ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশের আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে অবনতি হতে পারে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির। এরই মধ্যে নীলফামারীতে বেড়ে গেছে তিস্তা নদীর পানি। নতুনদিনের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর ভারতীয় অংশেও বেড়ে যাবে পানির প্রবাহ। কেননা, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম রাজ্যে বৃষ্টির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে।
এছাড়া, চলতি মাসের প্রায় পুরোটাই ভারতের ওই দুই অঙ্গরাজ্যে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের পূর্ভাবাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। ফলে, আরও বেড়ে যেতে পারে তিস্তা নদীর পানির পরিমাণ। আর এই কারণেই বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
তিস্তা নদী ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সিকিম রাজ্যের আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী তিনদিনই রাজ্যটির অধিকাংশ স্থানেই বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া, পুরো জুলাই মাস জুড়েই পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করছেন ইন্ডিয়ার আবহাওয়াবিদরা। একারণে, বেড়ে যেতে পারে তিস্তা নদীর পানির প্রবাহ।
গত ৩০শে জুন বিকালে তিস্তানদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। একই দিনের সকাল ৬ টায়ও পানি বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকাল ৯ টায় পানি কিছুটা কমে ১৪ সেন্টিমিটার এবং দুপুর ১২টায় আরও কমে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের তিস্তাবেষ্টিত প্রায় ১৫টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, উজানে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। তিস্তা ব্যারাজের সব কটি গেট খুলে রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইস গেট খুলে রেখেছে।
বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি এবং জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম।
২৯শে জুন ভোর রাত থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়ার কারণে পশ্চিম বাইশপুকুর, ছোটখাতা, বানপাড়া গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এসব এলাকার কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর পানি। এছাড়া, নীলফামারির টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি, পূর্বখড়িবাড়ি, দক্ষিণ খড়িবাড়ি ও উত্তর খড়িবাড়ি গ্রামের প্রায় ৫০০ পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
তিস্তার পানি বাড়ার কারণে এলাকায় বন্যা শুরু হয়েছে। বন্যার ক্ষতিকর প্রভাবও শুরু হয়ে গেছে উত্তরাঞ্চলে। ঝাড়শিঙ্গেশ্বর চরের কাছ দিয়ে তিস্তার আরেকটি চ্যানেল তৈরি হয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সেখানে ভাঙন শুরু হয়েছে। ৩০ জুন সকালে ওই চরের চারটি পরিবারের ভিটাবাড়ি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে। ১০টি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে।