DMCA.com Protection Status
title="৭

৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন না হলে এই হিস্যা আদায় সম্ভব হতো না : প্রধানমন্ত্রী

1405009732গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচন না হলে ভারতের কাছ থেকে সমুদ্রসীমার ন্যায্য হিস্যা আদায় সম্ভব হতো না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ছাড়া অতীতে অন্য কোনো সরকার বাংলাদেশের অধিকার আদায়ের উদ্যোগ নেয়নি। সমুদ্রে তালপট্টি দ্বীপের কোনো অস্তিত্ব নেই। এ নিয়ে কথা বলে সরকারের অর্জনকে খাটো করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ সব কথা বলেন। তিনি বলেন, সমুদ্রে আমাদের যে অধিকারটা সুরক্ষিত হলো, এটা আমাদের একটা বিরাট অর্জন, দেশের জন্য। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে যদি জয়ী হতে না পারতাম, তাহলে এই সমুদ্রসীমাটা ভারতের কাছ থেকে আমরা আনতে পারতাম কি না সন্দেহ ছিল। কারণ অতীতে অনেক সরকারই ছিল, কেউই এটার কোনো উদ্যোগই নেয়নি। 



অন্যদিকে তালপট্টি দ্বীপ এলাকা বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ না পাওয়া এবং রায়ে বঙ্গোপসাগরে অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমায় ভারতের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে বিএনপি নেতা হাফিজউদ্দিন আহমেদের দেয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কিছুই করেনি। কিন্তু খুঁত ধরার একটা চেষ্টা। বিএনপির এক নেতা বলেছেন, আমরা তালপট্টি  পাইনি। তাকে বঙ্গোপসাগরে পাঠিয়ে দেয়া উচিত। তালপট্টি কোথায় আছে খুঁজে বের করুক। ওই দ্বীপে একটা বাড়ি করে থাকেন। ভদ্রলোক তো ভোলার মানুষ। ভারত ও মায়ানমারের বিরুদ্ধে সমুদ্র বিজয়কে সরকারের বিরাট সাফল্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিজয়ের ফলে অর্জিত সম্পদ যথাযথ কাজে লাগানো হবে।



প্রধানমন্ত্রী দেশকে দ্রুত এগিয়ে নিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীকেও সমান অবদান রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, নারীরা জাতীয় উত্পাদনে সমানভাবে এগিয়ে এলে আমরা সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত হতে পারব। আমরা চাই, নারীরা জাতীয় উত্পাদনে সমানভাবে এগিয়ে আসুক। তা হলেই আমরা উন্নত, সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত হতে পারব। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে পারব।

নারীকে সেভাবে তৈরি হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অধিকার আদায় করে নিতে হবে। সেজন্য দেশের প্রতিটি নারীকে সামর্থ্য অর্জন করতে হবে। শিক্ষিত হতে হবে। নারীরা জাতীয় উত্পাদনে সমানভাবে এগিয়ে এলে আমরা সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত হতে পারব। নারী উন্নয়নে পুরুষদের মানসিকতার পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাইরে নারীমুক্তির কথা বলবেন আর ঘরে গিয়ে নারী নির্যাতন করবেন, এ হিপোক্রেসি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নারীরাই কন্যা, জায়া, জননী। নারীর সেই মর্যাদা সমাজের সর্বস্তরে নিশ্চিত করতে হবে।  কাজটি শুরু করতে হবে পরিবার থেকে।



এ সময় তিনি বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের সংসদের একটা ইউনিক সিচুয়েশন, সেটা হচ্ছে স্পিকার, লিডার অব দ্য হাউস, লিডার অব দ্য অপজিশন এবং ডেপুটি লিডার চারজনই নারী। বিশ্বে এর দ্বিতীয় নজির নেই। ২০ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্যসহ ৭০ জন নারী এমপি আছেন।

২০ শতাংশ নারী সংসদ সদস্য বিশ্বের খুব কম দেশেই আছে। ২০১৩ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট অনুযায়ী নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে সপ্তম বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের সরকার নারী উন্নয়ন নীতি, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইন, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনসহ নারী উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে প্রশাসন, সামরিক বাহিনী, বিচার বিভাগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য অর্থ ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি বাড়ছে। আমাদের দেশের নারীরা আরও সুশিক্ষায় শিক্ষিত হোক, সমাজের প্রতিটি স্তরে তাদের অবদান যেন থাকে।



শিশুদের বিকাশে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের মা নেই, বাবা নেই বা হারিয়ে যাওয়া শিশু, যারা রাস্তায় ঘোরে, মানবেতর জীবন-যাপন করে তারাও মানুষ, মানব সন্তান এভাবে ঘুরে বেড়াবে— এটা হতে পারে না, এটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কাজেই নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় সঠিকভাবে উদ্যোগ নেবেন। নারী ও শিশুর উন্নয়নের মাধ্যমেই দেশের টেকসই অগ্রগতি নিশ্চিত করা সম্ভব। তাই আমরা নারী ও শিশুর উন্নয়নে সর্বাত্মক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। শহরের পাশাপাশি গ্রামের নারীদের উন্নয়নেও কাজ করছি।



প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালের সরকারের সময় থেকেই নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১১ সালে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। এর বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সকল মন্ত্রণালয়ে নারী উন্নয়ন সংক্রান্ত ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। ৪০টি মন্ত্রণালয়ের জন্য জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানের ১৯ (৩) অনুচ্ছেদে সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ ও সম-সুযোগ নিশ্চিত করেন। তিনি বাঙালি নারীকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পথ দেখিয়েছেন। 



নারীর উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০, অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১০, মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে। ইভটিজিং বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়াসহ মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ সবেতনে ৬ মাসে উন্নীত করা হয়েছে। ন্যাশনাল আইডি ও পাসপোর্টে বাবার পাশাপাশি মায়ের নাম সংযুক্ত করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ প্রণয়ন করা হয়েছে। নারী ও শিশুর আইনগত সহায়তা দেয়া হচ্ছে। সারাদেশে স্থানীয় পর্যায়ে ৪৪টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি গঠন এবং নির্যাতিত নারীদের সার্বিক সহায়তার জন্য ৭টি জেলায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।



নারী শিক্ষা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত উপবৃত্তি চালু করা হয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এর ফলে এমডিজি ২ ও ৩-এর লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ এ ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে।

তিনি বলেন, আমরা এমডিজি অ্যাওয়ার্ড ও সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে নারীর স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে মোবাইল ফোন-স্বাস্থ্যসেবা চালু করা হয়েছে। এখান থেকে নারী ও শিশু রোগীরাই বেশি উপকৃত হচ্ছে। নারী ও শিশুর প্রতি বৈষম্য হ্রাসে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ ছাড়াও কর্মজীবী মায়েদের জন্য ৬টি বিভাগীয় শহর ও ১৩টি জেলা শহরে মোট ৪৪টি ডে-কেয়ার সেন্টার চালু করা হয়েছে। ৭টি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল চালু এবং গার্মেন্টন্স কর্মীদের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামে ডরমেটরি নির্মাণ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। 



মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। মহিলা ও শিশু বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান সিকদার, মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিকুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী ও মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।


 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!