সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে চলছে দ্বন্দ্ব। উভয়পক্ষের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা। কোনো নোটিশ বা আলোচনা ছাড়া নগরীতে ইজিবাইক ধরপাকড় এবং হকার নিয়ে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিটি মেয়র পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নগরীতে অশান্তি সৃষ্টির জন্য পুলিশ পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তবে মহানগর পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, রমজানে নগরী যানজটমুক্ত রাখতেই তারা কাজ করছেন।
জানা যায়, রমজানের আগেই সিলেট নগরীতে ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। সে লক্ষ্যে ইজিবাইক মালিক ও চালকদের নিয়ে সিসিক মেয়র বৈঠকও করেন। বৈঠকে মেয়র ইজিবাইক চালকদেরকে রমজান মাসে নগরীর ভেতরে গাড়ি না চালানোর আহ্বান জানান। তিনি নগরীর বাইরের সাইড মদীনা মার্কেট, শাহী ঈদগাহ, হুমায়ুন রশীদ চত্বর প্রভৃতি এলাকায় ইজিবাইক চালানোর আহ্বান জানান।
মেয়রের এমন আহ্বানে ইজিবাইক চালকরা মদীনা মার্কেট থেকে তালতলা পর্যন্ত তাদের গাড়ি চালানোর অনুমতি চান। তখন মেয়র বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দেন।
এই বৈঠকের পর গত বুধবার তৃতীয় রমজানের দিন সিলেট নগরীতে ইজিবাইকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় পুলিশ। তারা নগরীর বিভিন্ন জায়গায় চালকদেরকে বাধা প্রদান করে। এরপর দিন বৃহস্পতিবার নগরীতে মিছিল ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ইজিবাইক চালকরা। তারা আন্দোলনের হুমকিও দেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মেয়র আরিফ বৃহস্পতিবার রাতে তারাবির নামাজ শেষে ইজিবাইক মালিক ও চালকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। কিন্তু বৈঠকটি কোনো সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়। এর পর পরই নগরী জুড়ে তাণ্ডব চালায় ইজিবাইক চালকরা। তারা শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে। তাদের হাতে আহত হন অন্তত ১০ জন।
মেয়র আরিফ সাংবাদিকদের জানান, এমন ঘটনার পর তিনি এসএমপি পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমানকে ইজিবাইক চালকদের সঙ্গে বসে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য বলেন। কিন্তু পুলিশ কমিশনার মেয়রের কথায় পাত্তা না দিয়ে বলেন, ‘আপনি চাইলে ইজিবাইক চালকদের নিয়ে বসতে পারেন। আমি বসবো না।’ পুলিশ কমিশনারের এমন বক্তব্যে আরিফ একদিকে হতবাক হন, অন্যদিকে হন ক্ষুব্ধ।
আরিফ আরো জানান, গত বুধবার নগরীতে ইজিবাইকের বিরুদ্ধে পুলিশ যে অ্যাকশন নিয়েছে, তা ছিল পুলিশের একক সিদ্ধান্ত। সিসিককে তারা বিষয়টি অবহিতও করেনি।
এদিকে সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরীর ফুটপাতগুলো হকারমুক্ত হয়। রমজান শুরু হওয়ার আগে হকার্স নেতারা সিসিক মেয়র আরিফের কাছে রমজানে অন্তত ফুটপাতে বসতে দেয়ার অনুরোধ জানান। মানবিক কারণে মেয়র হকারদেরকে ফুটপাতে বসার অনুমতি প্রদান করেন। তবে তিনি শর্ত জুড়ে দেন- কোনো হকার রাস্তায় বসতে পারবে না এবং সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তারা ফুটপাতে বসতে পারবে না। হকার্স নেতারা মেয়রের এমন শর্ত মেনে নেয়। এমনকি তারা তাদের নিজেদের মানুষজন দিয়ে আলাদা একটি স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে যাতে কোনো হকার রাস্তায় না বসে। হকাররা মেয়রের শর্ত মেনেই ফুটপাতে বসা শুরু করে।
মেয়র অভিযোগ করেন, এরপর থেকে পুলিশ হকার্সদের স্বেচ্ছাসেবক টিমের বিভিন্ন সদস্যকে ছিনতাইসহ বিভিন্ন মামলায় আটক শুরু করে। এতে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে থাকা হকার্সরা ভয়ে তাদের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকেন। ফলে নগরীতে আবারও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দেয়।
মেয়র অভিযোগ করেন, তিনি জানতে পেরেছেন- পুলিশের কতিপয় সদস্য নগরীর প্রায় ৩ হাজার হকার্সদের কাছ থেকে জনপ্রতি প্রতিদিন একশ টাকা করে নিচ্ছে। এই পুলিশ সদস্যরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে হকারদেরকে রাস্তায় বসানোর পায়তাঁরা করছে। সিলেট নগরীকে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীল করতেই পুলিশ এমন কাজ করছে বলে অভিযোগ মেয়রের।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রহমত উল্লাহ এ ব্যাপারে বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে সিলেট নগরীকে যানজটমুক্ত রাখতেই ইজিবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।’