ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারফ রাজু
বিএনপি সরকারের পথচলাঃ
জনগনের ভোটে নির্বাচিত একটি সরকারের যে দায়িত্ব, জিয়াউর রহমান সেভাবেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে নানামুখি পদক্ষেপ নেন। বিশেষ করে উন্নয়ন কার্যক্রমে জনগণকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেন তিনি। দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি তাঁর নির্দেশনা ছিল জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও চিন্তাদর্শনকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিটি এলাকায় দল ও সরকারের দর্শনের আহ্বান পৌঁছিয়ে দিতে হবে। ১৯৭৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বলেন, পার্টির সিদ্ধান্তই হবে সরকারি কর্মসূচির দিকদর্শন। বিএনপির প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হচ্ছে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনা। (১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৮, দৈনিক ইত্তেফাক)
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনকালে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার নিরলস প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বিশ্বের বিভিন্ন পত্রিকা। ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনালের সুজান গ্রিন ঢাকা হতে প্রেরিত এক ডেসপাচে লিখেছেন, সাম্যের প্রতিক ও সৎলোক রূপে ব্যাপকভাবে গন্য জিয়াউর রহমান স্বনির্ভর সংস্কার কর্মসূচি শুরু করে বাংলাদেশের ভিক্ষার ঝুড়ি ভাঙ্গার প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
মালয়েশিয় দৈনিক ‘বিজনেস টাইমস’-এ প্রকাশিত এই মহিলার ডেসপাচে বলা হয়েছে যে, ‘অতীতে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে পরিচিত করেছিল যে মহাপ্লাবী সমস্যাগুলো প্রেসিডেন্ট কার্যত এগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।’ (৪ নভেম্বর, ১৯৭৮, দৈনিক ইত্তেফাক)
বাকশালীদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতা প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সাথে সহযোগিতা করার জন্য অন্য সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানান। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির এক বিশেষ সভায় জিয়া বলেন, চিহ্নিত বাকশালীদের আসল উদ্দেশ্য জনগণ অনুধাবন করতে পেরেছে। এরা মিছিলের নামে সম্পদের ক্ষতি সাধন করছে। অগণতান্ত্রিক ও উচ্ছৃঙ্খল কার্যকলাপ করেই যাচ্ছে। এ মুহূর্তে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে আমাদের সাথে আসতে হবে। কারণ বাকশালীরা দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে চায়। (৯ জানুয়ারি, ১৯৮০, দৈনিক বাংলা)
১৯৮০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির রিসার্চ কাউন্সিল সেমিনারে জিয়া বলেন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে কারো কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকার অবকাশ নেই। ’৭৭ এর গণভোট ’৭৮ এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, ’৭৯ সালের পর্লামেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ গ্রহণ করেছে। ’৭৬ সালে শাসনতন্ত্র সংশোধনের পর সবকটি নির্বাচনেই জনগণের সামনে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদদের রাজনীতি উপস্থাপন করা হয়েছে। (৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০, দৈনিক বাংলা)
১৯৮০ সালের ৪ আগস্ট বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, যুবকরাই হচ্ছে আমাদের জাতীয় চিন্তা-চেতনা, স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বের অগ্রদূত। তিনি বলেন, যুবদলই হচ্ছে বিএনিপর আশা ভরসা। আমরা চাই আমাদের যুব অঙ্গদল কেবল শহর কেন্দ্রিক না হয়ে গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে যাক। তিনি ৬৮ হাজার গ্রামে যুবদলের শাখা গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানান। (৫ আগস্ট, ১৯৮০, দৈনিক বাংলা)
এই সময় নিউইয়র্ক টাইমেসের এক সংখ্যায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং স্বনির্ভরতা অর্জন এবং উৎপাদন দ্বিগুণ করার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অক্লান্ত প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়। কাজের জন্য জনগণকে সংগঠিত ও অনুপ্রাণিত করতে প্রেসিডেন্ট জিয়া প্রায়ই গ্রামে-গঞ্জে সফর করেন পত্রিকায় তা বিশেষভাবে উল্লেখ কর হয়। জনগণের সাথে সংযোগ রক্ষায় বাংলাদেশী নেতা শিরোনামে মাইকেল টি ক্যাফম্যানের এক রিপোর্টে গ্রাম-অঞ্চলে সপ্তাহে তিন-চারবার সফরের সময় প্রেসিডেন্টের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিবরণ দেয়া হয়।
১৯৮০ সালের ১৬ নভেম্বর মরহুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জিয়াউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং এর সার্বভৌমত্ব রক্ষায় মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর অসামান্য অবদান জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। উপ-মহাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের এ উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক সুদীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে দেশপ্রেম ও দেশ সেবার যে শাশ্বত দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা বিশ্বে বিরল। (১৭ নভেম্বর ১৯৮০, দৈনিক বাংলা)
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎঃ
১৯৮১ সালের ২৯ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দুদিনের সফরে চট্টগ্রাম যান। ৩০ মে ভোরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সামরিক বাহিনীর কিছু সংখ্যক বিপথগামী অফিসার প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেন। পরের দিন দৈনিক বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ‘সরকার গভীর দুঃখের সাথে ঘোষণা করছে যে, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম ৩০ মে শনিবার ভোরে চট্টগ্রামে কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতকারীর হাতে নিহত হয়েছেন। প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা রক্ষী ও অপর কয়েকজন সফরসঙ্গীও এই মর্মান্তিক ঘটনায় নিহত হন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় নিহত ব্যক্তিদের প্রকৃত সংখ্যা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে সামগ্রিক তথ্য জানা যায়নি’।
এই শাহাদাৎ জনতাকে বেদনাবিধুর করে তোলে। এই শাহাদাত রাষ্ট্রযন্ত্রকে একরকম বিকল করে দেয়। এই শাহাদাত গণসংগঠন বিএনপিকে স্থবির করে তোলে। প্রাথমিকভাবে জিয়ার যথার্থ উত্তরাধিকারী সহধর্মিনী খালেদা জিয়াকে তার উত্তরাধিকারী ভাবাহলেও শোক বিহ্বল খালেদা জিয়াকে দিয়ে তা সম্ভব ছিল না। উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে প্রথমত রাষ্ট্র এবং পরবর্তীতে দলের কান্ডারী নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু দুর্বল ব্যক্তিত্বের কারণে বৃদ্ধ প্রেসিডেন্ট দৃশ্যত সেনাবাহিনী প্রধানের ক্রীড়ানক হয়ে পড়েন। যখন কঠোর সিদ্ধান্ত নিলেন অভ্যন্তরীন বিশ্বাসঘাতক সে প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দেন। কৃত্রিম বিশৃংখলা, দুর্নীতির ডামাডোল এবং সন্ত্রাসের মহড়া দিয়ে অবশেষে সেনাবাহিনী প্রধান সেনা অভ্যুত্থান ঘটনা। মাত্র তিন মাস আগে নির্বাচিত একটি সরকারকে অযোগ্যতা, দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের কলঙ্কতিলক ধারণ করে অবশেষে বিদায় নিতে হয়। জাতি ষড়যন্ত্রের গভীর নিগড়ে নিপতিত হয়। ‘অবশেষে বিশ্বাসঘাতকরা’ এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন, ক্ষমতাকেন্ত্রিক রাজনীতির ধারক ও বাহকরা সুবিধাবাদী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কতিপয় ত্যাগী নিঃস্বার্থ নেতাকর্মী তোপের মুখে পড়েও সংগঠনকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। বিচারপতি সাত্তারের নেতৃত্ব মূলত বিএনপিকে পিছিয়ে দেয়। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিচারপতি সাত্তার যেমন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। বিএনপিকে ষড়যন্ত্র এবং নিষ্ক্রিয়তা থেকে রক্ষার জন্য সাধারণ মানুষের সুসুপ্ত ইচ্ছা, কর্মীদের দাবি এবং কিছু শীর্ষ নেতাদের উদ্যোগের ফলে বেগম খালেদা জিয়া অবশেষে বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণে সম্মত হন।
রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার আগমনঃ
বেগম খালেদা জিয়া ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এদিনই তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদ লাভ করেন। তাঁর এ সিদ্ধান্তে বিএনপিতে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে যারা জিয়াকে ভালবাসতেন, তাদের মধ্যে। কিন্তু তাঁর এ সিদ্ধান্তে নাখোশ হলো কিছু কুচক্রী বিএনপি নেতা, যাদের সাথে তখন থেকেই গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন সেনাপতি এরশাদ। তারা দেখলো পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া নেতৃত্বে এলে সুবিধা হবে না। ফলে বেগম খালেদা জিয়া যাতে নেতৃত্বে না আসতে পারেন শুরু হলো গোপন ষড়যন্ত্র।
এদিকে বিএনপি চেয়ারম্যান নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয় ১৯৮২ সালের ২১ জানুয়ারী। কে হবে চেয়ারম্যান? বিএনপির তরুণ নেতৃত্ব বেগম খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করলেন দলের চেয়ারম্যান পদে দাঁড়াতে। সেদিকে ক্ষমতাসীন নেতৃত্ব প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চায়। তরুণ নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে জিয়ার আদর্শ বিরোধিরা বিচারপতি সাত্তারকে ঘিরে রেখেছে। বিচারপতি সাত্তার চেয়ারম্যান হলে জিয়ার আদর্শের বিচ্যুতি ঘটবে। এ অবস্থায় তরুণ নেতৃত্বের দাবির মুখে বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশনে চেয়ারম্যান পদের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তাঁর পক্ষে ৫ জানুয়ারি রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়।
মনোনয়নপত্র প্রস্তাব করেন বিএনপির মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) থানা শাখার সভাপতি প্রবীণ নেতা শামসুল হক ও সমর্থক নগরকান্দা (ফরিদপুর) থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান মোল্লা। এদিকে বিচারপতি সাত্তারও চেয়ারম্যান পদের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর ফলে এক বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিচারপতি সাত্তার দুবার বেগম খালেদা জিয়ার বাসায় যান এবং দলের বিষয় নিয়ে আলাপ করেন।
বেগম খালেদা জিয়া তাঁকে দলের তরুণ নেতৃত্বের মনোভাবের কথা জানান। এসময় বিচারপতি সাত্তার বেগম খালেদা জিয়াকে দলের সহ – সভাপতির পদ এবং দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানান। কিন্তু বেগম জিয়া ব্যক্তিগত কারণে তা গ্রহণ করেননি। অবশেষে বিচারপতি সাত্তারের সাথে দীর্ঘ আলোচনার পর বেগম খালেদা জিয়া চেয়াম্যান পদ থেকে তার প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেন। ৬ আগষ্ট চূড়ান্ত বাছাইয়ের আগেই তিনি প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করেন। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিচারপতি সাত্তার দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
বেগম খালেদা জিয়া তাকে সমর্থনকারী নেতাদের জানান, দলের বৃহত্তর স্বার্থে এবং বিচারপতি সাত্তারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে তিনি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করছেন। বিচারপতি সাত্তার তাকে কথা দিয়েছেন, দলকে তিনি ঐক্যবদ্ধ রাখবেন। তিনি আরও বলেন, দল বা কোন পদের প্রতি তার কোন লোভ নেই। তিনি চান, বিএনপি যেন বিভক্ত না হয়। তার এই সিদ্ধান্ত তখনই প্রশংসিত হয়েছিল ১৯৮২ সালের ৮ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া সংবাদপত্রে এক দীর্ঘ বিবৃতির মাধ্যমে রাজনীতিতে পদার্পনে তার সিদ্ধান্তের কথা দেশবাসীকে জানান।
বিবৃতিটি হলো: প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি শোষণহীন, দুর্নীতিমুক্ত আত্মনির্ভরশীল দেশ গঠনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেছিলেন। এই দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করার জন্য তিনি গত কয়েক বছর ধরে কী অমানুষিক পরিশ্রম করেছেন তা আপনারা জানেন। বিগত ৩০ মে ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে শাহাদৎ বরণের পূর্ব মুহূর্তেও তার এই প্রাণপ্রিয় দলের সাংগঠনিক কাজে তিনি নিয়োজিত ছিলেন।
বিগত কিছুকাল যাবত আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কার্যক্রম গভীরভাবে অবলোকন করে আসছি। আমি অত্যন্ত দু:খের সাথে লক্ষ্য করছি যে, দলের ভেতর বিভিন্ন বিষয়ে ভূল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে, যা দলীয় ঐক্য ও সংহতি বিপন্ন করতে পারে। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এবং দলীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষার্থে আমাকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন মহল রাজনীতিতে অংশ নিয়ে বিএনপির দায়িত্ব ভার গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। এমতাবস্থায় সব দিক বিবেচনা করে দলের বৃহত্তর স্বার্থে আমি বিএনপিতে যোগ দিয়েছি এবং দলের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছি। আমার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল, শহীদ জিয়ার গড়া এই দলের ঐক্য এবং সংহতি বজায় রাখা। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নি:স্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়া। এরই মধ্যে মহামান্য প্রেসিডেন্ট সাত্তারের সাথে দেশ ও দলের বিষয়ে কিছু আলোচনা হয়েছে। তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া প্রণীত ১৯ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন এবং বিএনপির ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। তার অনুরোধ ও এই আশ্বাসে আমি চেয়ারম্যান প্রার্থী পদ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করছি। দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি আমার আবেদন, তারা যেন নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে নি:স্বার্থভাবে শহীদ জিয়ার অনুসৃত কর্মধারা ও আদর্শের ভিত্তিতে শোষণহীন দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও ১৯ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। আমি তাদের সাথে সবসময় থাকবো।
দেশের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসাবে এবং দলের চেয়ারম্যান হিসাবে বিচারপতি সাত্তার তার দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করে যাচ্ছেন। বেগম খালেদা জিয়া নানা বিষয়ে পরোক্ষাভাবে তাকে সহায়তা করছেন। এ অবস্থায় সেনা ছাউনিতে ঘাপটি মেরে বসে থাকা কুচক্রি সেনা প্রধান এরশাদ দেখলো বেশীদিন এভাবে চলতে থাকলে তার অভিলাষ চরিতার্থ করা যাবে না। এতদিন বিচক্ষণতার সঙ্গে দাবার গুটি চাল দিয়ে একটির পর একটি ঘটনা যে তিনি ঘটিয়েছেন, তার মুখোশ উম্মোচিত হয়ে যাবে।
তাই আর বিলম্ব নয়, ক্ষমতায় সেনাবাহিনীর অংশীদারিত্ব চেয়ে তিনি একটি বিবৃতি দিলেন। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন বিতর্ক হলো। ইতোমধ্যেই পরিকল্পিতভাবে আইন শৃঙ্খলাজনিত কিছু ঘটনা ঘটানো হলো। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এল সেই কলঙ্কিত দিন। জেনারেল এরশাদ রাতের অন্ধকারে বঙ্গভবনে ঢুকে বন্দুকের নলের মুখে বিচারপতি সাত্তারের কাছ থেকে কেড়ে নিল ক্ষমতা। বন্দুকের মুখে তাকে দিয়ে দেয়ানো হলো জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশন-রেডিওতে ভাষণ। বলানো হলো দুর্নীতি এতোই ব্যাপক হয়েছে যে, তার পক্ষে দেশ পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। বৃহত্তর স্বার্থেই সেনাবাহিনীকে ডাকা হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনা ছিল নিতান্তই এরশাদের ভাঁওতাবাজি। সেদিন বার্ধক্যের পরিণতিতে বিচারপতি সাত্তারের পক্ষে কিছুই করার ছিল না।
তবে বিচারপতি সাত্তার এক বিবৃতির মাধ্যমে জাতির সামনে তুলে ধরেন কিভাবে এরশাদ তাঁর কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়। বিবৃতিতে বিচারপতি সাত্তার বলেন, ‘দেশের জনসাধারণের ভোটে আমি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আমি দায়িত্ব পেয়েছিলাম। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গ্রগতিশীল অর্থনৈতিক কাঠামোতে এবং সুস্থ্য রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমরা সবাই যখন সরকারি দায়িত্বে ব্যস্ত ছিলাম, সেই মৃহূর্তে রাতের অন্ধকারে আচমকা অস্ত্রের মুখে আমার কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয় এরশাদ। বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনায় আমার সরকারের মাত্র চার মাস হয়েছিল, আজ স্পষ্টভাবে বলছি, অবৈধ সরকার ও তার তল্পিবাহকরা জনগণকে ধোকা দেয়ার জন্যে এবং তাদের কুকীর্তি ঢাকা দেয়ার জন্য মিথ্যার পর মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করেছে। জাতির সামনে আমি যে রেডিও-টিভিতে ভাষণ দিয়েছিলাম, সেটি আমার ছিল না। অস্ত্রের মুখে এরশাদ আমাকে দিয়ে বলিয়েছে, জাতি আজ মহাপরীক্ষায় অবতীর্ণ। একদিকে বাক-স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকারের প্রশ্ন, অন্যদিকে এরশাদের স্বৈরাচারী সমর্থনহীন অবৈধ সরকার স্থায়ী করার প্রচেষ্টা। আমি জনগণের কাছে স্পষ্ট ভাষায় বরতে চাই, আমি ও আমার সহকর্মীরা যখন দেশকে সুষ্ঠভাবে দেশ পরিচালনা করছিলাম, তখন কোন কারণ ছাড়াই গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এরশাদ শাহী ক্ষমতা হরণ করে। আমি এও বলতে চাই-নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা সত্য-মিথ্যার বিচার করবেন”।
১৯৮২ সালের ১৬ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে খালেদা জিয়া স্বাক্ষরিত শত শত কার্ড বিতরণ করা হয়। এ বছরের ৩০ মে শহীদ জিয়ার প্রথম শাহাদাৎবার্ষিকীতে মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনে উপস্থিত হাজার হাজার নেতকর্মীর প্রতি খালেদা জিয়া তাঁর তাৎক্ষণিক ভাষণে ‘শোককে শক্তিতে’ পরিণত করার আহ্বান জানান। শহীদ জিয়ার আদর্শের অনুসারী সকল নেতা-কর্মীদের তিনি শপথ বাক্য পাঠ করান। এর পরপরই পুলিশ সমাবেশে লাঠিচার্জ করে এবং কতিপয় ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করে। বিকেলে খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাসভবনে অনুষ্ঠিতব্য মিলাদ মাহফিলে আসতে নেতা-কর্মীদের বাধা দেয়া হয়। এদিকে বিভিন্ন সেনানিবাসে গ্যারিসন মসজিদগুলোতে কর্তৃপক্ষের আদেশ নিষেধের অপেক্ষা না করে সাধারণ সৈনিকরা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে।
মজিদ খান শিক্ষানীতি বিরোধী আন্দোলনঃ
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে গণতন্ত্র এদেশে চালু করেছিলেন, এরশাদের ক্ষমতা দখল ও সামরিক শাসন জারির ফলে সেই বহুদলীয় গণতন্ত্র আবার নির্বাসিত হলো। গণতন্ত্র পিষ্ট হলো বুটের তলায়। ক্ষমতা কুক্ষিগত করেই এরশাদ ক্ষান্ত হলেন না। বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য রাজনীতিকে কলুষিত করার জন্য শুরু করলেন গভীর ষড়যন্ত্র। দেশে সৃষ্টি হয় এক গভীর সঙ্কট। জনগণের নির্বাচিত সংসদ বাতিল ও সংবিধান স্থগিত করে সামরিক শাসনের আবরণে সৃষ্টি করা হয় রাজনৈতিক অচলাবস্থা। রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। হুলিয়া জারি করে নির্যাতন, জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করে নিপীড়নের স্ট্রিম রোলার চালানো হয়। হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। সামরিক সরকারের একমাত্র টার্গেটে পরিণত হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। শুধু বিএনপিরই তিন হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সামরিক আদালতে প্রহসনমূলক বিচার করা হলো। আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ ছিল না। সামরিক শাসন জারির পর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও তার দল বিএনপি গৃহীত সব বৈপ্লবিক কর্মসূচি স্থগিত করল এরশাদ, অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বৃদ্ধি ও অপকিল্পিত তৎপরতার ফলে জনজীবনে নেমে এল অসহনীয় দুর্ভোগ। ১৯৮২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ড. আবদুল মজিদ কান মার্শাল ল’স্টাডি কমিটির সুপারিশের আলোকে নতুন শিক্ষানীতি ঘোষণা করেন। এ শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক পর্যায় থেকে আরবি ও ইংরেজি বাধ্যতামূলক করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। একই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে রাজনীতিকে দূরে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। এ শিক্ষনীতির বিরোধিতা করে বিএনপি। নীতিনির্ধারক মহলের সম্মতিতে আন্দোলনের কৌশল হিসেবে ছাত্রদলের নেতৃত্বে আন্দোলনের সূচনা করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল অবিলম্বে একটি শক্তিশালী বিবৃতি প্রদান করে। অন্যান্য ছাত্র সংগঠনও অনুরূপ বিবৃতি প্রদান করে। দেশের বুদ্ধিজীবীরা শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে বিবৃতি প্রদান করেন। স্বৈরাচারী বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি হতে থাকে।
হাইকোর্ট বিকেন্দ্রীকরণ বিরোধী আন্দোলনঃ
ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যে সামরিক সরকার হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ করে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাংলাদেশ হাইকোর্ট ভেঙে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, যশোর ও বরিশালে বেঞ্চ স্থাপন করা হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, মামলার স্তুপে জমে থাকার কারণে বিচারে বিলম্ব ঘটে এবং মানুষের দুঃখ ও দুর্ভোগ বাড়ে। সুতরাং অপেক্ষমান মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করে। তারা একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করে আন্দোলনকে বেগবান করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিএনপি শীর্ষ নেতৃত্ব আইনজীবীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এ আন্দোলনে যোগদান করেন। সরকার আন্দোলনকে কঠোরভাবে দমন করার সিদ্ধান্ত নেয়। শীর্ষস্থানীয় ১৩ জন আইনজীবীকে গ্রেফতার করা হয়। বাদানুবাদ, আন্দোলন এবং অবশেষে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে আপাতত আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে। কিন্তু ভবিষ্যৎ আন্দোলনের শক্ত বীজ রোপিত হয়।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূত্রপাত : স্বৈরশাসন বিরোধী প্রথম মিছিলঃ
এ দেশে ছাত্ররাই প্রতিটি আন্দোলনে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছে। এরশাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রাথমিক পর্যায়ে ছাত্র নেতারা এরশাদ বিরোধী একটি সমন্বিত এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য নিজেদের মধ্যে আলা আলোচনা ও পারিশার্শ্বিক প্রস্ততি গ্রহণ করে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, ১৯৮২ এর ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসে তারা প্রথম বারের মত রাজপথে নামে। এ সময় ফিলিস্তিনে ইসরাইলী বর্বরতা ছাত্রদল রাজপথে নামতে কৌশলগতভাবে সহায়ক হয়। বাংলাদেশে অধ্যয়নরত ফিলিস্তিনী ছাত্ররা বাংলাদেশের ছাত্রনেতাদের সাথে আলোচনাক্রমে যৌথ মিছিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ঠিক হয় যে পরদিন জুমআ তুল বিদা অর্থাৎ রমজান মাসের শেষ শুক্রবার জুমআর নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে প্রতিবাদ মিছিল করে মার্কিন দূতাবাসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হবে। ওই দিন ছাত্ররা নামায আাদয় করে মিছিল নিয়ে আদমজি কোর্টে অবস্থিত আমেরিকান সেন্টারের দিকে অগ্রসর হয়। মিছিলকারীরা মার্কিন ও ইসরাইল বিরোধী শ্লোগান দেয়। এরশাদের সামরিক আইনজারির পর এটাই ছিল প্রথম রাজপথে মিছিল। লোকজন হতচকিত হয়। প্রশাসন হতবাক হয়। গোয়েন্দারা হয়রান হয়ে পড়ে। মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্তির কথা ছিল। কিন্তু আকস্মিকভাবে মিছিলে পুলিশ হামলা করে। এরশাদ বিরোধী শ্লোগান উচ্চারণ করে ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
পরবর্তি শিক্ষাদিবস পালনের জন্য ছাত্রসমাজ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সামরিক শাসনে ৫ জনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি মিলাদ মাহফিল করতেও সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। ছাত্ররা একটি মধ্যবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তারা একটি মৌন মিছিল করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। তাও আবার ক্যাম্পাসেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ এসব জেনে হল প্রাধ্যক্ষদের ডেকে পাঠায়। তারা প্রাধ্যক্ষদের প্রতি ন্যূনতম সৌজন্য প্রকাশ না করে আদেশের ভঙ্গিতে কথা বলে। এতে প্রকারান্তরে আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ছাত্ররা বিনীতভাবে শিক্ষা দিবস পালনে অনড় থাকে। মৌন মিছিলের কর্মসূচি অপরিবর্তিত থাকে। ১৪টি ছাত্র সংগঠন কলাভবনে মিছিল করে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সম্মুখ ব্যানারে লেখাছিল: এরশাদের পতন চাই। এরশাদের পতন চেয়ে এটিই সম্ভবত প্রথম সাহসী উচ্চারণের স্বাক্ষর। শিক্ষাদিবসের পূর্বদিনের এসব কর্মসূচি শেষে ছাত্ররা শিক্ষা দিবসে (১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮২) শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পনের সিদ্ধান্ত নেয়। পুলিশ বাধা প্রদান করে। একজনকে গ্রেফতার করে। ছাত্ররা জগন্নাথ হলের শহীদ মিনারে পুষ্প অর্পন করে। এসব সামান্য সামান্য ঘটনা অসামান্যভাবেই ছাত্রদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। ভবিষ্যতে ছাত্র আন্দোলনের জন্য এসব ছোট ছোট ঘটনা বড় অভিঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
স্বৈরশাসন বিরোধী দ্বিতীয় মিছিলঃ
১৯৮২ সালের ৭ নভেম্বর বেগম খালেদা জিয়া ছাত্রদল নেতকর্মীদের শপথ বাক্য পাঠ করান এবং সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। ওই সভা পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল পরের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে এক প্রতিবাদ মিছিল বের করে। জাসদ ছাত্রলীগও ৭ নভেম্বর উদযাপন উপলক্ষে পরের দিন অর্থাৎ ৮ নভেম্বরে (১৯৮২) ক্যাম্পাসে মিছিল করে। শান্তিপূর্ণ দুটো মিছিলেই পুলিশ হামলা করে। পুলিশের উস্কানিমূলক আচরনে ছাত্রসমাজ উত্তেজিত হয়ে উঠে। যেটি ছিল দলীয় বিষয় তা দল মত নির্বিশেষে যখন ছাত্রদের সমর্থন ধন্য হয়ে ওঠে। শুরু হয় সংঘর্ষ। রীতিমত খন্ড যুদ্ধ। কাঁদানে গ্যাস এবং গুলি সমগ্র ক্যাম্পাস কাঁপিয়ে তোলে। এ সময় শিক্ষক-লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। পুলিশ কলাভবন অভ্যন্তরে প্রবেশ করে নারকীয় অত্যাচার করে। ছাত্রীদের প্রতিও অমর্যাদাকর আচরণ করা হয়। সংঘর্ষ ক্যাম্পাসের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ সাংবাদকিদেরও নির্যাতন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি স্বৈরাচারী সরকারের এ নির্যাতনের কঠোর নিন্দা করে এবং নজিরবিহীন বলে অভিহিত করে। বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৮২ সালের ১৪ নভেম্বর খুলে দিলেও ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে। অপরাজয়ের বাংলার পাদদেশে ১৪ ছাত্র সংগঠন এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। এতে ডাকসু, বাকসু এবং অন্যান্য ছাত্র নেতারা বক্তব্য রাখেন।
-চলবে………………………………..