিকশাচালকরা দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ ভাড়া আদায় করে যাত্রীদের কাছ থেকে।

 

আবহাওয়া অধিদফতর তাদের পূর্বাভাসে জানিয়েছে, মৌসুমি লঘুচাপটি উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবলভাবে সক্রিয় রয়েছে।

 

রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে।

 

সিরাজগঞ্জ : প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। সেইসঙ্গে যমুনা নদীর তীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। এ ভাঙনে বহু ঘরবাড়ি, জায়গাজমি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙনের কারণে অনেক পরিবার এখন অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন ধরে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানিবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাহুকা, পাচঠাকুড়ী, বালিঘুঘরী, শিমলা, ইটালি পূর্বপাড়া, কাজীপুর উপজেলার মেঘাই, শুভগাছা, মাইজবাড়ী, খাসরাজবাড়ী, নাটুয়ারপাড়া, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ, মনসুরনগর, চৌহালী উপজেলার মিছরিগাঁতি, খাসধলাই, জোতপাড়া, ঘোড়জান, খাস কাউলিয়া, শৈলজানা, মিটুয়ানি, বাগুটিয়া, হাটাইল, এনায়েতপুর উপজেলার দক্ষিণ বা ঐখোলা, বেতিল, শাহজাদপুর উপজেলার ডায়া, কৌজুরী, সোনাতনীসহ যমুনা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। এসব ভাঙন স্থানে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ মিটার এলাকাসহ ঘড়বাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

 

ফরিদপুর : তিন দিনের টানা বর্ষণে ফরিদপুর শহরের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েকশ' পরিবার। আষাঢ়ের শুরুতেই এ টানা বৃষ্টিতে ফরিদপুর পৌর এলাকার গোয়ালচামট, মোল্লাবাড়ি সড়ক, ওয়্যারলেসপাড়া, এক নম্বর সড়ক, টেপাখোল, আলীপুর, লক্ষ্মীপুর, খাবাসপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

 

পাবনা : টানা বৃষ্টিতে শহরের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে শহরবাসী। ভোর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর সমান পানিতে ডুবে গেছে। সারা দিন বৃষ্টির কারণে রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের চলাচল কমে গেছে। বিভিন্ন দোকানপাট, বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে পানি ঢুকে পড়েছে। নষ্ট হচ্ছে মালামাল।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!