শেষ পর্বঃ
ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ
১৯৯১ :ঐতিহাসিক নির্বাচন এবং বিএনপির অভূতপূর্ব বিজয়ঃ
নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করে বেগম খালেদা জিয়া ২৬ ফেব্রুয়ারী বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এসেছিলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করতে। তার চেহারার মধ্যে ছিল ক্লান্তিকর ছাপ। ঘুম নেই, খাওয়া নেই। ঠিকভাবে গোসল নেই। দীর্ঘ দুইমাস তিনি সারা বাংলাদেশে নির্বাচনী প্রচারে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তার শরীরের স্বাভাবিক ওজন অর্ধেক হয়ে যায়। স্বাস্থ্যও যায় ভেঙে।
প্রেসক্লাবে আসার পর শত শত সাংবাদিক তাকে ঘিরে ধরেছিল। নির্বাচনের ঠিক আগ মুহুর্তে নির্বাচন সম্পর্কে তার ধারনা কি, জানার জন্য। ইতিমধ্যে শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনে তিনি দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়লাভ করবেন। সাংবাদিকদের তাই কৌতুহল ছিল বেগম খালেদা জিয়ার কি ভাবনা তা জানতে। কিন্তু বেগম জিয়া সাংবাদিকদের বললেন, দেখুন আমি সাংবাদিক সম্মেলন করতে আসিনি। শুধু আপনাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে এসেছি।
আসলে এ কয়দিন খুব ব্যস্ত ছিলাম। আজ ভাল লাগছে। তাছাড়া নির্বাচন সম্পর্কে আপনারাই তো ভাল জানেন। তারপরও একজন সাংবাদিক দাঁড়িয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করেন তার দল কয়টি আসনে বিজয়ী হতে পারে বলে তিনি আশা করছেন। এ প্রশ্নে তিনি হাসলেন। তাকে এ সময় মনে হয়েছে নিজের প্রতি তিনি খুবই কনফিডেন্ট। কয়টি আসনে তার দল বিজয়ী হবে বলে সে সম্পর্কে কোন সঠিক সংখ্যা না বলে তিনি বললেন, আগামীকাল সম্ভবত আপনারা একটা সারপ্রাইজ পাবেন। কি সারপ্রাইজ সেদিন কেউ তা বুঝতে পারলেন না। কারণ বিএনপির পক্ষ এবং বিপক্ষের প্রায় সব সাংবাদিকদেরই মোটামুটি একটা ধারণা জন্মেছিল যে, আসনের দিক থেকে আওয়ামী লীগই বেশী পাবে।
কিন্তু ২৭ ফেব্রুয়ারী সাংবাদিকরা আসলেই সারপ্রাইজ পেলেন, বেগম খালেদা জিয়ার দল নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হল। রাজধানী ঢাকা শহরে একটি আসনও আওয়ামী লীগ পেল না। শুধু রাজধানী নয়, ঢাকার আশপাশের সব আসনই বিএনপির দখলে এল। রাজধানীতে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার দুটি আসনেই ভরাডুবি হল। বেগম খালেদা জিয়া পাঁচটি আসনে দাঁড়িয়েছিলেন, পাঁচটিতেই বিপুল ভোটে বিজয়ী হলেন। আসলে দেশব্যাপী বিপুল জোয়ার নিজ চোখে দেখে তিনি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি বিজয়ী হবেন। তাই তিনি বলেছিলেন সেই সারপ্রাইজের কথা।
২৭ ফেব্রুয়ারী ’৯১ বেগম খালেদা জিয়ার জন্য এক অবিস্মরণীয় দিন। এদিনে তার নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এত তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের বিজয়ই প্রমাণিত হয়। তাছাড়া ২৭ ফেব্রুয়ারী হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন।
একটি নিরপেক্ষ তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ যেমনটা এবার দেখা গেছে, আগে তা দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠীর মধ্যে ১২ সদস্যের কমনওয়েলথ দল, ৩০ সদস্যের সার্ক পর্যবেক্ষক দল, ব্রিটিশ শ্রমিক দলীয় প্রাক্তন মন্ত্রী পিটার শো’র নেতৃত্বে ব্রিটিশ পালামেন্টের ৪ সদস্যের দল, ওয়াশিংটনের একটি দলসহ অন্তত ৫৭ জন বিদেশী পর্যবেক্ষক বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন।
তারা সবাই একবাক্যে বলেলেন, ওই নির্বাচন এত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে যে, উপমহাদেশের জন্য তা নতুন দৃষ্টান্ত। আসলে ৯ বছর স্থায়ী শাসনামলে কয়েকটি তথাকথিত নির্বাচনে দুর্নীতির অভিযোগ এতই ব্যাপক ছিল যে, যেসব কেলেংকারির অভিযোগ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এ নির্বাচন সম্পর্কে আগ্রহের সেটাই কারণ। নির্বাচনে দলের পক্ষে ভোট সংগ্রহের আশায় নেতা-নেত্রীরা দিবারাত্রী অসংখ্য নির্বাচনী সভায় ভাষণ দেন। এতে কণ্ঠস্বর অনেকেরই ভেঙে যায়।
নির্বাচনের দিন ভোটারদের কেন্দ্রে আগমন দেখে মনে হয়েছে এটাও বাংলাদেশের জাতীয় উৎসব। এত আনন্দ ঘন ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে যে, বাস্তবিকই অবাক হতে হয়েছেন। নারী-পুরুষ, তরুণ ও বৃদ্ধ ভোট কেন্দ্রে লম্বা লাইন ধরে সকাল থেকে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ছিলেন তবুও তারা ভোট না দিয়ে কেউ ফেরেননি।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ঢাকার বেতার স্টুডিওতে বিবিসির একটি পর্যালোচনা বৈঠক বসেছিল। বিবিসির সিরাজুর রহমান এটির পরিচালনা করে ছিলেন। এতে অংশ নিয়েছিলেন দিল্লির খ্যাতনামা পত্রিকার সম্পাদক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক নিখিল চক্রবর্তী, ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমদ ও প্রফেসর আনিসুজ্জামান। নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য প্রসঙ্গে সাংবাদিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ’৪৮ বছর ধরে রিপোর্ট করছি। ১৯৪৫ থেকে আজ অবধি ১১টি ইলেকশন কভারেজ করেছি রিপোর্টার হিসেবে। কোন ইলেকশন এত সুষ্ঠু হতে দেখেনি; এরকম জনসাধারনের পাটিসিপেশন। তারমধ্যে গোলমাল নেই, টেনশন নেই- এ আমি আগে দেখেনি।
ব্যারিস্টার ইশতিয়াক মন্তব্য করেন-২৭ফেব্রুয়ারী আমাদের জাতীয় জীবনের ঐতিহাসিক দিন। এত সুন্দর নির্বাচন হয়েছে যে, এ নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের মানুষ আত্মত্যাগ করেছে। প্রফেসর আনিসুজ্জামান বলেন, এ নির্বাচনে মানুষের আস্থা ফিরেছে। নির্বাচনের দিন নিজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ৯বছর পর মুক্ত পরিবেশে ভোট দিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ দিন পর মুক্ত পরিবেশে ভোট দিয়েছি। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ বলেন, ভোট দিতে পেরে খুশি হয়েছি।
এ অবিস্মরণীয় নির্বাচনে বিজয়ী হলেন বেগম খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপি। জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে বিএনপি ১৪৪টি এবং আওয়ামী লীগ ৮৪টি আসন লাভ করে। বিএনপির প্রতি জামায়াতের সমর্থন ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সংসদের সংরক্ষিত ৩০টি মহিলা আসনের মধ্যে ২৮টি বিএনপি ও ২টি জামায়াত লাভ করে। সংসদের বাকি আসনগুলো পায় অন্যান্য দল। নির্বাচনে খালেদা জিয়ার বিপুল বিজয় সম্পর্কে বিবিসির মন্তব্য হচ্ছে, জেনারেল এরশাদের স্বৈরতন্ত্রী সরকারের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির আপোসহীন আন্দোলনের বিশেষ করে তরুণ ভোটদাতাদের মনে বেশী রেখাপাত করেছিল।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনার ভূমিকা সেরকম ছিলনা। ’৭১-এর শিক্ষার উপর গুরুত্ব না দিয়ে মুজিব হত্যার দিকটাকে বড় করে তুলে ধরেছিলেন শেখ হাসিনা। বিবিসির মন্তব্যে আরও বলা হয়, যে মহিলাদের ভোট ব্যাপকভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে আনুকূল্য দেখিয়েছে।
নির্বাচনে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার বিজয়ের কারণ ছিল অনেকগুলো। এরমধ্যে রয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ও জনপ্রিয়তা। আন্দোলনে তার আপোসহীন দৃঢ় মনোভাব, স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের কারণগুলোর সঠিক মূল্যায়ন, ছাত্র ও মহিলাদের মধ্যে দলটির ব্যাপক জনপ্রিয়তা। নির্বাচনী প্রচারণায় বর্তমান জাতীয় ইস্যুগুলো তুলে ধরার প্রয়াস, বিএনপির শাসনামলে স্বর্ণযুগ হিসাবে বর্ণনার সাফল্য ইত্যাদি।
বেগম খালেদা নেতিবাচক ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য থেকে বিরত ছিলেন। বিএনপির অঙ্গীকার ব্যাপক জনগণের মধ্যে তুলে ধরার জন্য বেগম খালেদা জিয়া আয়োজন করেছেন অসংখ্য জনসভার। যেখানেই তিনি গিয়েছেন, জনতার ঢল উপছে পড়েছে। বিভিন্ন জনসভায় বেগম খালেদা জিয়া স্পষ্টভাবে বলেছেন, কোন ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বিএনপি বিশ্বাস করে না। আমরা জনগণের কাছে পরিষ্কার থাকতে চাই। জনগণ এ বক্তব্য পর্যালোচনা করে এর সত্যতা পেয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃত্বে এসেছিলেন দলের ভাঙন রোধের জন্য তিনি ভাঙন রোধ করে দলকে সংগঠিত করেছেন। বেগম জিয়া তার স্বামী জিয়াউর রহমানের বিশাল ব্যক্তিত্বকে ধারণ করতে সক্ষম হন। এবং বিরোধী অবস্থান থেকে বিএনপিকে নিয়ে যান জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তাকে জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে তার ও তার দলের বিজয় অভাবিত নয়।
বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রীঃ
১৯ মার্চ। ১৯৯১সাল। জননন্দিত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবনে এক অবিস্মরণীয় সাফল্যের দিন। একদা যিনি ছিলেন একজন সাধারণ গৃহবধু তিনিই হলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এদিন ঠিক সন্ধ্যায় সরকারিভাবে ঘোষণা করা হল তার প্রধানমন্ত্রী হবার খবর। বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবিভূত হলেন। এদিন থেকেই শুরু হল তার রাষ্ট্রীয় কর্মজীবন। এতদিন রাজপথে যিনি দুর্বার সংগ্রাম করেছেন, তিনি আজ এসেছেন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। এসেছেন দেশ পরিচালনার দায়িত্বে। অপরদিকে যে মহিলারা এক সময় অন্তঃপুরবাসিনী ছিলেন, চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং রাজনীতি তো দূরের কথা সাধারণভাবে ঘরের বাইরে আসতে পারতেন না, আজ তাদেরই একজন প্রতিনিধি এসেছেন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। বাংলাদেশের জন্য এক নতুন ইতিহাস।
১৯মার্চ ১৯৯১। সন্ধ্যায় বেগম খালেদা জিয়া ড্রয়িং রুমে বসে কয়েকজন অতিথির সঙ্গে কথা বলছিলেন। অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ তাকে প্রধানমন্ত্রী করে ১১জন কেবিনেট মন্ত্রী ও ২১জন প্রতিমন্ত্রী নিয়ে মন্ত্রী পরিষদ গঠন করেছেন। তার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
ড্রয়িং রুম থেকে উঠে তিনি পাশের রুমে গেলেন মায়ের কাছে। পা ছুঁয়ে মাকে সালাম করলেন। মা বুকে জড়িয়ে ধরে দোয়া করলেন মেয়েকে। বড় ছেলে তারেক রহমান পিনো বাসার বাইরে ছিলেন। বাইরে থেকেই শুনেছেন মায়ের প্রধানমন্ত্রী হবার খবর। এরপর কাজ সংক্ষিপ্ত করে ছুটে এলন বাসায়। মাকে সালাম করলেন। একগুচ্ছ রজনীগন্ধা ও গোলাপ দিয়ে অভিনন্দন জানালেন। নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বুকে জড়িয়ে ধরলেন ছেলেকে। আদর করলেন। এরপর দলীয় নেতাকর্মী ও শুভাকাক্সিক্ষরা দলে দলে এসে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানালো নতুন প্রধানমন্ত্রীকে।
২০মার্চ ১৯৯১। বেগম খালেদা জিয়া তার মন্ত্রীদের নিয়ে বঙ্গভবনে শপথ নিলেন। শপথ করলেন অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ। এদিন তার পরনে ছিল সাদার মধ্যে সাদা করা জামদানি শাড়ি। শপথ অনুষ্ঠান শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকরা ছেকে ধরেন বাংলাদেশের প্রথম ও বিশ্বের অষ্টম মহিলা প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। তিনি দাঁড়িয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় জনগণকে দেয়া সকল ওয়াদা পূরণে তিনি সচেষ্ট থাকবেন। জেনারেল এরশাদ সম্পর্কে নতুন প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, তার বিচার অবশ্যই হবে। এ বিচার চলছে। কয়েকটি মামলায় সাজা পেয়ে জেনারেল এরশাদ তা ভোগ করছেন। গণতন্ত্রকে সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠা করে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি সর্ব রাজনৈতিক দল ও সর্বমহলের সাহায্য কামনা করেন।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম কাজ হবে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের মত জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি দুর্নীতিমুক্ত সরকার কায়েমের কথাও ঘোষণা করেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা শেষ করেই বেগম খালেদা জিয়া বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে বেরিয়ে আসেন এবং তার নিজস্ব জিপে মা তৈয়বা মজুমদার, বড় ছেলে পিনো, দুই ভাই, দুইভ্রাতৃ বধূকে নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শহীদ জিয়ার মাজার ও জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। প্রধানমন্ত্রীর জন্য জাতীয় পতাকা শোভিত গাড়ি তৈরি করা হলেও তিনি সে গাড়ি ব্যবহার করেননি। ফলে তার জীপেই জাতীয় পতাকা লাগিয়ে দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের দিনটি ছিল বেগম খালেদা জিয়ার একটি ব্যস্ত দিন। তখন ছিল রমজান মাস। সেহরি খাবারের পর মাত্র তিন ঘন্টা ঘুমান। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ভক্তদের সাক্ষাত দেন। ফুলের তোড়া নিয়ে তাকে অভিনন্দন জানানোর জন্য অপেক্ষা করছিল শত শত ভক্ত। তার টেলিফোনটি ঐদিন এক সেকেন্ডের জন্য অসর ছিল না।
দুপুর দুটা পর্যন্ত ভক্তদের সাক্ষাতদান ছাড়াও শপথ নিতে বঙ্গভবনে যাবার প্রস্তুতি নেন। এরপর তিনি বিকাল তিনটায় বঙ্গভবনে যান শপত নিতে। শপথ শেষে শহীদ মিনার, শহীদ জিয়ার মাজার ও স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা জানিয়ে সন্ধ্যায় তিনি ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দরের বাসায় এসে ইফতার করেন। রাত আটটায় বিএনপির বনানী কার্যালয়ে গেলে সৃষ্টি হয় এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের। পুরো রাস্তা লোকেলোকারণ্য হয়ে পড়েছে। তার গাড়ি আসতেই দুলাইনে দাঁড়িয়ে থাকা জনতা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে তাকে অভিনন্দন জানায়।
রাত দশটার পর তিনি দলীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতে মিলিত হন। রাতে বাসায় ফিরে তিনি ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে টেলিফোনে কথা বলেন। রোজা ও প্রচন্ড ব্যস্ততায় তাকে খুব ক্লান্ত মনে হয়েছিল। তবে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গেই কাটে তার প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রথম দিন। ৭ মার্চ ১৯৯১। তিনি যান সিলেটে হয়রত শাহজালাল (রঃ) মাজার জিয়ারত করতে। বিয়ের পর স্বামী জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তিনি কয়েকবার এ মাজার জিয়ারত করেন। তিনি হয়রত শাহজালাল (রঃ) মাজার জিয়ারত করেই তার নির্বাচনী প্রচারণাও শুরু করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর খালেদা জিয়া হয়ে উঠেন দেশের রাজনৈতিক গতিধারার কেন্দ্রবিন্দু। প্রধানমন্ত্রীত্বের ১২তম দিন ১ এপ্রিল ’৯১ মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে বেগম জিয়া নিজেই সভাপতিত্ব করেন। ক্রমেই তিনি হয়ে উঠেন সরকারের মূখ্য ব্যক্তিত্ব। অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট গণঅভ্যুন্থানের ইমেজে নির্মিত জনমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত মন্ত্রিসভায় তাকে সভাপতিত্ব করার সুযোগ দেন। অবশ্য মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকটিতে সভাপতিত্ব করেন অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ।
খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রীত্ব শুরু হয় একটি বিশাল স্বপ্নের মধ্য দিয়ে। খালেদা জিয়া নিজেকে উপলব্ধি করেন নতুন ভূমিকায়। কথা ও কাজে অভিন্ন থাকার যে ইমেজ খালেদা জিয়া বিরোধী রাজনৈতিক নেত্রী থাকায় গড়ে তুলেছিলেন, সরকার গঠনের পরও তিনি তা বজায় রাখবেন বলে ঘোষণা দেন। ৪ এপ্রিল ’৯১ অনুষ্ঠিত তার সভাপতিত্বে মন্ত্রীপরিষদের বিশেষ বৈঠকে ১৫ এপ্রিল ’৯১ থেকে ২৫ বিঘা পর্যন্ত খাজনা মওকুফ করা, পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণ মওকুফ করা এবং সরকারী চাকরীতে যোগ দেয়ার সময়সীমা ২৭ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ বছর করার সিন্ধান্ত নেয়া হল। মন্ত্রী পরিষদ এসব কৃষিঋণ সংক্রান্ত সার্টিফিকেট মামলাও স্থগিত রাখার সিন্ধান্ত নেয় এর মাধ্যমে তিনি নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করতে শুরু করলেন। ৫ এপ্রিল ’৯১ জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হল। এটা ছিল তার জীবনে নতুন এক অভিজ্ঞতা।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া সচল সক্রিয় হয়ে ওটেন জাতির এক দুর্ভাগ্যজনক সময়ে। প্রধানমন্ত্রীত্বের ৩৯ দিনের মাথায় ২৯ এপ্রিল শতাব্দীর অন্যতম প্রলয়ংকারী ঘূণিঝড় আঘাত হানে বাংলাদেশে। সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল উপকূলীয় এলাকা ধ্বংষস্তুপে পরিণত হয়। চট্রগ্রাম পার্বত্য চট্রগ্রামের জনপদই বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছাসে লক্ষাধিক লোকের মৃত্যু ঘটেছে, বিনষ্ট হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। এ ধরনের দুযোগ্যের জন্য নুন্যতম প্রস্তুতিও ছিলনা। নবীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তার মন্ত্রীসভাকে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঝাপিয়ে পড়েন। তার নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের ত্রাণ সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়। মানুষকে বাঁচানোর ত্রান তৎপরতার সঙ্গে তিনি রাজনীতিকে যুক্ত করেননি। ত্রান তৎপরতাকে তিনি দল ও রাজনীতির উর্ধ্বে স্থান দিলেন।
তার তৎপরতা ছিল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, বিএনপির চেয়ারপার্সন হিসেবে নয়। তিনি সরকারকে সহযোগিতা করতে, বাংলাদেশের বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়াতে আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানালেন। পেলেন ব্যাপক সাড়া। খালেদা জিয়া ৬ মে থেকে ৯ মে ’৯১ চট্টগ্রামে অবস্থান করে ত্রাণ তৎপরতার তদারকি করেন। এ কয়দিন তার দফতর সেখানে স্থানান্তরিত হয়। প্রতিটি থানার জন্য মন্ত্রী নিয়োগ করেন, এমপিদের দায়িত্ব দেন। উপকূলীয় লোকদের বাঁচাতে বেগম খালেদা জিয়ার আহবানে সাড়া দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের নির্দেশে একটি টাস্কফোর্স আসে বাংলাদেশে। পরিস্থিতি কিছু দিনের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে আসে। ত্রাণ তৎপরতায় খালেদা জিয়ার সবচেয়ে বড় সাফল্য, এবারই প্রথম বাংলাদেশে কোন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরাও কোন অভিযোগ করেনি। সফলভাবেই তিনি ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাঁচ মাসের মাথায় খালেদা জিয়ার আরেকটি বড় ধরনের সাফল্যে সবাইকে চমৎকৃত করে। তা হচ্ছে দেশের শাসন পদ্ধতি কি হবে তিনি তা ঠিক করতে পেরেছেন। প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির ভাবধারায় তার দল বিএনপি গড়ে উঠলেও তিনি সরকারে আসার আগে বার বার বলেছেন, সরকার পদ্ধতি কি হবে তা ঠিক হবে নির্বাচিত সংসদে। জনগণ যে পদ্ধতি ভাল মনে করেন, সেই পদ্ধতিতেই দেশ চলবে। ১৯৯১-র ঐতিহাসিক সংসদ নির্বাচন হলে দেখা যায় অধিকাংশ সদস্যই চাচ্ছেন সংসদীয় সরকার পদ্ধতি। তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে ব্যাপক মতবিনিময়ের পর সিদ্ধান্ত নিলেন,সংসদীয় পদ্ধতি যেহেতু সবার কাম্য, সংসদীয় পদ্ধতিতেই দেশ চলবে। ২এপ্রিল জাতীয় সংসদে সংসদ নেত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় সরকার পদ্ধতির পক্ষে ঐতিহাসিক বিল আনেন।
একই সঙ্গে আনলেন অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের স্বপদে ফিরে যাওয়া সংক্রান্ত একাদশ সংশোধনী বিল। সংসদে এ সম্পর্কে এক বিবৃতিতে তিনি বললেন, আমরা এমন সংসদীয় পদ্ধতি চাই, যা জনগণের কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না তার পদক্ষেপকে সাহসী আখ্যায়িত করে বিরোধী নেতারা সেদিন বেগম জিয়ার প্রশংসা করেন। এবং তাকে অভিনন্দিত করেন। বিলটি বাছাই কমিটিতে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এবং ওয়ার্কাস পার্টির নেতা রাশেদ খান মেননও সংসদীয় পদ্ধতির পক্ষে বিল আনেন।
সবগুলো বিল বাছাই কমিটিতে পাঠানো হয়। বাছাই কমিটিতে সংশোধন, সংযোজন করে সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে সংবিধানের একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনী বিল দুটি ২৮ জুলাই সংসদে ফেরত পাঠানো হয়। এর উপর অনুষ্ঠিত হয় দীর্ঘ আলোচনা। অবশেষে ৬ আগস্ট সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে সর্বসম্মতভাবে পাস হয় সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী বিল। একই সঙ্গে পাস হয় অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের পূর্ব পদে ফিরে যাওয়া সংক্রান্ত একাদশ সংশোধনী বিল। দ্বাদশ সংশোধনী বিলটি পাশ হয় ৩০৭-০ ভোটে এবং একাদশ সংশোধনী বিলটি ২৭৮ ভোটে।
দীর্ঘ সাড়ে ষোল বছরের প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেশকে সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরিয়ে নেয়ার ঐতিহাসিক মুহূর্তটি ছিল বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে অভূতপূর্ব। এ ছিল এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। আন্তরিকতা, সততা ও দূরদর্শিতার জন্য বেগম খালেদা জিয়া আবার বিজয়ী হলেন। গণভোট অনুষ্ঠান করে দেশে সংসদীয় পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বেগম খালেদা জিয়া ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ দেশের সরকার প্রধান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হন। সবচেয়ে বড় কথা বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই এ দেশের শাসনতন্ত্রের মৌলিক কাঠামোগত রদবদল হলো বেগম খালেদা জিয়া বলতেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। সংসদীয় গণতন্ত্রের উত্তরণ করে তিনি তা এই বিশ্বাসকে সবার সামনে প্রমাণ করেন। এরপর দেশ ও দেশের মানুষের উন্নতির লক্ষ্যে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া এগিয়ে যাচ্ছেন। দেশ এখন সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রথম প্রধানমন্ত্রীত্বের পাঁচ বছর (১৯৯১-৯৬):
দেশ পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া পাঁচ বছর পূর্ণ করেছেন। ১৯৯১ সালে একটি বিপর্যস্ত আর্থ-সামজিক পরিস্থিতির বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘ নয় বছরের স্বৈরাচারী শাসনের ফলে তখন দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। অরাজকতা, সন্ত্রাস আর সেশনজটে মুখ থুবড়ে পড়েছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কৃষক-শ্রমিক সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। স্বৈরাচারের লুণ্ঠনে রাষ্ট্রীয় কোষাগার শূন্য হয়ে পড়েছিল। ব্যাংকিং সেক্টর হয়ে পড়েছিল দেওলিয়া। মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে চলে গিয়েছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে সবরকম সামজিক মূল্যবোধ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হয়ে পড়েছিল অস্তিত্বহীন। এই অবস্থার মধ্যে একটি নিয়ম-শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করা ছিল বাস্তবিকই কষ্টসাধ্য। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া সফল হয়েছেন।
মানুষের অকুণ্ঠ ভালবাসা আর দৃঢ় মনোবলকে পুঁজি হিসেবে নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া পাঁচ বছর আগে শূন্য অবস্থান থেকে শুরু করেছিলেন তার যাত্রা। পাঁচ বছর পর তার শাসনকাল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, যে আশা নিয়ে এ দেশের সাধারণ মানুষ তাকে নির্বাচিত করেছিল, সেই আশা তিনি অনেকখানি পূরণ করতে পেরেছেন। এসময়ে মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক আকাঙ্খাগুলো পূরণ হতে শুরু করে। বাংলাদেশে এমন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিরাজ করেছে, যা এ দেশের মানুষ ইতিপূর্বে কখনো প্রত্যক্ষ করেনি। বাক, ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা অবারিত। গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ সংবাদপত্র ভোগ করে নিরংকুশ স্বাধীনতা।
সারাদেশে শত শত দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। সংবাদপত্রের পাতায় সরকারের বিরুদ্ধে এমন কোন সমালোচনা নেই যা ছাপানো হয় না। একদম কোন কথা নেই যা বলা হয় না। বিচার ব্যবস্থা কাজ করছে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে। ফলে আদালতের মাধ্যমে জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর মাধ্যমে জনগণের ন্যায় বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে। সংসদীয় কমিটিগুলোর মাধ্যমে প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়েছে। স্থানীয় সরকারগুলো পরিচালিত হয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। স্বৈরাচারের হাতে ভেঙে-পড়া অর্থনৈতিককাঠামো পুনরায় গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া রাত দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। স্বৈরশাসনের নয় বছরে যে দারিদ্রক্লিষ্ট ও অসহায় বাংলাদেশেরচিত্র বিশ্ববাসী এতোদিন বদনার সাথে প্রত্যক্ষ করতো, বেগম খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের পরিশ্রমের ফলে যে অবস্থা এখন আর নেই, গণতন্ত্রায়ন, অর্থনৈতিক সংস্কার, ব্যক্তি উদ্যোগের প্রাধান্য, বাজার অর্থনীতি প্রবর্তন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, অবকাঠামো নির্মাণ, আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্পজোরদার, শিল্পায়ন, বিনিয়োগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাস্তব পদক্ষেপ নেয়ার ফলে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার এক বিকাশমান অর্থনীতির দেশে হিসাবে বিবেচিত হয়।
যে বিদেশীরা একদিন বাংলাদেশকে বলতো তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ তারাই বাংলাদেশকে বলেছে দি ইমাজিং টাইগার। বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলো আজ তাদের পুঁজি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। শিল্প পণ্যের বাজার বিস্তৃত হচ্ছে নিভূত পল্লীতেও। ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ফলে বাড়ছে কর্মসংস্থান। ওই পাঁচ বছরে বাংলাদেশের যে উন্নতি হয়েছে, তা স্বাধীনতার ২০ বছরেও হয়নি।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে জোরদার করা এবং সমাজের সকল স্তরে গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ছিল প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক অঙ্গীকার। সেই অঙ্গীকার পুরনে তিনি একের পর এক উদাহরণ সৃষ্টি করে যান। বিএনপি প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার সমর্থক ছিল। কিন্তু নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, সরকার পদ্ধতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচিত সংসদ। নির্বাচনের পর সংসদ সদস্যদের মতামতকে সম্মান জানিয়ে তিনি সংসদীয় সরকার পদ্ধতিই গ্রহণ করেন। দেশের সকল পর্যায়ে জনগণের ইচ্ছাই সর্বোচ্চ মর্যাদা পায় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা এবং উপ-নির্বাচন হয়েছে অবাধ ও নিরপেক্ষ। এর কোথাও জয়ী হয়েছেন সরকারি দল, কোথাও বা বিরোধী দল।