বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সকল সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আলোচনার কথা কেন বলা হচ্ছে সেটা আমার বোধগম্য নয়। জানুয়ারি মাসের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তারা ভুল করেছিল। বিএনপি তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ভুল করেছে এবং সেই ভুলের মাশুল তাদেরই দিতে হবে।’
অতিসম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফরকালে লন্ডনে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি একটা জিনিস বুঝি না, সবাই আলোচনা আলোচনা করে এত ব্যস্ত কেন? আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজে টেলিফোন করেছিলাম, তার ফলাফল সবাই জানে। এখন কোনো একটি রাজনৈতিক দল যদি পদক্ষেপ নিতে ভুল করে, তার দায়-দায়িত্ব কার?’
তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘তাদের আনার জন্য, আমাদের একেবারে তাদের আহ্বান করতে হবে, আলোচনা করতে হবে .. কেন এই প্রশ্ন আসে বার বার?’
তিনি বলেন, ‘কোনো একটি রাজনৈতিক দল যদি পদক্ষেপ নিতে ভুল করে, তার দায়-দায়িত্ব কার?’
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদকে মদদ দিয়েছে, এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামের নেতাদের বাঁচাবার জন্য মানুষ হত্যা করেছে।’
তবে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার কথা তিনি নাকচ করে দিলেও, আগামী নির্বাচনও ৫ জানুয়ারির মতো একই পদ্ধতিতে হবে কিনা, সেই প্রশ্নে কোনো সরাসরি জবাব দেননি শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হয়েছে, এবং সেটার পরিবর্তে কোনো অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি নিয়ে আসা কাম্য হবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নির্বাচন হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে সেই নির্বাচন ঠেকাবার জন্য ব্যাপক নাশকতার আশ্রয় নেয়। নির্বাচনে না এসে, অর্থাৎ গণতন্ত্রের পথে না থেকে, অগণতান্ত্রিক পথে আসার রাস্তা করে দেয়াটা কি একটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক? বিএনপি সেই কাজটাই করেছে, কারণ তাদের মিত্র জামায়াতে ইসলাম নির্বাচন থেকে বাদ পড়েছিল। জামায়াত নির্বাচন কমিশনের নিয়ম-নীতি ভঙের দায়ে নিবন্ধন হারায়, যার জন্য তারা নির্বাচনে অংশ নেয়ার অধিকার হারায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যদি সরকারে না থাকতাম, বাংলাদেশে কার সাহস ছিল এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে এবং তাদের শাস্তি দেয়?
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামের নেতাদের রক্ষা করার জন্য বিএনপি নাশকতার পথ বেছে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
‘আমরা নির্বাচন করেছি, সরকার গঠন করেছি, পার্লামেন্ট চলছে, অন্তত এখনকার পার্লামেন্টে বিরোধী দল থাকছে, কথা বলছে, সরকারে থাকলেও তারা বিরোধী দল হিসেবে সরকারের বিরুদ্ধে যে কথা বলা দরকার তাও তারা বলছে।’
প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, বিরোধী দলকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করাটা কোনো নতুন বিষয় নয়, এবং এধরেনের সরকার তিনি গঠন করেছেন শান্তি এবং স্থিতিশীলতার স্বার্থে।
যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়েছে বলে যে অভিযোগ অনেকে করছেন, তা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একমাত্র আমাদের সরকারেরই সাহস আছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং শাস্তি নিশ্চিত করা।’
বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এগিয়ে নিয়ে যাবার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়েছে বলে যে কথা কেউ কেউ বলছেন, তার কোনো ভিত্তি নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া এখন আদালতের হাতে।’