দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ বিশ্লেষনঃ ব্রাজিল দলে নেইমার যেমন, বাংলাদেশ দলে সাকিব তেমন। একজন সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য কত ভয়ঙ্কর পরিণতি আনতে পারে তার দৃষ্টান্ত ব্রাজিলের ঐতিহাসিক পরাজয়। ব্রাজিলের এই পরাজয় দেশটির ফুটবলের নয়, ফুটবলারদের মনোজগতের। আর এই পরাজয়ের কারণে ব্যাপক অংশজুড়ে আছে নেইমারের অনুপস্থিতি।
নেইমারের অনুপস্থিতিতে ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা যে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন তা টের পেয়েছিলেন স্কলারি। স্কলারি সেমিফাইনালের আগে দলের খেলোয়াড়দেরকে নিয়ে দেখা করতে গিয়েছিলেন একজন মনস্তাত্ত্বিকের সাথে।
নেইমার কেবল একজন ফরোয়ার্ড হিসেবেই ব্রাজিলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন না। তিনি দলের বিজয়ী চেতনাকে ধরে রেখেছিলেন। যেদিন নেইমার খেলার মাঠ থেকে বিদায় নিলেন, সেদিন ব্রাজিলের চেতনাটাও বিদায় নিয়েছিল। আর একারণেই নিজেদের মনের কাছে অনেক আগেই হেরে বসেছিলেন ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা। একারণেই খেলার মাঠে ব্রাজিল দল থাকলেও তাদের খেলাটাই ছিল অনুপস্থিত। একারণেই জার্মানির বিরুদ্ধে ব্রাজিলের ঐতিহাসিক পরাজয়ের ব্যাখ্যা যতটানা ফুটবল দিয়ে করতে হয়, তার চেয়েও বেশি বিবেচনায় আনতে খেলোয়াড়দের মনোজগতের বিষয়টি।
নিজ দেশে সেমিফাইনাল খেলায় ব্যাপক মানসিক চাপে ছিলেন ব্রাজিলের ফুটবলাররা। তার মধ্যে আবার নেইমারের অনুপস্থিতি। কেবল অনুপস্থিতি নয়, শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল নেইমারকে। এই দৃশ্যটিই বদলে দিয়েছে ব্রাজিলের খেলোয়াড়দের মানসিকতা। অনেকে, এমনকি স্কলারিও ধারণা করছিলেন, ব্রাজিলের খেলোয়াড়দের মানসিকতার পরিবর্তনটা হবে ইতিবাচক। আর কিছু না হউক, নেইমারের জন্য হলেও জার্মানির বিরুদ্ধে জিতবে ব্রাজিল।
কিন্তু বাস্তবতা হলো ভিন্ন, কেবল শরীরগুলো নিয়ে মাঠে উপস্থিত হয়েছিলেন ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা। তাদের মধ্যে ফুটবলার সত্ত্বাটাই ছিল অনুপস্থিত।
ব্রাজিলের পরাজয় থেকে স্পষ্ট হলো যে, খেলোয়াড়দের মনোজগত বিগড়ে গেলে দলের ম্যানেজমেন্টের কিছুই করার থাকেনা। ব্রাজিল যখন একের পর এক গোল খেয়ে যাচ্ছিল তখন স্কলারির লুকানর জায়গা খোঁজা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। এইভাবেই খেলোয়াড়দের মনোজগত উলট-পালট করে দিতে পারে সমস্ত কিছু।
ফুটবলের মতো ক্রিকেটও মনেরই খেলা। আর, কোন দলে এক একজন খেলোয়াড়ের প্রভাব থাকে একেক রকম। আশঙ্কা আছে, নেইমারবিহীন ব্রাজিলের পথেই হাটঁতে পারে সাকিববিহীন বাংলাদেশ। সাকিব কেবল খেলেনই না, বাংলাদেশ দলের চেতনাটাকেও জিইয়ে রাখেন। সেই সাকিবকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার নামে দল থেকে দূরে রাখার প্রভাব পড়তে পারে ভয়ঙ্কর। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সাকিব আল হাসান যতবার জিতিয়েছেন, তার চেয়েও জয়ের মানসিকতা ধরে রাখতে ভূমিকা রেখেছেন বেশি।
বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ দলে ম্যাচ জেতান খেলোয়াড় অনেক আছেন। যুক্তিটি সঠিক। কিন্তু একজন ম্যাচ জেতান, বিশ্বসেরা খেলোয়াড়ের পরিণতি দেখে অন্যরা খেলায় কতটুকু মনযোগী হবেন?
বাংলাদেশে চলমান ঘটনা প্রবাহ খেলোয়াড়দের মধ্যে তৈরী করতে পারে ভীতিকর ক্রিকেট বিনাশী মানসিকতা। সাকিবের ঘটনায় বিসিবি অন্য খেলোয়াড়দের বুঝিয়ে দিয়েছে, ক্রিকেট নয়, মাঠের বাইরে খেলোয়াড়দের আচরণের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। একারণেই, সাকিবকে খেলার জন্য নয়, আচরণের কারণে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। খেলোয়াড়রা কি তাহলে এখন থেকে মাঠের বাইরের জগত নিয়েই তটস্ত থাকবেন অনেক বেশি? বিসিবি কি তাই চাইছে? আর তাহলে তাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ দাঁড়াবে কোথায়?