সাকিব আল হাসানের ঘটনার পর প্রাক্তন ক্রিকেটার হালের বিসিবি এবং সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ট আকরাম খান স্বীকার করলেন- তিনি সাকিবকে বলেছিলেন যে তাঁর কোনো সমস্যা নেই যদি সে ক্যারিবিয় লীগ খেলতে যায়। তবে তিনি নাকি সাকিবকে চিফ এক্সেকিউটিভ অফিসারের সাথে দেখাও করতে বলেছিলেন।
এদিকে সাকিব বললেন যে, চিফ এক্সেকিউটিভ অফিসারের সাথে যোগাযোগ করলে তাকে বরং আকরাম খানের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল এবং আকরামের সাথে যোগাযোগ করতে তিনি তাকে জানিয়েছিলেন যে সাকিবের যাওয়ায় তার কোনো সমস্যা নেই। তাছাড়া পরবর্তীতে, দেশে ফিরলে তিনি সাকিবকে এনওসি সাইন করে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন।
এ থেকে যেটা পরিষ্কার হয়, সেটা হল- আকরাম খানই এনওসি দেয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন; তিনি সাকিবকে (যখন সে তার শরণাপন্ন হয়) মৌখিকভাবে এনওসি দিয়েছিলেনও এবং এও বলেছিলেন যে সে দেশে ফিরে আসলে এই সংক্রান্ত কাগজে দস্তখত দিয়ে দেবেন।
এস্বত্বেও শুধু সাকিবকেই দেশে ফিরে এসে নাকে খত দিতে হল। এবং অকর্মণ্য কর্মকর্তারা, পরিচালনার ‘প’ ও না জানা পরিচালকেরা, কার্য সুচারুরূপে নির্বাহ করতে পুরোপুরি অপারগ কার্য নির্বাহকেরা, আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা, দেশপ্রেমে ভাস্বর ভদ্রলোকেরা এমন ভাবখানা ধরলেন যেন এক বেয়াদপকে শায়েস্তা করা হল।
এদিকে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার পরশ্রীকাতর সাধারণ বাঙালিও মেধাবী, বিত্তবান, বীর্যবান, বিশ্বমানের উদিত গর্বিত এই তারকাটিকে মাটিয়ে টেনে নামিয়ে এনে দু চার ঘা– স্ব স্ব সাধ্য-মোতাবেক লাগিয়ে দেয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত-ন্যস্ত হয়েছেন। একেকজন অতল-বিনয়কামি, মহা-দেশপ্রেমিক, বিশ্ব-সংযমী হুজুরে আলামপনা। সাকিবকে আসলেই মনে রাখতে হবে যে সে তারকা হলেও ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’। পারফর্মেন্স, ফর্মের ধারাবাহিকতা যেমনই হোক– সে নিরেস, ব্রাত্য, অচ্ছুৎ, ম্লেচ্ছ। তার আকাশে ওড়ার অনুমতি নেই, ক্ষোভ প্রকাশ করার কোনো অধিকার নেই, প্রশ্রয় পাবার যোগ্যতা নেই।
সাকিব যেহেতু ক্ষোভের বশে বলেই বসেছিল যে সে আর দেশের জন্য খেলবে না, এই বাস্তবতায় তার পক্ষে আত্ম-পক্ষ সমর্থন করা কঠিন। অন্য কারো জন্য এই বিষয়ে তাকে সমর্থন করা কঠিনতর। স্থৈর্য ফিরে পেয়ে সাকিব নিশ্চয়ই বুঝেছে যে তার অমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ ঘোষণা বেশ স্পর্শকাতর এবং বিশেষ করে যেহেতু সে দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, জরুরি একজন খেলোয়াড় (ছোট দেশের বড় তারকা), তাই তার এহেন আচরণ আরও বেশি রুঢ়, আত্মম্ভরি বলে মনে হয়। চুনোপুঁটিদের কেউ এমন ঘোষণা দিলে কারো গায়েই লাগত না এবং চোখের পলকে জাতীয় বেঈমানেও পরিণত হত না। তাকে সবাই দলে চায় বলেই এত লাগল! এ এক সান্ত্বনা।
কিন্তু কথা হচ্ছে– কেন এমন স্পর্শকাতর বিষয় এভাবে চাউর করা হল? সকল পন্থার অনুসারীরা, সমস্ত মতাদর্শের প্রভাবকেরা কোন আক্রোশ থেকে, সঙ্গত ভাবেই গর্বিত সাকিবের ক্ষণিকের পাগলামিকে লুফে নিয়ে তার অতীতের সমস্ত ছেলেমানুষিগুলোকে পুনরায় উদ্ধৃত করে এভাবে, সাধ মিটিয়ে তাকে গালাগাল দিল? কোন আক্রোশ থেকে? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে তাদের লেখার তলায় ঘৃণায় লুটোপুটি খাওয়া কমেন্টগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করলে। লেখকেরা যা বলে না, বা যা গোপন (হয়ত নিজের অজ্ঞাতেই) রেখে গালমন্দ করে, কমেন্ট দাতারা তা নির্দ্বিধায় প্রকাশ করে দেয়। সাকিবের অর্থ-বিত্ত, সফলতা, সাম্প্রতিক অসাধারণ অর্জন এবং সুন্দরী-তন্বী-আধুনিকা স্ত্রীই আমাদের এমন অস্থির, অনতিক্রম্য আক্রোশে তার প্রতি অমন নাখোশ করে তুলেছে। আমরা স্রেফ পরশ্রীকাতর এবং পরস্ত্রী-কাতর।