ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধের নামে আমরা যা করেছি, তাতে সন্ত্রাসবাদের বিস্তারের পথই কেবল প্রশস্ত হয়েছে। দুর্নীতি, দুঃশাসন-অপশাসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা ও লাগামহীন নারী নিপীড়ন রেখে দিয়ে সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধে জয়ের আশা করা যায় না। কিন্তু আমরা করেছি তাই।
ফলে টুইন টাওয়ারে হামলার ১৩ বছর পর লাদেন মরেছেন ঠিকই কিন্তু আরও শক্তিশালী হয়েছে লাদেনের সন্ত্রাসবাদ। ফলে, কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে চালান যুদ্ধ যে এক কথায় ব্যর্থ হয়েছে তা আর দ্বিতীয়বার বলার প্রয়োজন পড়ে না।
সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধ আসলে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের একটি হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। শিয়ারা নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে সুন্নীদের ব্যবহার করেছে। একই কাজ করেছে সুন্নীরা। ফলে, সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধ চলেছে হরদম। কিন্তু শিয়ারাও পরাজিত হয়েছে, সুন্নীরাও পরাজিত হয়েছে। শক্তিশালী হয়েছে কেবল সন্ত্রাসবাদ।
সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধ চালাতে অস্ত্রের প্রয়োজন আছে ঠিকই। কিন্তু অস্ত্রই সব নয়। এশিয়ার দেশগুলোতে সামাজিক পরিবর্তন ঘটেছে দ্রুত। কিন্তু কিভাবে এই পরিবর্তনের সাথে তাল রেখে মানুষ তাদের জীবন-যাপন করবে তা নিয়ে ভাবেনি বিশ্বনেতারা। ফলে সন্ত্রাসবাদীদের জন্য সবসময়ই সন্ত্রাসবাদ বিস্তারের পথটি খোলা থেকে গেছে।
৯/১১ এর পরপর বিন লাদেনকে খুঁজে বের করতেই আমাদের সব মনযোগ নিবদ্ধ হয়েছিল। ফলে, লাদেনকে হয়তো কোন এক গন্ডিতে আটকে রাখা গেছে কিন্তু বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে বিন লাদেনবাদ।
আমরা সন্ত্রাসীকে খুন করতে গিয়ে সন্ত্রাসবাদকে উসকে দিয়েছি। আমরা আলকায়েদাকে যেভাবেই দেখেছি, সেভাবেই সমস্যা-সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওরা আমাদের কিভাবে বুঝে তা ভাবার চেষ্টা করিনি। এক দশকের যুদ্ধের পর আল কায়েদা দূর্বল হয়েছে ঠিকই কিন্তু আরও শক্তি নিয়ে তৈরী হয়েছে আইসিসের। অর্থাৎ আমাদেরকে একটি দুঃখজনক পরিণতি বহন করতে হচ্ছে।
প্রকাশ্যে আইসিসকে আল-কায়েদার প্রতিদ্বন্দ্বী বলেই মনে হয়। কিন্তু আল-কায়েদার কৌশল ব্যবহার করেই আইসিস তরুণদেরকে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আজ আইসিস যে সকল বক্তব্য দিচ্ছে এক যুগ আগে ওসামা বিন লাদেন ঠিক একই কথা বলতেন।
তারা আধুনিকতাকে অস্বীকার করলেও আধুনিক সমাজের সকল সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করেই সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে। আধুনিক অস্ত্র আর আধুনিক গণমাধ্যম তাদের প্রধান সহায়ক। এই কৌশলগুলো ব্যবহার করে গত ১৪ বছর আইসিস ও আল-কায়েদা এখন সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। এশিয়ার দুঃশাসন ও দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজগুলোতে যে কোন সময়ই ছড়িয়ে পড়তে পারে আরও ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদ।
সত্যিই সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে চাইলে, যুদ্ধ নয়, সন্ত্রাসবাদের বিকল্প দেখাতে হবে বিশ্ব জনগণকে।