আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধন বিলে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া হচ্ছে না।
সংবিধান সংশোধন আইন পাস হলে সুপ্রিমকোর্টের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে, ন্যায়বিচারের পথ সমৃদ্ধ হবে, সুপ্রিমকোর্ট জনগণের কাছে আস্থাশীল হবে। এ জন্যই ’৭২’র সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে মাত্র। এ নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই।
বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির অষ্টম বৈঠক শেষে মিডিয়া সেন্টারে প্রেস বিফ্রিংয়ে একথা বলেন তিনি। রবিবার সংসদে উত্থাপিত বিচারপতিদের অপসারণ সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনা সংক্রান্ত ‘সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) বিল-২০১৪’ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। এ বিল নিয়ে মঙ্গলবারও বৈঠক করেছে সংসদীয় কমিটি।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আজ (বুধবার) কমিটি যাচাই-বাছাই করে বিল চূড়ান্ত করেছে। দু-একদিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, চলতি অধিবেশনেই বিলটি পাস করা হবে। এরপর ৯০ দিনের মধ্যে (তিন মাস) বিচারপতিদের অপসারণবিষয়ক আইন পাস করা হবে। বিচারপতিদের অভিযোগ তদন্তের জন্য গঠিত কমিটি কেমন হবে— আইনে সে বিষয়টি স্পষ্ট থাকবে। সে সময় বিশেজ্ঞদের ডাকা হবে। বিচারপতিদের অপসারণ তদন্তে কমিটি প্রসঙ্গে সুরঞ্জিত বলেন, এই কমিটিতে কারা থাকবে, সেটাই মিলিয়ন ডলার কমিটি। সেটা নিয়েই আলোচনা হবে। জুডিশিয়ারি থেকেও লোক থাকবে। সবাইকে নিয়েই কমিটি করা হবে।
সংবিধান সংশোধনের এই উদ্যোগের বিরোধিতায় ড. কামাল হোসেনকে আহ্বায়ক করে আইনজীবীদের ‘সর্বদলীয় কমিটি’ সম্পর্কে সাংবাদিকদের সুরঞ্জিত বলেন, যারা এটা করছেন, তারা বিভ্রান্তি থেকে কথা বলছেন। আশা করি, তাদের বিভ্রান্তি কেটে যাবে। ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামের প্রতি ইঙ্গিত করে তাদের সঙ্গে ’৭২-এর সংবিধান প্রণয়ন কমিটিতে থাকা সুরঞ্জিত বলেন, যারা বলছেন এই সংসদ অবৈধ, তাদের বলছি সংসদ মানেন না, কোর্টকে তো মানেন। সংসদ না মানলে তো কোর্টও মানেন না। তারা সংবিধান প্রণেতা। তাদের আমরা রেসপেক্ট করি। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, কোর্টকে কলুষিত করার সুযোগ দেয়া হবে না। বরং এটাকে আরও সমৃদ্ধ করা হবে। জবাবদিহি আরও স্বচ্ছ হবে।
ব্রিফিংয়ে সংসদীয় কমিটির সদস্য জিয়াউল হক মৃধা বলেন, জাতীয় পার্টি শুরুতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা বিলের বিরোধিতা করবে। কিন্তু আলাপ-আলোচনার পর দেখা গেছে, এই বিল নিয়ে বাইরে যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে, সেটা ঠিক না। বিল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিলটি সঠিক। স্বাধীন বিচার বিভাগের জন্য এই আইনের প্রয়োজন আছে। সুতরাং জাতীয় পার্টি বিলের বিরোধিতা করবে না।
কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। কমিটির সদস্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, তাজুল ইসলাম চৌধুরী, আবদুল মতিন খসরু, সাহারা খাতুন, শামসুল হক টুকু, আব্দুল মজিদ খান, তালুকদার মো. ইউনুস, অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউল হক মৃধা এবং সফুরা বেগম বৈঠকে অংশ নেন। এছাড়াও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হক উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ৭ সেপ্টেম্বর রবিবার সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল সংসদে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বিলের প্রস্তাবনায় ভুল থাকায় শেষ পর্যন্ত সংশোধিত আকারে বিলটি উত্থাপন করা হয়।