দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী, অর্থাৎ সশস্ত্রবাহিনীর আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানামুখী স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। কিছু পরিকল্পনা এরইমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিছু ২০১৫ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে। আর কিছু দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়ন হতে ২০২০ সাল নাগাদ সময় লাগতে পারে। সংসদ কার্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গতকাল রবিবার সংসদে টেবিলে উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান।
মন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, 'ফোর্সেস গোল-২০৩০' অনুযায়ী ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে সেনাবাহিনীর জন্য একটি এরিয়া সদর দপ্তর, একটি আর্টিলারি ব্রিগেড, একটি ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি, একটি ওয়ার্কশপ সেকশন, ইএমই এবং একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়ন গঠনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগামী ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সেনাবাহিনীতে নতুন ৩৬টি ছোট-বড় ইউনিট গঠন করা হবে। নৌবাহিনীতে সাবমেরিন সংযোজনের প্রক্রিয়াসহ নানামুখী পরিকল্পনা চলছে। আর 'কে-৮ ডব্লিউ বেসিক জেট' ট্রেনার বিমান চলতি বছরের ডিসেম্বরে এবং রাশিয়া থেকে কেনা 'ইয়াক-১৩০' কমব্যাট ট্রেনার বিমান আগামী ২০১৬ সালের জুন নাগাদ বিমান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বেগম পিনু খানের (মহিলা আসন-২৩) এক প্রশ্নের জবাবে সংসদ কার্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সংসদকে জানান, বাংলাদেশের জলসীমার নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের প্রথম বছরেই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।
এই সমুদ্র এলাকায় বহিঃশত্রুর মোকাবেলা ছাড়াও জলদস্যুতা, মাদক-অস্ত্র-মানব চোরাচালান প্রতিরোধ, সামুদ্রিক দূষণরোধ এবং মত্স্য খনিজ সম্পদের সুরক্ষা ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে একটি শক্তিশালী নৌশক্তি গড়ে তোলার কার্যক্রম ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে ভবিষ্যতে পর্যায়ক্রমে ত্রিমাত্রিক যুদ্ধ ক্ষমতাসম্পন্ন
হেলিকপ্টারবাহী মিসাইল ফ্রিগেট, দ্বিমাত্রিক যুদ্ধ ক্ষমতাসম্পন্ন করভেট, ক্ষেপণাস্ত্রবাহী লার্জ প্যাট্রোল ক্রাফ্ট, অল্প গভীরতায় চলাচলযোগ্য দ্রুতগামী প্যাট্রোল ক্রাফট, যুদ্ধকালীন মাইন ওয়ারফেয়ার-এর জন্য মাইন কাউন্টার মেজর ভেস্ল যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সাহায্যকারী ভেস্ল, যেমন- ল্যান্ডিং ক্রাফট, সাপোর্ট শিপ, টাগ, সার্ভে ও রিসার্চ ভেস্ল ইত্যাদি সংযোজন করা হবে।
পাশাপাশি নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আধুনিক গান, মিসাইল, টর্পেডো, মাইনস, এসএএম বাটারি ইত্যাদি ছাড়াও সার্বভৌম সমুদ্র এলাকা (টেরিটোরিয়াল ওয়াটার্স) ও একান্ত অর্থনৈতিক এলাকায় (ইইজেড) সার্বক্ষণিক উপস্থিতি ও টহলসহ যুদ্ধকালীন ব্যবহারের জন্য আরও মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ারক্রাফ্ট এবং মেরিটাইম হেলিকপ্টার অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তাছাড়া বঙ্গোপসাগরে 'ডিটারেন্স' বৃদ্ধির জন্য নৌবাহিনীতে সাবমেরিন সংযোজনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
বেগম ফজিলাতুন নেছা বাপ্পির (মহিলা আসন-৩০) এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আশরাফ জানান, 'ফোর্সেস গোল ২০৩০' এর আওতায় ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সেনাবাহিনীর জন্য একটি এরিয়া সদর দপ্তর, একটি আর্টিলারি ব্রিগেড, একটি ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি, একটি ওয়ার্কশপ সেকশন, ইএমই এবং একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়ন গঠনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একইভাবে আগামী ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬টি করে সর্বমোট ৩৬টি ছোট-বড় ইউনিট গঠন করা হবে।
মন্ত্রী জানান, 'ফোর্সেস্ গোল ২০৩০' এর আওতায় সেনাবাহিনীর জন্য ২০১৩ সালে ১৭ পদাতিক ডিভিশন নামে একটি নতুন পদাতিক ডিভিশন, একটি পদাতিক ব্রিগেড এবং দুটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। এই গোলের আওতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি কর্তৃক সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনে বিদ্যমান সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন, সংযোজন, প্রাধিকৃত জনবল সমন্বয় এবং আইসিটিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আধুনিকায়নসহ পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত প্রস্তাবনা প্রস্তুত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
নৌবাহিনীর উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ ও ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা সম্পর্কে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সংসদকে জানান, ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী গঠনের অংশ হিসেবে চীন থেকে রিফারবিশ্ড সাবমেরিন কেনার চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। যা আগামী ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করা যায়। পাশাপাশি চীনে করভেট এবং স্থানীয় প্রযুক্তিতে দেশীয় শিপইয়ার্ডে এলসিটি, এলসিইউ ও ফ্লিট ট্যাংকার নির্মাণাধীন রয়েছে। এছাড়া লার্জ প্যাট্রোল ক্রাফ্ট, বিশেষায়িত টাগ এবং কোস্টাল সার্ভে ক্রাফট দেশীয় শিপইয়ার্ডে নির্মাণের
বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজসমূহের যুদ্ধ সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শত্রুর জাহাজ, বিমান এবং সাবমেরিনের উপস্থিতি শনাক্তকরণের লক্ষ্যে আধুনিক সারভেইল্যান্স সিস্টেম সংযোজন করা হয়েছে। একইসঙ্গে শত্রুর জাহাজ, বিমান এবং সাবমেরিন ধ্বংস করার লক্ষ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মিসাইল, কামান, টর্পেডো এবং রকেট ডেপথ চার্জ ইত্যাদি সংযোজন করা হয়েছে।
বিমানবাহিনীর উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ ও ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা সম্পর্কে সৈয়দ আশরাফ সংসদকে জানান, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান চীনের 'মেসার্স ক্যাটিক' -এর সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্র অনুযায়ী 'কে-৮ ডব্লিউ বেসিক জেট' ট্রেনার বিমান চলতি বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে রাশিয়া সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির মাধ্যমে কেনা 'ইয়াক-১৩০' কমব্যাট ট্রেনার বিমান আগামী ২০১৫ সাল থেকে ২০১৬ সালের জুন নাগাদ বিমান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাশিয়া থেকে কেনা 'এমআই-১৭১' এসএইচ হেলিকপ্টার আগামী ২০১৫ সালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য 'মেরিটাইম সার্চ এ্যান্ড রিসার্চ হেলিকপ্টার' এর কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। 'ট্রান্সপোর্ট ট্রেনার এয়ারক্রাফ্ট' কেনার কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে। এছাড়া 'এমআই-১৭/এমআই-১৭১' বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে বহুল ব্যবহূত হেলিকপ্টার। এই হেলিকপ্টার পাইলটদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে হেলিকপ্টার সিমুলেটর কেনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
খুলনা-৪ আসনের এসএম মোস্তফা রশিদীর এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সংসদকে জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ১২টি ক্যাডেট কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি পুরুষ শিক্ষার্থী ও ৩টি মহিলা শিক্ষার্থীদের জন্য। দক্ষিণাঞ্চলের গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, খুলনা জেলায় গার্লস ক্যাডেট কলেজ স্থাপনের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে।