দেশের অন্যতম প্রাচীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২৩ জুন সোমবার। এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এরমধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে তোরণ তৈরি করা হবে। এছাড়াও থাকবে নানা ধরণের আলোকসজ্জা, ঢাকঢোল, বাঁশি, করতালসহ বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র।
এছাড়া ব্যানার, ফ্যাস্টুন, প্ল্যাকার্ডে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরা হবে। ইতোমধ্যে এসব ব্যানার, ফ্যাস্টুন, প্ল্যাকার্ড তৈরি জন্য অর্ডারও দেয়া হয়েছে। রাজধানী সাজানোর জন্য এসব ব্যানার, ফ্যাস্টুন, প্ল্যাকার্ড তৈরির দায়িত্ব পড়েছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ওপর। এছাড়াও মূল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়, গণভবনসহ এর আশপাশের এলাকাগুলো সাজ সজ্জার দায়িত্ব পড়েছে।
দলের ৬৫ বছরের ইতিহাস নিয়ে স্মরণিকা প্রকাশ, দল ও সরকারের বিভিন্ন সাফল্য প্রচার, ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। অন্যদিকে সারা দেশে একইভাবে দলের এই ৬৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিভাগ, জেলা, উপজেলাগুলোতেও এইভাবে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, তোরণ তৈরি করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিন পালন করার আহ্বান জানিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরনো ঢাকার স্বামীবাগে কেএম দাস লেনের ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে এই সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ সময় সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শামসুল হক। কারাবন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দলের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
বাঙালির অধিকার আদায়ের ব্রত নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এ দলটি শুরুতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৫৫ সালে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে নতুন নামকরণ হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। স্বাধীনতার পর ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীকালে দেশের ১৯৫২, ৬২, ৬৬, ৬৯, ৭০, ৭১, ৮৯, ৮০, ৯০-এর প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ দলটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির আদর্শ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুহ-উল-আলম লেনিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ৬৫ বছরের ইতিহাস ইতিহাস নিয়ে স্মরণিকা প্রকাশ, দল ও সরকারের বিভিন্ন সাফল্য প্রচার, ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। এছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে। আর রাজধানী ঢাকা শহরে তোরণ করার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগকে বলা হয়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, পোস্টার ছাপানোর জন্য সিডি মহানগরকে দেয়া হয়েছে। আলোকসজ্জার জন্যও তাদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতকে জানান দেয়ার কোনো পরিকল্পনা এই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে নেই। কারণ তাদের আবার কি জানান দেবো। তারাতো কোনো রাজনৈতিক দলই নয়।’
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী দল। যে দলের বয়স ৬৫ বছর। তাই এই দল সম্পর্কে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশের প্রতিটি মানুষ জানেন আওয়ামী লীগ দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে কী অবদান রেখেছে। এদেশের প্রতিটি আন্দোলনে দলটি ভুমিকা রয়েছে। তার পরেও দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক উদ্দীপনা নিয়ে পালন করা হবে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে দল ও সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। সারা রাজধানীতে আলোকসজ্জা করা হবে।’
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীন দল। আর তাই দলটি ৬৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপেলক্ষে আমার রাজধানীর বিভিন্ন থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে নির্দেশ দিয়েছি। ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ও তোরণ করার জন্য। এছাড়াও রাজধানীর ঐতিহ্যবাহি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে আমার বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বিকেল ৩টায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামের পথ আরো সুগম হবে। বিগত দিনেও বিএনপি-জামায়াত কিছু করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না।’
এদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে রয়েছে ২৩ জুন সূর্যোদয়ের সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি, সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, পায়রা উন্মুক্ত ও বেলুন উড়ানো। বিকেল সাড়ে ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনের পাদদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত গণর্যালি।
এছাড়াও ২৮ জুন বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র আলোচনা সভা। এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।