২য় পর্বঃ
গণভোটে জিয়াউর রহমানের প্রতি জনগণের আস্থাঃ
৩০ মে ’৭৭ অনুষ্ঠিত গণভোটে জেনারেল জিয়া এবং তার ১৯ দফা কর্মসূচি ও নীতির প্রতি দেশবাসী বিপুল আস্থা জ্ঞাপন করে। ১২ হাজার ২৬৪ কেন্দ্রের ভোটের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোট ভোটের সংখ্যা ১ কোটি ৯২ লাখ ৯ হাজার ৬০। এর মধ্যে ১ কোটি ৮৯ লাখ ৯৩ হাজার ৯২ হ্যাঁ সূচক ভোটের সংখ্যা। না-সূচক ভোটের ২ লাখ ১৫ হাজার ৯৬৮। সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ তাদের আস্থার রায় জানিয়েছেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর সৈনিক এবং নবীন প্রত্যাশায় উদ্দীপ্ত বাংলাদেশের স্বর্ণালী অভিজ্ঞতার নায়ক জেনারেল জিয়াকে, জনগণ তাদের রায় দিয়েছেন স্বাধীনভাবে।
স্বল্পোন্নত দেশের প্রতিনিধি জিয়াঃ
প্রেসিডেন্ট জিয়া ল্যাংকাস্টার হাউসে কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের চলতি সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জনগণের দুঃখ দুর্দশা লাঘবের জন্য ৫ দফা ফর্মূলা প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোকে তাদের জিডিপির শতকরা শূন্য দশমিক ৭ ভাগ পরিমাণ জাতিসংঘের দেয়া সরকারী উন্নয়ন সাহায্যের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করতে হবে। দায় দেনা পরিশোধ শুধু প্রকৃত সম্পদ হস্তান্তরের শর্ত সাপেক্ষে হতে হবে। বিদেশী সাহায্য হতে হবে শর্তহীন এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর চলতি ঋণের দায় সমূহের পুনর্বিন্যাস করতে হবে। একবারে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্যে সমস্ত বকেয়া খরচ বাতিল করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ট্যারিফ সংক্রান্ত ও ট্যারিফ ভিন্ন অন্যান্য বাধা নিরসনের মাধ্যমে উন্নত দেশগুলোর বাজারে আরও বেশি প্রবেশাধিকার দিতে হবে।
উন্নয়নশীল দেশগুলো যখন খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্য তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছে সেক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর উচিত সুবিধাজনক সহজ শর্তে আরও খাদ্য ও কৃষি সরঞ্জাম নিয়ে আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা। কারণ এতে করে উন্নয়নশীল দেশেগুলোর সীমিত সম্পদের উপর চাপ কম পড়বে। বাংলাদেশের মতো কম উন্নত দেশগুলো যে বিরাট সমস্যার সম্মুখীন নিরবিচ্ছিন্ন শান্তি ছাড়া তার সমস্যা সামাধান সম্ভব নয়। (দৈনিক বাংলা, ৯ জুন ’৭৭)
১৯৭৭ সালের ১০ জুন ল-নে সরকারী প্রেস সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বলেন, কমনওয়েলথ ভুক্ত সমৃদ্ধ দেশগুলো স্বাল্পোন্নত দেশসূহের জন্য অনেক কিছু করতে পারে এবং ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যকার ব্যবধান কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কমনওয়েলথ একটি সক্রিয় সংস্থা। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমস্যার সার সংকলন করে বলেন, প্রকৃত পক্ষে এই মুহুর্তে আমাদের প্রয়োজন হচ্ছে উন্নয়নের জন্য কাজ করার মতো উপযোগী করে সমগ্র জাতিকে একটি বিরাট শক্তিতে পরিণত করা। (১১ জুন ’৭৭ দৈনিক বাংলা)
লন্ডনে কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সম্মেলনে জিয়া আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের সংগ্রামী জনসাধারণকে বর্ণবাদী সংখ্যালঘু সরকারের কাছ থেকে সংখ্যাগরিষ্টদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার জন্যে একটি সুনির্দিষ্ট ও বাস্তব জরুরি কার্যক্রম গ্রহনের আহ্বান জানান।
বার্মার সাথে সম্পর্কোন্নয়নঃ
১৯৭৭ সালের ২১ জুলাই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ৪ দিনের সফরে বার্মা যান। যাত্রাকালে বিমানবন্দরে তিনি বলেন, বার্মা আমাদের অতি নিকটবর্তী প্রতিবেশী এবং বার্মার সাথে আমাদের অত্যন্ত ভাল সম্পর্ক রয়েছে বার্মার সাথে আমাদের বানিজ্যিক সম্পর্ক পূর্ব থেকেই অব্যাহত রয়েছে।
চারদিনের সফরে বাণিজ্য সংস্কৃতি, সীমান্ত এবং সমুদ্রসীমাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তারা আলোচনা করেন। বিশেষ করে দুদেশের মধ্যে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছেন। (২১ জুলাই ১৯৭৭, দৈনিক ইত্তেফাক)
মুসলিম দেশের সাথে সস্পর্ক উন্নয়নঃ
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ২৬ জুলাই তিন দিনের সফরে সৌদি আরব যান। বাদশাহ খালেদের সাথে বৈঠকে জিয়া বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখন্ডতার নিরাপত্তা বিধানের সাথে সাথে দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের উন্নয়নই পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য হওয়া উচিত। সমতা সার্বভৌমত্ব এবং অপরের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ সকল রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব কামনা করে। প্রেসিডেন্ট জিয়া অভিমত প্রকাশ করেন যে, জাতীয় স্বার্থ উন্নয়নে পররাষ্ট্র দফতরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। (৩ আগস্ট ’৭৭ দৈনিক ইত্তেফাক)
১৯৭৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মিসরীয় প্রেসিডেন্টের এক ভোজসভায় যোগ দেন। সেখানে তিনি অধিকৃত আরব ভূখন্ড থেকে ইসরাইল সৈন্য সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং ফিলিস্তিনি জনগণের নিজস্ব আবাসভূমি প্রতিষ্ঠাসহ তাদের সকল অধিকারের স্বীকৃতি প্রদানই মধ্যপ্রাচ্যে সুষ্ঠু ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ বলে উল্লেখ করেন। (দৈনিক ইত্তেফাক ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৭)
সেনা ও বিমান সদস্যদের বিদ্রোহ দমনঃ
১৯৭৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে কিছু সেনা সদস্য পেশাগত শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে। এই বিশৃঙ্খলার জের যাতে অন্য ক্যান্টনমেন্টগুলোতে এবং সাধারণ জনগণের মাঝে না পড়ে সেজন্য জিয়াউর রহমানের সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেন। এরপর ২ অক্টোবর ঢাকায় বিমান সেনাদের এক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থান দমনের পর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জাতির উদ্দেশ্যে এক বেতার ভাষণে বলেন, গত দুই বছর যাবত আমি ও আমার সরকার অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশের উন্নতির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দেশ ও জাতি বিশ্বের মানচিত্রে আজ স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত পৃথিবীর বিভিন্নরাষ্ট্র দিয়েছে অকুণ্ঠ সহযোগিতা এবং সম্মান।
দেশের এই ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্তে আমি অতি দুঃখের সাথে আপনাদের জানাচ্ছি যে, কিছু সংখ্যক বিপথগামী সৈন্য বেশ কিছুদিন যাবৎ স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর এইরূপ কিছু সংখ্যক সেনাবাহিনীর বিপথগামী লোক বিনা কারণে বগুড়ায় গোলযোগ সৃষ্টি করায় কিছু জানমালের ক্ষতি হয়। আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়ায় সেনাবাহিনীর দেশ প্রেমিক সদস্যরা এই পরিস্থিতিতে তাদের আয়ত্বে আনতে সক্ষম হয়। উল্লেখ্য যে, বিমান সেনাদের অভ্যুত্থানে বেশক’জন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা নিহত হন এবং বিমান বাহিনী অপরিমেয় ক্ষতির মুখে পড়ে। (দৈনিক ইত্তেফাক, ৩ অক্টোবর ১৯৭৭)
ক্যান্টনমেন্টে সেনা সদস্যদের বিশৃঙ্খলা দমনের পর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের রাজনীতিক, মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের সাথে পৃথক আলোচনা ও মতবিনিময় করেন। ১৯৭৭ সালের ১১ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক দলের অর্ধশতাধিক নেতার সাথে বঙ্গভবনে বৈঠক করেন। তাদের সাথে আলোচনায় তিনি বলেন, দেশর সমুদয় ভবিষ্যৎ রাজনীতি হতে হবে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক। দেশে কোন গোপন রাজনীতি চলবে না। বিদেশী নির্দেশে যারা কাজ করে তাদের দেশ ছাড়াতে হবে। আবার দাসত্ব-শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার জন্য আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করিনি।
কতিপয় লোক গণতন্ত্রের কথা বলেন কিন্তু যখনই আামরা তা চালু করতে চাই, তখনই তারা রক্তপাতের কথা বলেন, হিংসাত্মক কার্যকলাপের কথা বলেন, আমারাও ধীরে ধীরে প্রকাশ্য রাজনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এমনতর হুমকি থাকলে কিভাবে সেদিকে অগ্রসর হতে পারি।
১২ অক্টোবর বিভিন্ন জেলার ৬১ মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডারের সাথে তিনি মতবিনিময় করেন। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রাখার জন্য নিরলস কাজ করে যাওয়া এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে নিজ নিজ এলাকায় জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার পরামর্শ দেন তিনি। উৎপাদন বাড়াতে নানামুখি পদক্ষেপ সংবলিত কৃষিনীতি নির্ধারণী পরিষদের বৈঠকে জিয়া বলেন, আমরা যদি ৭০ লাখ একর জমিতে তিনটি ফসল, এক কোটি একর জমিতে দুটি ফসল এবং নিচু এলাকার ৫০ লাখ একর জমিতে একটি ফসল ফলাতে পারি তা হলে খাদ্য উৎপাদন যথেষ্ট বাড়ানো সম্ভব। উলশী-যদুনাথপুর ধরনের পানি সংরক্ষণ প্রকল্পের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন অনুরূপ বাড়ানো সম্ভব।
তিনি বলেন, দেশের চারশত যায়গায় উলশী-যদুনাথপুর ধরনের প্রকল্প গড়ে তোলা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে অতিরিক্ত ৮০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করা যেতে পারে। আমারা যদি পানি সংরক্ষণ প্রকল্পগুলি বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হব না, একটি খাদ্য রফতানিকারক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারব। (১৭ অক্টোবর ’৭৭ দৈনিক ইত্তেফাক)
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের এসব দিক নির্দেশনা জাতিকে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
ভারত সফরঃ
১৯৭৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর জিয়াউর রহমান ফারাক্কা চুক্তি স্বাক্ষরকালে সমঝোতা ও সহযোগিতা মনোভাব অক্ষুন্ন রাখতে ভারতের প্রতি আহবান জানান। ভারতে দুদিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় সফর উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সম্মানে ভারতীয় প্রেসিডেন্ট আয়োজিত ভোজসভায় তিনি এ আহ্বান জানান। এছাড়া এই সফরে ২০ ডিসেম্বর এক যুক্ত ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। ঘোষনায় বাংলাদেশ-ভারত সমতা সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং একে অপরের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার ভিত্তিতে উভয় দেশের মধ্যে সস্পর্ক উন্নয়ন ও জোরদার করতে দৃঢ় সংকল্পের কথা উল্লেখ করেন। (দৈনিক আজাদ, ২০ ও ২১ ডিসেম্বর ১৯৭৭)
প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদের ওপর গুরুত্বারোপঃ
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান ও মজুদ নিরূপন করতে একটি মাস্টার প্লান তৈরি করেছিলেন। দেশে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে গ্যাস লাইনের সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন তিনি। যথাযথ অনুসন্ধানের মাধ্যমে গ্যাসের খনি আবিস্কার, গ্যাস উত্তোলন এবং সরবরাহ করতে তিনি একাধিক উদ্যোগ নেন। বিশেষ করে শিল্পকারখানায় প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহের বিষয়টি তিনি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছিলেন। ১৯৭৮ সালের ১ জানুয়ারি সিলেটে তিতাস গ্যাস সরবরাহের উদ্বোধনকালে জিয়াউর রহমান বলেন, দেশে আবিষ্কৃত ৯টি গ্যাস খনিতে এ পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ কোটি ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে। এর সুষ্ঠু ব্যবহারের পাশাপাশি নতুন নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কারের চেষ্টা করছে সরকার । প্রকৃতিক গ্যাসকে যাথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে তেল ও কয়লার উপর অর্থ ব্যয় কমিয়ে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমাতে হবে। (দৈনিক বাংলা, ২ জনু, ১৯৭৮)
তোষামোদী বিমুখ জিয়াঃ
প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে গিয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনতেন। তাদের কাছ থেকেই সমাধানের পরামর্শ নিতেন। সরকার বা প্রেসিডেন্টের প্রশংসায় যারা ব্যস্ত থাকতেন, জিয়াউর রহমান তাদের পছন্দ করতেন না। এমনকি দেশে বিভিন্ন স্থানে মতবিনিময় কিংবা জনসভায় বক্তারা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে নানা রকম প্রশংসামূলক অভিধা দিয়ে তোষামোদ শুরু করলে তিনি তাদের বন্ধ করে দিতেন। তোষামোদী নেতা কর্মীদের কাছ থেকে মাইক কেড়ে নেয়ার মত উদাহরণও রেখে গেছেন জাতীয়তাবাদী রাজনীতির এই প্রাণপুরুষ। ১৯৭৮ সালের ৮ জানুয়ারি তিনি সন্দ্বীপ থানায় ডাক বাংলোতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জিয়াউর রহমানকে নানা অভিদায় ভূষিত করে শুভেচ্ছা বক্তব্য দিতে থাকলে তিনি দাঁড়িয়ে বক্তব্য থামিয়ে দেন। জিয়া বলেন, ‘অলংকরণ ও অভিধা দিয়ে জনগণের পেট ভরবে না। তাই জনগণের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে হবে।’ (১২ জুন ১৯৭৮, দৈনিক বাংলা)
কমনওয়েলথ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট জিয়াঃ
বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সামনে এগিয়ে নিতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্ব নেতৃত্বকে বারবার তাগাদা দিতেন। ১৯৭৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কনওয়েলথ সম্মেলনের মূল অধিবেশনে তিনি বলেন, ‘বৃহত্তর সক্রিয় সহযোগিতার মাধ্যমে নতুন ও ন্যায় সংগত এক বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এজন্য একক ও যৌথ নির্ভরতা অর্জনে উন্নয়শীল দেশগুলোর ক্ষমতা বাড়াতে হবে’। এলক্ষ্যে তিনি আঞ্চলিক দেশগুলোকে ৬ দফা উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব দেন। (১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮, দৈনিক বাংলা)
জাতীয়তাবাদী দল (জাগদল) গঠনঃ
১৯৭৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্রী দল (জাগদল) সরকারি অনুমোদন পায়। রাজনৈতিক দলবিবিধ (পিপিআর) ১৯৭৮ মোতাবেক এ নয়া দলের অনুমোদনের কথা ঢাকা পৌরসভা চেয়ারম্যান আবুল হাসনাতকে চিঠির মাধ্যমে ২২ ফেব্রুয়ারি জানানো হয়।
বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে আহ্বায়ক করে জাগদলের ১৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ২২ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হয়। আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা ছিলেন- প্রফেসর সৈয়দ আলী আহাসান, আব্দুল মোমেন খান, শামসুল আলম চৌধুরী, ক্যাপ্টেন অব. নুরুল হক, এনায়েত উল্লাহ খান, মওদুদ আহমদ, জাকারিয়া চৌধুরী, ড. এম আর খান, সাইফুর রহমান, জামাল উদ্দিন আহমদ, আবুল হাসনাত, এম এ হক, ক্যাপ্টেন (অব.) সুজাত আলী, আলহাজ্ব এম এ সরকার ও আবুল কাশেম। (৩১ মার্চ ১৯৭৮, দৈনিক বাংলা)
জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দলে যোগদানঃ
১৯৭৮ সালের ৯ এপ্রিল সালে জিয়াউর রহমান প্রথম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন যে তিনি রাজনৈতিক দলে যোগদান করবেন এবং ডিসেম্বরের নির্বাচনে প্রার্থী হবেন।
২ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে চেয়ারম্যান করে ৬টি দলের সমন্বয়ে ‘জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট’ গঠন করা হয়। যে সকল রাজনৈতিক দল ফ্রন্ট গঠন করে, সেগুলো হলো- জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী), ইউনাইটেড পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ তফশিলি জাতীয় ফেডারেশন। জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের ৬টি অঙ্গ দলের এক বৈঠকে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে জিয়াউর রহমানকে মনোনয়ন দেয়া হয়। (৩ মে ১৯৭৮ দৈনিক ইত্তেফাক)
৮ মে সালে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক ছাত্রদলের ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয় আহমেদ মির্জা খবিরকে। ১৯৭৮ সালের ২৯ মে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক মৎস্যজীবী দলকে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে অনুমোদন করা হয়।
১৯৭৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনঃ
দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বচনী অনুচ্ছেদ নং ১১৮ হতে ১২৬ অনুযায়ী ১৯৭৮ সালের ৩ জুন প্রাপ্তবয়স্কদের প্রত্যক্ষ সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পন্ন করেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৭৮ সালে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন অতীব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষ্য বহন করছে। এতে বহুদলীয় রাজনীতির ভিত্তিতেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রায় সকল রাজনৈতিক দলই এ নির্বাচনে অংশ নেয়। রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মোট ১০ জন প্রার্থী পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তার মধ্যে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী), ইউনাইটেড পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, লেবার পার্টি, তফসীল ফেডারেশন- এ ছয়টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন মেজর জেনারল জিয়াউর রহমান। অন্যদিকে তাঁর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন গণতান্ত্রিক ঐক্যজোটের মনোনীত প্রার্থী জেনারেল (অব.) এম এ জি ওসমানী। আওয়ামী লীগ, জাতীয় জনতা পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি মোজাফফর), পিপলস পার্টি, গণআজাদী লীগ ও নিষিদ্ধ কমিউনিষ্ট পার্টির নেতাদের সমন্বয়ে গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট গঠিত হয়েছিল। অন্যদের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নির্দলীয় প্রার্থী ছিলেন।
নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট প্রার্থী জিয়াউর রহমান ১ কোটিরও বেশি ভোটের ব্যবধানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যজোট প্রার্থী জেনারেল (অব.) ওসমানীকে পরাজিত করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে মোট ৫৩ দশমিক ৫৪ ভাগ ভোটার ভোট দেন। এর মধ্যে ৭৩ দশমিক ৬৩ ভাগ ভোট পান জেনারেল জিয়াউর রহমান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এম এ জি ওসমানী পান ২১ দশমিক ৭০ ভাগ ভোট। (৫ জুন ১৯৭৮, দৈনিক ইত্তেফাক)
১৯৭৮ সালের ৫ জুন বিজয় উত্তর সাংবাদিক সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বলেন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে আরো সুসংহত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, এখন দলমত নির্বিশেষে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এবং জাতি গঠনে উদ্যোগী হতে হবে। আমাদের সকলের লক্ষ্য হতে হবে দেশ ও জাতিকে শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করা (৬ জুন ১৯৭৮, দৈনিক ইত্তেফাক)
১৯৭৮ সালের ১২ জুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিয়াউর রহমান বঙ্গভবনের দরবার হলে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। (১৩ জুন ১৯৭৮, দৈনিক ইত্তেফাক)
১৯৭৮ সালের ২৯ জুন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান উপদেষ্টা পরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে ২৮ সদস্যের একটি মন্ত্রী পরিষদ গঠন করেন। বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেন। মন্ত্রী পরিষদের সিনিয়র মন্ত্রী হিসেব শপথ নেন মশিউর রহমান যাদু মিয়া। মন্ত্রী পরিষদের অন্য সদ্যস্যরা হলেন,- ড. মির্জা নুরুল হুদা, শাহ আজিজুর রহমান, কাজী আনোয়ারুল হক, অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল হক, আজিজুল হক, এসএম শফিউল আজম, আবদুল মোমেন খান, মেজর জেনারেল (অব. মাজিদুল হক, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল হালিম চৌধুরী, বি এম আক্কাস, লে. কর্নেল (অব.) আবু সালেহ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, রসরাজ মন্ডল, মোহাম্মদ সাইফুর রহমান, জামাল উদ্দিন আহমেদ, ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কাজী জাফর আহমদ, শামসুল হুদা চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব.) নুরুল হক, এ জেড এম এনায়েতউল্লাহ খান, মওদুদ আহমদ, এস এ বারী এটি, ড. মিসেস আমিনা রহমান, মির্জা গোলাম হাফিজ, কে এম ওবায়দুর রহমান, আবদুল আলীম, হাবিবুল্লাহ খান ও আবদুর রহমান। প্রতিমন্ত্রী হন দু’জন ডা. অসিউদ্দীন মাহাতাব ও ডা. এম এ মতিন।
এই মন্ত্রী পরিষদেও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারণা বাস্তবায়ন করেন। মন্ত্রী পরিষদে ২৮ জন মন্ত্রীর মধ্যে ১৮ জন ছিলেন জাগদলের, ৪ জন ন্যাপ ভাসানীর, ২ জন ইউপিপির, ১ জন তপশিলী ফেডারেশনের। বিশেষত ৪ জন ছিলেন সাবেক সামরিক অফিসার, ৮ জন বেসামরিক অফিসার, ১ জন সাংবাদিক ও বাকীরা হলেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
৯ আগস্ট প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯ দফা বাস্তবায়নে সারাদেশে ১৮টি কমিটি গঠন করেন। প্রত্যেকটির কমিটি প্রধান হিসেবে একজন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
বাংলাদশে জাতীয়তাবদী দল (বিএনপি) গঠনঃ
জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের শরীক দলগুলির সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ নামে একটি নতুন রাজননৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এ পরিস্থিতিতে ২৮ আগস্ট বিচারপতি সাত্তার এক জরুরি আদেশে জাগদল ও এর সকল অঙ্গদলকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নামে একটি নতুন দল ঘোষণা করেন। ঢাকার রমনা গ্রীনে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউর রহমান ঘোষিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ঘোষণাপত্রে বলা হয়- বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ইস্পাত কঠিন গণঐক্য, জনগণ ভিত্তিক গণতন্ত্র ও রাজনীতি প্রতিষ্ঠা, ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত জনগণের অক্লান্ত প্রয়াসের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনৈতিক মুক্তি, আত্মনির্ভরশীলতা ও প্রগতি অর্জন এবং সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ ও আধিপত্যবাদের বিভীষিকা থেকে মুক্তির লক্ষ্যকে নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ গঠিত হয়েছে। এই চারটি লক্ষ্যকে ‘জনগণের মৌলিক দাবি’ বলে জনগণের ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়।
দলের কাঠামো ও গঠনতন্ত্রের বর্ণনায় তিনি জানান, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, শহর/পৌরসভা, জেলা, নগর ওয়ার্ড, নগর থানা, নগর পর্যায়ের দলের কাউন্সিল ও নির্বাহী কমিটি গঠিত হবে। দলের সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে জাতীয় কাউন্সিল ও জাতীয় নির্বাহী কমিটি। এছাড়া থাকবে ১১ জন সদস্যের জাতীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি, পার্লামেন্টারি বোর্ড ও দলীয় নির্বাচনী কলেজ। জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে একজন সভাপতি, পাঁচজন সহ-সভাপতি, একজন সেক্রেটারি জেনারল, একজন কোষাধ্যক্ষ, চারজন সাংগঠনিক সম্পাদক এবং একজন করে প্রচার, সমাজকল্যাণ, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, দফতর, যুব বিষয়ক, মহিলা বিষয়ক, ছাত্র বিষয়ক, শ্রম ও কৃষি ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক থাকবেন। এছাড়া বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক থাকবেন।
দলের ঘোষণাপত্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠনের মাধ্যমে সূচিত জাতীয় একতা ও সংহতির প্রক্রিয়াকে স্থায়ী ও সংঘবদ্ধ করা সময়ের দ্বিধাহীন দাবি ও জাতীয় জীবনের যুগসন্ধিক্ষণে জাগ্রত জনতার দাবিতে এ দল গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে জাতীর মিলন ও ঐক্যের দল বলে ঘোষণা করে এতে বলা হয় যে, এই দলের বৈপ্লবিক উদারতা ও বিশালতা সকল দেশপ্রেমিক মানুষকে এক অটল ঐক্যবাদী কাতারে শামিল করতে সক্ষম হবে। সক্ষম হবে জাতীয় পর্যায়ে স্থিতিশীলতা, সার্বিক উন্নতি ও প্রগতি আনয়ন করতে।
ঘোষণাপত্রে স্থিতিশীল গনতন্ত্রের রুপরেখায় প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকার নির্বাচিত ও সার্বভৌম পার্লামেন্টের প্রতি দলের আস্থা জ্ঞাপন করা হয়। এতে দেশের শতকরা ৯০ জন অধিবাসী মধ্যবিত্ত গ্রামের সার্বিক উন্নয়নের প্রতি সকল পর্যায়ে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে ভূমি ব্যবস্থা ও প্রশাসনকে ন্যায় বিচার ভিত্তিক, আধুনিক ও সুবিন্যস্ত করার অঙ্গিকার করা হয়। গণমুখী কৃষি নীতি ও কার্যক্রম প্রণয়ন, সমবায়ের ভিত্তিতে জাতীয় উন্নয়ন, সৃজনশীল উৎপাদনমুখী ও গণতান্ত্রিক শ্রমনীতি প্রণয়ন, গণমুখী জীবননির্ভর কার্যক্রম প্রণয়ন, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে সুনিশ্চিত করতে দেশরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার, মুক্তিযোদ্ধাদের সৃজনশীল, গঠনমূলক ও উৎপাদানমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, বাংলাভাষা, সাহিত্যের সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও প্রসার, শাসনতন্ত্রের জীবননির্ভর ও বাস্তবমুখী রুপ সংরক্ষণ ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি নিশ্চিতকরণে, সামাজিক ও বৈষম্য দুরিকরণ, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার সুদৃঢ় অঙ্গীকার করা হয় ঘোষণাপত্রে। (২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৮, দৈনিক বাংলা)
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে আহ্বায়ক করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ৭৬ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে যারা ছিলেন:
আহ্বায়ক : মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান
সদস্য: ১. বিচারপতি আবদুস সাত্তার, ২. মশিউর জাদু মিয়া, ৩. মোহাম্মদ উল্লাহ ৪. শাহ আজিজুর রহমান ৫. ক্যাপ্টেন (অব.) হালীম চৌধুরী, ৬. রসরাজ মন্ডল ৭. আবদুল মোমেন খান ৮. জামাল উদ্দিন ৯. ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১০. মির্জা গোলাম হাফিজ ১১. ক্যাপ্টেন (অব.) নুরুল হক ১২. মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ১৩. কে এম ওবায়দুর রহমান ১৪. মওদুদ আহমেদ ১৫. শামসুর হুদা চৌধুরী ১৬. এ জেড এম এনায়েতউল্লাহ খান ১৭. এস এ বারী এটি ১৮. ড. আমিনা রহমান ১৯. আবদুর রহমান ২০ ডা. এম এ মতিন ২১. আবদুল হালিম ২২. ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত ২৩. আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ২৪. নুর মোহামদ খান ২৫ আবদুল করিম ২৬. শামসুল বারী, ২৭ মজিবুর রহমান ২৮. ডা. ফরিদুর হুদা ২৯. শেখ আলী আশরাফ ৩০. আবদুর রহমান বিশ্বাস ৩১. ব্যারিস্টার আবদুল হক ৩২. ইমরান আলী সরকার ৩৩. দেওয়ান সিরাজুর হক ৩৪. এমদাদুর রহমান ৩৫. অ্যাডভোকেট আফসার উদ্দীন ৩৬. কবির চৌধুরী ৩৭. ডা. এম আর খান, ৩৮. ক্যাপ্টেন (অব.) সুজাত আলী ৩৯. তুষার কান্তি বাড়ৈ ৪০. সুনীল গুপ্ত ৪১. রেজাউল বারী ডিনা ৪২. আনিসুর রহমান
চলবে…………………………………