DMCA.com Protection Status
title="৭

দলের অবস্থান নিয়ে জাপায় বিরোধঃ জিয়াউদ্দিন বাবলু- জি.এম.কাদের প্রকাশ্যে বিতণ্ডা

05_81188জাতীয় পার্টি সরকারে ও বিরোধী দলে থাকা নিয়ে ভেতরে ভেতরে অন্তর্দ্বন্দ্বের কথা বরাবরই অস্বীকার করলেও এবার তা নিয়ে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়ান জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এরশাদের ভাই জিএম কাদের ও মহাসচিব জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু। সরকার ও বিরোধী দলের অনৈতিক অবস্থান নিয়ে জিএম কাদেরের দেয়া বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে এরশাদের সামনেই মঞ্চ ত্যাগ করলেন বাবলু। পরে পার্টির চেয়রম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামনেই বাগবিতাণ্ডা এবং একপর্যায়ে একে অন্যের দিকে বেশ কয়েকবার তেড়ে যান।

 

এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বুধবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয় মৎস্যজীবী পার্টির আলোচনা সভা শেষে ইনস্টিটিউশনে সভাপতির কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অবশ্য নিজেদের মধ্যে এ মতবিরোধের কথা স্বীকারও করেছেন পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ।

 

ঘটনাস্থলে থাকা এক নেতা জানান, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু সরকারের সমালোচনা করে দেয়া জিএম কাদেরের বক্তব্য শুনে ক্ষোভে এরশাদের সামনেই সভামঞ্চ ত্যাগ করেন। পরে এরশাদ সভা শেষ না করেই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিউশনের সভাপতির কক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় তিনি জিএম কাদের ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে ডেকে পাঠান। কক্ষে আগে প্রবেশ করেন জিএম কাদের, পরে আসেন বাবলু। জিএম কাদেরকে দেখেই বাবলু বলেন, তুমি তো আমার কর্মচারী ছিলে। তুমি এত বড় বড় কথা বল কেন? এ কথা শুনেই ক্ষেপে যান কাদের। তিনি জবাবে বলেন, হোয়াট আর ইউ টকিং। আপনার তো সাহস কম নয়। এরশাদ ধমক দিয়ে দুজনকেই থামিয়ে দেন। এ সময় উপস্থিত থাকা এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমি উপস্থিত ছিলাম ঠিক আছে, কিন্তু আমাকে পেঁচাবেন না। আমি দুই নেতাকে থামাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা থামতেই চান না। বলেন, আমার কী করার আছে?

 

এ ব্যাপরে জানতে চাইলে জিএম কাদের প্রথম  বাংলাদেশকে বলেন, বক্তব্য দিয়েছি। তাতে যদি কেউ রাগ করে চলে যায়, সেটা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। এরশাদের সামনে জিয়া উদ্দিন বাবলু তেড়ে গেছেন কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। এ বিষয়ে জিয়া উদ্দিন বাবলুর কাছে জানতে চাইলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে জানান।

 

এর আগে বুধবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জাতীয় পার্টির অঙ্গ সংগঠন জাতীয় মৎস্যজীবী পার্টির প্রতিনিধি সম্মেলন শুরু হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এরশাদের উপস্থিতির পাশাপাশি বিশেষ অথিতির আসনে ছিলেন ছোট ভাই জিএম কাদের। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেয়ার জন্য নাম ঘোষণা করা হয় জিএম কাদেরের। কিন্তু বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন জিএম কাদের। এরশাদ তাকে বারবার অনুরোধ করার পরও প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। দর্শক গ্যালারিতে উপস্থিত নেতাকর্মীরাও জিএম কাদেরের বক্তব্য শোনার জন্য সেস্নাগান দিতে থাকেন। এভাবে ৫ মিনিট অনুরোধ করার পরে বক্তব্য দিতে সম্মত হন জিএম কাদের। সরকারের সমালোচনা করে জিএম কাদের বলেন, কী প্রক্রিয়ায় এ সরকার ক্ষমতায় আছে, নির্বাচন হয়েছে- এটা সবারই জানা আছে। সরকারের আইনি ভিত্তি দুর্বল। আওয়ামী লীগ জনগণের আস্থায় আছে বলে আমি মনে করি না। নিজেদের নৈতিক অবস্থান যে দুর্বল, এটা সরকারও জানে। তাই তারা অস্বস্তিতে আছে। আর এ অবস্থার কারণে জনগণও অস্বস্তিতে। তাছাড়া বিএনপি ও আঠারো দল এখন কোণঠাসা। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার মতো কোনো শক্তি নেই। এজন্য সরকারও বিরোধী শক্তির ওপর দমন-নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। এ অস্থীতিশীল পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে না পারলে দেশে অসাংবিধানিক শক্তি ও জাঙ্গিবাদের উত্থান হবে বলেও মন্তব্য করেন মহাজোট সরকারের সাবেক এ মন্ত্রী।

 

বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়ে আপত্তি করে জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল হিসেবে গেজেট প্রকাশের পর এরশাদ সাহেব সম্মত হয়েছেন এ অবস্থা মেনে নিতে। একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে থাকা অসাংবিধানিক। এটা অবাস্তব। কারণ এক খেলোয়াড়ের দুই দলের হয়ে খেলার সুযোগ নেই। তবে আমি কাউকে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করতে বলছি না। আমি জানি, আমার এ কথাগুলো অনেকেরই ভালো লাগবে না। তাই কথা বলতে চাইনি।

 

জিএম কাদেরের এসব বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হন মহাসচিব জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু। তিনি এরশাদের সামনে মঞ্চে দাঁড়িয়ে যান। এরশাদ তাকে বারবার বসার অনুরোধ করলেও মঞ্চ ত্যাগ করেন বাবলু। এর পর প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন এরশাদ। তিনি বলেন, আজকে এখানে মৎস্যজীবীদের নিয়ে বক্তব্য দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা রাজনৈতিক পর্যায়ে চলে গেছে। আমাদের মধ্যে মতবিরোধ আছে, সেটা আমি মেনে নিয়েছি। এখন আমরা বিরোধী দল। এ অবস্থানে থেকে নিজেদের পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আমি আমার স্ত্রীকে (রওশন) বলেছি, দলকে এগিয়ে নিতে সত্যিকার বিরোধী দলের ভূমিকায় আমাদের অবতীর্ণ হতে হবে। এরশাদ বলেন, আর ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। শুধু একটা কথা বলতে চাই, বিএনপি দিশেহারা। তাদের অবস্থানে গিয়ে আমাদের ক্ষমতায় যেতে হবে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!