দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ রানা প্লাজা ধ্বসের পর পশ্চিমা পোশাক ক্রেতা-প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিক অধিকার সংগঠনগুলোর নানান শর্ত আর অভিরুচির জোয়াল টেনে অসহায় হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকরা।
শ্রমিক অধিকার রক্ষার নামে ক্রেতা-প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিক অধিকার সংগঠনগুলোর নানান শর্ত ও অব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে পোশাক শিল্প মালিকরা লাখো ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হলেও এক্ষেত্রে নূন্যতম ভূমিকা নাই সরকারের। এর বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার থেকে বাণিজ্য সুবিধা আদায়ের নামে মাসের পর মাস ধরে বৃথা চেষ্টা করে আসছে সরকার।
রানা প্লাজা ধ্বসের পর বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকারখানায় কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নামে স্বাক্ষরিত হয় ‘বাংলাদেশ একর্ড’ নামের একটি প্রকল্প। পশ্চিমা পোশাক ক্রেতা-প্রতিষ্ঠান ও দেশী-বিদেশী শ্রমিক অধিকার সংগঠন এই প্রকল্পের অংশীদার হয়। প্রকল্পের আওতায় নিয়মিত বাংলাদেশের শিল্পকারখানায় কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক চাপের কারণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকরাও বাংলাদেশ একর্ড নামের প্রকল্পটির সাথে সহযোগিতা করতে বাধ্য হয়। কিন্তু এই সমস্ত প্রক্রিয়ায় কোন স্তরেই বাংলাদেশ সরকার পোশাক শিল্প-মালিকদের পাশে দাঁড়ায়নি।এমনকি, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী এই শিল্পখাত নিয়ে এই প্রকল্পের বিষয়ে কোন ধরণের অভিমত কিংবা নিয়ন্ত্রণও সরকার নিজের হাতে রাখেনি।
ফলস্বরূপ, বাংলাদেশ একর্ড নামের একটি প্রকল্পটির অব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে রক্তক্ষরণের শিকার হচ্ছে পোশাক শিল্পখাত।
বাংলাদেশ একর্ড প্রকল্পের আওতায় শিল্পকারখানায় কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা যাচাই-বাছাইয়ের নামে অব্যবস্থাপনা ও ব্যর্থতার সর্বশেষ উদাহরণ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রয়টার্স।
প্রতিবেদন অনুসারে, সম্প্রতি বাংলাদেশ একর্ড প্রকল্পের পর্যবেক্ষকরা ‘সনিয়া এন্ড সোয়েটার্স লিমিটেডের’ কারখানা পরিদর্শনে আসে। প্রায় তিনটি ফুটবল মাঠের সমান কারখানাটি পরিদর্শন করতে মাত্র ত্রিশ মিনিটের মতো সময় নেন। এরপরই তারা কারখানাটি আংশিকভাবে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু দুই সপ্তাহ পরে তারা পূর্ব সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন। কোন রকম সংস্কার ছাড়াই, পুরো কারখানাটি আবারও চালানর অনুমতি দিয়ে দেন।
একইভাবে, বাংলাদেশের অনেক পোশাক শিল্পকারখানা আংশিক কিংবা পূর্ণাঙ্গ বন্ধের সিদ্ধান্ত দিয়ে দিচ্ছে ‘বাংলাদেশ একর্ড’ প্রকল্পের নীতি-নির্ধারকরা। অথচ, এ বিষয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোন পর্যায়েই সরকারের কোন সংশ্লিষ্টতা নাই। ফলে, যাচ্ছে-তাইভাবে ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প।
‘বাংলাদেশ একর্ড’ প্রকল্পের আওতায় ২,১০০ পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা যাচাই-বাছাইয়ের আওতায় আনা হয়। প্রকল্প পরিচালক, মূলত পশ্চিমারা নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে যে কোন মুহূর্তে যে কোন সংস্কারের জন্য কারখানা সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক বন্ধের নির্দেশ দিতে পারে।
প্রকল্পটি শুরু হওয়ার পরপরই দেখা দেয় নতুন সমস্যা। সংস্কারের জন্য পোশাক কারখানা বন্ধ থাকলে স্বাভাবিক পোশাক উৎপাদন ব্যহত হয়। অন্যদিকে, শ্রমিকদেরকে মজুরি দেওয়ার প্রশ্নটি থেকেই যায়। তাই, বাংলাদেশের শিল্প-মালিকরা তাদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করে। কিন্তু কারখানা বন্ধের নির্দেশ দিলেও ক্ষতিপূরণের প্রশ্নটি এড়িয়ে চলছে ‘বাংলাদেশ একর্ড’ প্রকল্পের নীতি-নির্ধারকরা। এর পাশাপাশি পশ্চিমা পোশাক ক্রেতা-প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে বলে দিয়েছে যে, তারা কারখানা মালিকদের কোন রকমের ক্ষতিপূরণ দিতে পারবে না। পশ্চিমাদের এই রকম অব্যবস্থাপনা ও দায় এড়ানর বাস্তবতায় কোন ভূমিকাই রাখছে না সরকার।
বাংলাদেশ সরকার ‘বাংলাদেশ একর্ড’ প্রকল্পটি গৃহীত হওয়ার সময় কোন রকমের নীতিগত ভূমিকা রাখেনি। এমনকি, এই দুঃসময়েও কোন রকমের ভূমিকা রাখছে না। ফলস্বরূপ, পশ্চিমারা নিরাপত্তা পরিস্থিতি যাচাই-বাছাইয়ের নামের ইচ্ছামত পোশাক কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিচ্ছে। ক্ষতিপূরণ নিয়েও করছে স্বেচ্ছাচারিতা। অথচ, সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারী খাতটির সহায়তায় সরকারের পক্ষ থেকে করার থাকছে না কিছুই।