গত ১০ই আগস্ট ওয়ার্ল্ড হিউমেনিস্ট কংগ্রেসের শেষ দিনে বৃটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মিলিত হন বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন, গনজাগরন মঞ্চ খ্যাত ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন ও আরিফুর রহমান । আমাদের পাঠকদের জন্য তাদের বক্তব্য এখানে তুলে ধরা হলো ।পাঠক খেয়াল করুন তাদের সামনে রাখা চায়ের মগ গুলো পবিত্র কোরআন শরীফের উপরে রেখে তা তারা পান করছেন।
☛ সেখানে বিশ বছর দেশের বাইরে নির্বাসিত জীবন যাপন করবার পর তসলিমা নাসরিনের ও বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে নানান রকম আলোচনা হয় ।
☛ তসলিমা নাসরিন ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, আচ্ছা আসিফ তোমার কেমন লাগছে ? আসিফ বলেন, প্রথম প্রথম একটু অস্বাভাবিক লাগছিলো কিন্তু এখন একটু সাহস পাচ্ছি । এতো মানুষ একসাথে কখনো দেখিনি ।
☛ এতদিন যে কাজগুলো করে আসছিলাম তা কিছুটা হলেও বিফলে যায়নি । যখন জেল-এ ছিলাম তখন খুব হতাশাগ্রস্থ লাগতো। আসলে কিসের জন্য করলাম?কাদের জন্য করলাম । যে মানুষদের জন্য লিখছিলাম তারাই তো গালিগালাজ করতো, তারা ঘৃণা করতো ।
☛ কিন্তু এখন মনে হচ্ছে না, কিছুতো এগিয়েছে । এই যে আপনার সাথে দেখা হল, অনেকের সাথে দেখা হল এটাও এক বড় সাফল্য ।
☛ তসলিমা নাসরিন বলেন, এখন তো ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে এসেছো । কাজ করছো, অনেকের সাথে দেখা করছো, তোমাকে দেখতে অনেকে আসছে । কত লোক তোমাকে ইনভাইট করছে । কতো লোক আপ্রিসিয়েড করছে তোমার কাজ কে । তুমি যা করছো, তোমার খুব ভালো লাগে না?
☛ জবাবে আসিফ মহিউদ্দিন বলেন হ্যাঁ । এক ধরনের গর্ব বোধ হয় আমি বাংলাদেশকে রিপ্রেসেন্ট করছি, বাংলাদেশকে সামনে নিয়ে আসছি। কিন্তু বাংলাদেশকে নিয়ে আপনার মতই হতাশা থাকে । তারপরও দেশটা তো আমাদের ই ।
☛ তসলিমা নাসরিন বলেন, না দেখো বাংলাদেশ সম্পর্কে আমি অনেক আগের কথা বলছি , জানি বাংলাদেশ একটি গরিব দেশ যেখানে বছরে বছরে বন্যা হয়, জানি যে একদিন বাংলাদেশ ডুবে যাবে । জানি ওখানে ইসলামী ফানডামেল্টালিস্ট রা বাড়ছে কিন্তু কি জানিনা ওখানে মানুষ আছে ফ্রি চিন্তার, ওখানেও মানুষ আছে রেসোনালিস্ট । হিউমেনিস্ট, সেকুলারিস্ট তারা আন্দোলন করছে ।
☛ তসলিমা নাসরিন বলেন, হ্যাঁ আমার বিরুদ্ধে সরকার মামলা করেছে ,মৌলবাদীরা করেছে, তারা তাণ্ডব করেছে কিন্তু আমি যে আছি ওখানে যে মানুষ আছে কথা বলার, বই লেখার, তুমি আছো ব্লগ লেখায় । তোমাদের উপর খুব অত্যাচার হচ্ছে । তারপরও তোমাদের মত মানুষ আছে । আমার মত মানুষ আছে ।
☛ তসলিমা নাসরিন বলেন, বাংলাদেশ শুধু ইসলামী ফানডামেনটালিস্ট তৈরি করছে না, আমাদের মত মানুষ ও তৈরি করছে । সুতরাং এটাতো মানুষ জানছে বিদেশে । শুধু যে বাংলাদেশ একটি গরিব দেশ দু দিন পর ডুবে যাবে তা না । ওখানে ও মানুষ আছে যারা চিন্তা করে , ওখানে ও মানুষ আছে যারা সমাজ টাকে বদলাতে চায়, ওখানে ও মানুষ আছে যারা স্বপ্ন দেখে । আমরাই সেই বার্তাটা পৌঁছে দিচ্ছি ওখানে । পজিটিভ জিনিস দিচ্ছি যেটা অন্য কেউ দিতে পারে না বাংলাদেশে । দেশের মানুষ প্রতিবাদ করে সেটা তো সাংঘাতিক একটি পজিটিভ দিক ।
☛ তসলিমা নাসরিন বলেন, কেন আমাকে দেশ থেকে বের করে দিলো। দেখ এতো বাধা, এতো কষ্ট তারপরও আমি লিখে যাচ্ছি । আমার মত আসিফ ও অনেক কষ্ট করে লিখছে ।
☛ তসলিমা নাসরিন বলেন, আমি অনেক কষ্ট করে যাচ্ছি যাতে বাংলাদেশের ছেলে মেয়েরা আমাকে দেখে শিখে এবং তারা আমার মত হয় । আমি চাই বাংলাদেশে লিভ-টুগেদারের সংখ্যা বাড়ুক ।
☛ ব্লগার আরিফুর রহমান বলেন, আপনি অনেক কষ্ট করে যাচ্ছেন। আপনি ছোট বেলা থেকেই আমাদের মনের মাঝে আছেন কারণ আপনি প্রথম যোদ্ধা । বাংলাদেশে একটি আইন হচ্ছে আইসিটি অ্যাক্ট যা আর কোন দেশে নেই, আপনি কোন কথা বলতে পারবেন না । কিছু লিখলেই জেলে চলে যাবেন ।
☛ তসলিমা নাসরিন বলেন, আইসিটি অ্যাক্ট এর মত এতো বর্বর আইন আর কোন দেশে নেই । বাংলাদেশে আরও অনেক আইন আছে এরকম এগুলো বাতিল করতে হবে ।
☛ তসলিমা নাসরিন বলেন, আমি ছিলাম ঢাকার মিডফোর্ড হাসপাতালের সরকারি ডাক্তার কিন্তু আমাকে হোস্টেল থেকে আসতে হয়েছে । আমাকে কেউ বাড়ি বাড়া দিতো না কতো কষ্ট করে আমি থেকেছি।
☛ তসলিমা নাসরিন বলেন, বাংলাদেশে লিভ টুগেদার বাড়াতে হবে । এর অনেক ভালো দিক আছে । দুজন দুজনকে চিনল তারপর ভালো লাগলে বিয়ে করল না হলে চলে গেলো । একজন অচেনা মানুষের সাথে শুতে হচ্ছে এর মতো খারাপ, কুৎসিত আর কি হতে পারে !