প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জড়িত ছিলেন বলেই সেনানিবাসের বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন।
আর উনার ছেলে লন্ডন থেকে ওই দিন মধ্যরাতে বারবার ঢাকায় ফোন করেছিল। এর রহস্যগুলো খুঁজে বের করলে অনেক তথ্যই জানা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিক সহায়তা ভাতা প্রদান অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের কাছে আমার একটা প্রশ্ন, যখন বিডিআরে ঘটনাটা শুরু হলো, প্রায় সাড়ে নয়টার দিকে। তখন বিএনপির নেত্রী ক্যান্টনমেন্টের বাড়িতে থাকেন। উনার এত প্রিয় জায়গাটা ছেড়ে ঠিক সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে ওই বাড়িটা থেকে বের হয়ে তিনি আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়েছিলেন কেন? সেই প্রশ্নের জবাবটা তিনি দেবেন কি না? তিনি ওখান থেকে বের হয়ে কোথায় গেলেন, কোথায় ছিলেন? আর উনার পুত্র লন্ডন থেকে মধ্যরাতে, লন্ডনের সময় মধ্যরাত, প্রায় একটা থেকে দুটা এই সময় অনবরত ঢাকায় না হলেও ৪০ থেকে ৪৫ জনের কাছে টেলিফোন করেছেন, কথা বলেছেন। কেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার এই টেলিফোনে কথা বলার উদ্দেশ্যটা কী ছিল? কেন বলতে গেল? এই রহস্যটা একটু খুঁজে বের করেন। তা হলে অনেক কথার জবাব পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, আপনারা দেখছেন যে, বিএনপির নেত্রী এখন নিজে যতটা কথা বলেন তার চেয়ে ছেলেকে দিয়ে বেশি বলাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনও যারা এটা নিয়ে নানা কথা বলছে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কে থাকতে পারে? যে বাড়ি ছেড়ে পালায়, সেই থাকতে পারে। নইলে বাড়ি ছেড়ে পালাবে কেন?
নিহত ৫৭ জন বিডিআর অফিসারের ৩৩ জনই কোনো না কোনোভাবে তারা আওয়ামী লীগ পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় যে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে তাতে বিডিআরের তখনকার মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ বিডিআরে কর্মরত অর্ধশতাধিক সেনা কর্মকর্তা নিহত হন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের যেমন বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন জিয়াউর রহমান, ঠিক একইভাবে ২১ অগাস্টের হামলাকারীদেরও আশ্রয় দিয়েছিল কে?
সুতরাং এই ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করেই বোঝা যাবে যে এদের চরিত্রগুলো কী?
আপনারা একটু বিশ্লেষণ করলেই দেখবেন যে, জিয়াউর রহমান, তার স্ত্রী, তার ছেলে বারবার খুনি, যুদ্ধাপরাধী, নারী ধর্ষণকারীদেরই বারবার প্রতিষ্ঠিত করেছে, পুরস্কৃত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মানুষ আস্থা, বিশ্বাস পাচ্ছে, তারা স্বস্তিতে চলার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু দেখেন অস্বস্তিতে কারা আছেন?
নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ। সেই অন্তর্জ্বালা তো আছেই। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি যেটা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির পিতাকে হত্যার পর এ দেশে শুরু হয়েছিল, সেই হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি আজকে বন্ধ। হাজার উসকানি দিয়েও সেটা করতে পারছে না।
বাংলাদেশের মানুষ যখন স্বস্তিতে আছে, তখন কারো কারো অন্তর্জ্বালাটা বেরিয়ে আসছে বিভিন্নভাবে। নানা ধরনের বিভ্রান্তিমূলক মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষের মাঝে অস্বস্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা আমরা দেখতে পাচ্ছি।
বিএনপি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভুল করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক জীবনে যদি সিদ্ধান্তে কখনও ভুল হয় তা হলে তার খেসারত সে দলকে দিতেই হয়। সে প্রতিশোধ জনগণের ওপর নেয়া তো ঠিক নয়। নিজেদের ভুলের খেসারত দেয়ার জন্য এখন একদিকে আবোল-তাবোল বকছেন, আরেকদিকে জনগণের ওপর দিয়েই যেন প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে।
সরকারের সম্প্রচার নীতিমালা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার একটি সম্প্রচার নীতিমালা তৈরি করেছে। বিএনপি-জামায়াত এই নীতিমালার বিরোধিতা করছে। কিন্তু যারা এখন সম্প্রচার নীতিমালার বিরোধিতা করছেন, তারা ক্ষমতায় আসার পর এই নীতিমালা আরও কঠোর করবে।
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, সমালোচনা করার থাকলে তা করবেন। কিন্তু মনে রাখবেন, যে ডালে বসবেন সেই ডাল কেটে দেবেন না। তা হলে পড়ে যাবেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিককল্যাণ ট্রাস্টকে সহযোগিতা করার জন্য সংবাদপত্র মালিক ও ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ জন্য সাংবাদিকদেরও উদ্যোগ নিতে হবে। সরকার তাতে সহযোগিতা করবে। কিন্তু পরনির্ভরশীল না থেকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
এক সময় হাওয়া ভবনের নির্দেশে সাংবাদিকরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলে সাংবাদিকরা টিকতে পারত না। কিন্তু আজকে সেই অবস্থা নেই। আজকে সাংবাদপত্র শিল্প হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। এতে সাংবাদিকরা সুফল পাবেন। আবার গণমাধ্যম মালিকরাও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আমদানিতে ছাড় পাবেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অষ্টম ওয়েজ বোর্ডের ঘোষণার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটি বাস্তবায়নের বিষয়টি তথ্য মন্ত্রণালয় দেখবে।
পাশাপাশি চলচ্চিত্র উন্নয়নের জন্য সরকার চেষ্টা করছে। সামাজিক বিভিন্ন সাইট যেন দেশ ও সমাজের কোনো ক্ষতি করতে না পারে তার জন্য সতর্ক থাকতে হবে।