ব্রাজিল বিশ্বকাপে ধারাবাহিক ফর্মে থাকা আর্জেন্টিনা হয়েছে রানার্স আপ। আর্জেন্টিনার সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল এবার বিশ্বসেরা ফুটবলার মেসির হাত ধরে বিশ্বকাপ আসবে সেদেশের ঘরে। কিন্তু না, তা হলো না। সে স্বপ্ন ভেঙে দিল জার্মানির বদলি খেলোয়াড় মারিও গোটেশ।
এ পরাজয় মেনে নিতে পারেনি আর্জেন্টিনার উগ্রপন্থী সমর্থকরা। খেলার অতিরিক্ত সময়ে জার্মানির সঙ্গে এক গোলে হারের পর রবিবার রাতে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসে সহিংসতা শুরু করে উগ্রপন্থী সমর্থকরা। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ পুলিশ আহত হয়েছে। ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। খবর রয়টার্স ও এপির।
দীর্ঘ ২৮ বছর পর আর্জেন্টিনার তৃতীয় শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ধূলিসাতের পর এক র্যালি থেকে একদল যুবক পাথর ছোড়ে ও দোকানপাটে হামলা চালায়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে। স্থানীয় সময় রাত ৯টার পর শুরু হওয়া এ সহিংসতার সময় শিশুদের নিয়ে অনেক অভিভাবককে দৌড়ে পালাতে দেখা যায়। ম্যাচের আগেই হাজার হাজার আর্জেন্টাইন জড়ো হয় বুয়েনস এইরেসের ঐতিহাসিক চত্বর ওবেলিস্কে। হারের পর শুরু হয় সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা।
সংঘর্ষের মূল হোতা হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে আর্জেন্টিনার কট্টর সমর্থকগোষ্ঠী ‘বারা ব্রাভাস’কে। ম্যাচের পর মানুষের ভিড়ের মধ্যে দাঙ্গা পুলিশের উদ্দেশে ইট-পাথর নিক্ষেপ করতে থাকেন বারা ব্রাভাসের সদস্যরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে অনেক পরিবার, নারী, শিশু আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন। কেউ কেউ দৌড়ে রেস্তোরাঁ, হোটেল লবিতে আশ্রয় নেন।
পরাজয়ের পর আর্জেন্টিনার সমর্থক, বিশেষ করে তরুণ সমর্থকরা ভেঙে পড়েন বেশি। প্রায় সবার চোখে জল টলমল।
২৭ বছর বয়সী নির্মাণকর্মী লিয়োন্দ্রো পারেদেস বললেন, এখন পর্যন্ত বলা যায়, এটি অসাধারণ এক বিশ্বকাপ ছিল। ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে দাপটের সঙ্গে খেলেছি। চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। দলের জন্য আমরা গর্বিত। হয়তো প্রতিশোধ নিতে পারিনি। তবে মাঠে ১১ যোদ্ধা লড়েছে।
২০ বছর বয়সী মার্টিন রামিরেজ বলেন, ভেবেছিলাম জীবনে প্রথমবারের মতো আমাদের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখব। কিন্তু হলো না।
বুয়েনস এইরেসে জার্মানি অভিবাসীরা এক জায়গায় জড়ো হয়েছিলেন ফাইনাল দেখতে। জয়ের পর ‘জার্মানি, জার্মানি’ বলে জয়ধ্বনি দিচ্ছিলেন সবাই। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আর্জেন্টিনায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূতও। কিছুক্ষণের মধ্যে জার্মান-আর্জেন্টাইন সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টির উপক্রম হয়। পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ম্যাচ শেষ হতে তখন কয়েক মিনিট বাকি। দল হারতে চলেছে বলে আর্জেন্টিনার ভক্তদের চোখেমুখে শঙ্কা, হতাশার ছাপ ভেসে উঠেছিল। তবে ব্যতিক্রমও ছিল।
আর্জেন্টিনা রানার্সআপ হওয়ায় খুশি হয়েছেন অনেকে। সবার কণ্ঠে শোনা যায় লিওনেল মেসি আর প্রিয় দলের প্রশংসায় স্লোগান। ফাইনাল শেষে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসে প্লাজা স্যান মার্টিনে লক্ষাধিক মানুষ পরাজয়ের হতাশায় ভেঙে না পড়ে উদ্দাম আনন্দে মেতে ওঠেন। অবশ্য এর মাঝে তাদের আনন্দ মাটি করে দিয়েছে একদল উগ্র বিশৃঙ্খলাকারী।
এ ধরনের সমর্থক বিশ্বে ‘বারা ব্রাভাস’ নামে পরিচিত। গভীর রাতে এক দল ‘বারা ব্রাভার্স’-এর আক্রমণের শিকার হয় পুলিশ। পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়তে থাকলে শুরু হয় সংঘর্ষ। এ সময় শিশু সন্তান কোলে নিয়ে অনেক মা-বাবাকেই দিশেহারা হয়ে ছুটতে দেখা গেছে। উশৃঙ্খল কিছু লোক তখন দোকানপাট লুটপাটে লিপ্ত হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস এবং রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। সংঘর্ষে ৭০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে ১৫ জন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।