ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বেশি দিন আগের কথা নয়, সম্মান জানাতে ভারতের শচীন টেন্ডুলকারের সাথে দেখা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শতকের সত্তরের দশকে টেন্ডুলকার হতাশ ভারতের সমাজে যোগ করেছিলেন নতুন আশা-ভরসা। তখন প্রায় প্রতিটি শিশু স্বপ্ন দেখা শুরু করে, তারাও শচীন হবে। তারপর ভারতের পুরো সমাজ মিলে প্রায় চল্লিশ বছরে শচীনকে টেন্ডুলকার হিসেবে গড়ে তুলেছে।
সেই একই স্বপ্ন আজ বাংলাদেশ সাকিব আল হাসানকে নিয়ে দেখা শুরু করেছিল। অবশ্য সেই স্বপ্ন পরিণিতির আগেই অপমৃত্যুর অপেক্ষা করছে। এরই মধ্যে আমরা সাকিবকে গলাটিপে মেরে ফেলার সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করতে উঠে-পড়ে লেগেছি।
বিচারের শেষ আশ্রয়স্থল আদালত। আর বিচারের দণ্ড প্রথম কথা বলে নিজেদেরই বিবেকের কাছে। সাকিবকে ছয়মাস নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে, সেই বিবেকের কাছেই প্রতিমুহুর্তে অপরাধী হয়ে থাকবে কোটি কোটি বাঙ্গালী। কোটি বাঙ্গালীকে এই আত্মদহন থেকে মুক্তি দিতে আপনি এগিয়ে আসুন প্রধানমন্ত্রী।
শাস্তির একশ’ আশি দিন সাকিবের সাথে সমবেদনায় ভুগবে বাংলাদেশ। কেননা, সাকিব আল হাসানকে নিষিদ্ধ করার ওই বিচারের সাথে অপরাধের, বিচারকের সাথে দায়িত্ববোধের কোন সম্পর্ক নাই। বলা হলো, বিসিবিকে ‘না জানিয়ে’ বিদেশে লীগ খেলতে যাওয়ায় সাকিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আলোচনায় বসেছে বিসিবি। কিন্তু সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত হলো সাকিব আল হাসানকে শাস্তি দেওয়া হবে ‘আচরণগত সমস্যার’ কারণে! এইভাবে বিচারের দণ্ড আর অভিযোগের আঙ্গুল দুটোর অবস্থান ছিল দুই দিকে।
আবার, বিচারের দণ্ডাদেশ ঘোষণা করতে গিয়ে বিসিবি সভাপতি বললেন, এটি এক মাস, দুই মাস ধরে করছে না। তারা বহুদিন ধরেই করছে। বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে চলতে অনেক বড় হয়ে গেছে। দেশের মূল্যবান খেলোয়াড় বলেই আমরা এড়িয়ে গেছি। বোর্ড মনে করছে, এভাবে এড়িয়ে চললে তারা ভবিষ্যতে কাউকে আর মানুষ মনে করবে না’! চার-ছক্কা মারা, উইকেট নেওয়াই সাকিবের সর্বোচ্চ সুব্যবহার। এর বাইরে সাকিবের কাছে ভিন্ন কিছু খুজতে যাবে কেন বিসিবি?
সাকিব আল হাসানকে একশত আশি দিনের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই সময়ে সাকিব আল হাসানের ওপর যে মানসিক নিপীড়ন বইবে এর ক্ষতিপূরণ হবে কিভাবে? দলের সেরা খেলোয়াড়টির খেলার মানও যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লো, তার ভাবনাটা কে ভাববে? কেউই আইনের বাইরে নয়। সাকিবও আইনের বাইরে যাবে না। সাকিবকেও আইন মানতে হবে। কিন্তু আইন জীবন ও উন্নতির জন্য। আইনের অপর নাম মৃত্যুমন্ত্র হতে পারে না।
সমস্যার সমাধানের সুযোগ তৈরী বিচারের দায়। আর বিচারকের কর্তব্য থাকে সমাধানের পথ দেখান। কিন্তু সাকিব আল হাসানকে নিষিদ্ধের বিচার সমস্যার সমাধান করবে না। সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলবে। আর বিচারের ওই রায় বহাল থাকলে চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে সমস্যা সমাধানের পথ। একারণেই বারবার প্রশ্ন উঠছে ভয়ঙ্কর একশত আশি দিন পর ফিরে আসবেন তো আমাদের সেই শক্তিমান সাকিব?
আর একজনও কৃতিসন্তান হারানোর বেদনা সইবে কেন বাংলাদেশ? তবুও চোখের সামনেই বিচারের নামে সাকিব আল হাসানকে হারাতে বসেছি আমরা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক সময়ই আপনি ক্রিকেট উত্তেজনায় উদ্বেলিত হয়েছেন। সারাদেশের মানুষের সাথে একপ্রাণে সবাইকে মিলিয়ে দেওয়ার বিরল সুযোগগুলোর অন্যতম নায়ক এই সাকিবরাই। এদের এইভাবে পতিত হতে দেবেন না প্রধানমন্ত্রী। আপনি এই পতন থামান। আপনিই পারেন।