DMCA.com Protection Status
title="৭

দি ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনঃ একচ্ছত্র ক্ষমতার পথে শেখ হাসিনা’

download (21)দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ  অনুবাদ: বাংলাদেশে রাজনীতি শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিন দিন রাষ্ট্রক্ষমতার একচ্ছত্র অধিকারী হয়ে উঠছেন বলে উল্লেখ করেছে দ্য ইকোনমিস্ট। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও একের পর এক রাজনৈতিক খেলার কাছে মাথা তুলেই দাঁড়াতে পারছেনা বাংলাদেশের বিরোধীদলগুলো।

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রক্ষা করে বেশ ঠান্ডা মাথায় দেশের রাজনীতিকেও নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে আওয়ামীলীগ। ফলে দেশে বিদ্যমান নানা সংকটের মুখেও কিছুতেই সরকার বিরোধী আন্দোলন জমাতে পারছেনা বিরোধীলগুলো। এমনকি সব্যসাচী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ দৃঢ় হাতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন গৃহপালিত বিরোধীদল জাতীয় পার্টিকে’।

‘বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার করা আপিল আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট। মূলতঃ সরকার এর মাধ্যমে খালদা জিয়াকে বিচারের মুখোমুখি করার রাস্তা পরিস্কার করেছে। যদিও রাষ্ট্রপক্ষের কৌশুলিরা বলছেন খালেদার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাষ্ট্রের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এ মামলা করেছে। কিন্তু যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন তবে তাকে সম্ভবত শাস্তি হিসেবে জেল ভোগ করাকেই নিয়তি হিসেবে মেনে নিতে হতে পারে বেগম খালেদা জিয়াকে। আর যদি তাই হয় তবে আওয়ামীলীগের চিরস্থায়ী ক্ষমতার জন্য এটি হবে বেশ যুতসই পদক্ষেপ’।

 

Capture1-300x286‘এদিকে খালেদা জিয়ার উপর আদালতের এমন ক্রমবর্ধমান চাপ বেশ ভালোই উপভোগ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ খালেদা জিয়ার দল বিএনপি গত ৫ জানুয়ারীর ভোটারবিহীন নির্বাচন বর্জনের ফলে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের ৮ মাস পর সম্প্রতি খালেদা জিয়াকে আবার আদালতের মুখোমুখি হতে হল। ফলে দেখা যাচ্ছে খালেদা জিয়াকে একরকম গৃহবন্দীই করে রেখেছেন শেখ হাসিনার সরকার। অন্যদিকে বেশ কৌশলে বিএনপির নির্বাচনী জোট জামায়াতকে রেখেছেন রাজনীতির বাইরে। ফলে এমন পরিস্থিতিতে সরকার পরিচালনা শেখ হাসিনার জন্য বেশ সুখকর হয়ে উঠেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন’।

‘এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার দাবির মুখে দুর্বল ভিত্তি নিয়ে শুরু করলেও শেখ হাসিনার সরকার এখন বেশ প্রফুল্লভাবেই তার সরকার পরিচালনা করছেন। অবশ্য কেউ কেউ মনে করছেন শেখ হাসিনা ন্যায় বিচারের সাথেই দেশ পরিচালনা করছেন। কারন শেখ হাসিনার সরকার দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে বেশ সফলতা অর্জন করেছে। ২০০৯ সাল থেকে তার সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই দেশের দারিদ্রের হার কমে গেছে। এছাড়া ২০০৬ সালে বেগম জিয়ার শাসন আমলের ভঙ্গুর ও রুগ্ন অর্থনীতির তুলনায় দেশের অর্থনীতির আকার এখন দ্বিগুণ হয়েছে’।

‘অন্যদিকে বিচারকদের অভিসংশন ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার ব্যবস্থাই করছেন শেখ হাসিনা। তাছাড়া সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে থাকা সংসদের বিরোদী দল মূলত সরকারের বাধ্য সহযোগী হিসেবেই ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া,বিচারকদের অভিসংশন ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে আনতে সংবিধান সংশোধনের জন্য গত ১৭ই সেপ্টেম্বর সংসদে একটি আইন পাশও করে ফেলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার’।

‘তাছাড়া ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে আওয়ামী সরকার। বিশেষ করে যুদ্বাপরাধ ট্রাইব্যুন্যালের মাধ্যমে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আটককৃতদের বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা আর এই নিয়ে রাজনৈতিক চাল খেলার মাধ্যমে এই কাজটি করতে সক্ষম হয়েছে তারা।

 

এছাড়া এই ট্রাইব্যুনালের মামলায় আটককৃতদের বেশিভাগই জামায়াতে ইসলামীর প্রথমসারির নেতা। এর ফলে সরকারের জন্য এই রাজনীতির খেলা বেশ জমে উঠেছে। কারন গত ১৭ সেপ্টেম্বর জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে যুদ্বাপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যদন্ড বাতিল করে আমৃত্যু কারাদন্ড দিয়েছে আপিল বিভাগ।

 

আর এই রায়কে কেন্দ্র করেই সরকারের চাতুরী নিয়ে গণমানুষের মধ্যে বেশ সন্দেহের দানা বেঁধেছে।কেউ বলছেন সরকার এরই মধ্যে জামায়াতের সাথেও আঁতাত করে ফেলেছেন। কারো কারো মতে সর্বশেষ দেওয়া এই রায়কে কেন্দ্র করেই যুদ্বাপরাধ ট্রাইব্যুনালের উপর সরকারের প্রভাব খাটানর বিষয়টি বেশ পরিস্কার হয়ে উঠেছে। ফলে অনেকেই বলছেন সরকার এই ট্রাইব্যুনালকেও নিজেদের রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন’।

‘আওয়ামী লীগের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপিকেও অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় থাকছে না। যদিও বিএনপি দাবি করেছে আওয়ামীলীগ কেবল তাদের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। এই মুহূর্তে দেশের অর্থনীতির শ্লথ গতি, ব্যাংকিং খাতের বাজে দুরাবস্থা আর আইনশৃঙ্খলার অস্থির পরিস্থিতি হলেও দৃশ্যত দেশে বড় কোনো সংকট দেখা যাচ্ছে না’।

‘অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, কিছুদিন আগে জনমত জরিপে দেখা গেছে গত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনকালীন সময়ের তুলনায় এই মুহূর্তে বেশ জনপ্রিয় অবস্থানে আছে সরকার। যদিও বিএনপি এই জনমত জরিপকে ত্রুটিপূর্ন বলে দাবি করেছে। কারণ গত বছর অনুষ্ঠিত বেশিভাগ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তারা আওয়ামী লীগকে পরাজিত করেছে। এছাড়া কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জবরদস্তির পরও বেশ ভালো করেছে বিএনপি’।

‘কিন্তু বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় ফিরে আসার পথ ঝাপসাই থেকে যাচ্ছে। কারণ একরকম রাজনীতি ও সংসদের বাইরে থেকে বিএনপি নেতাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও বেশ উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। যদিও খালেদা জিয়া মনে করছেন এখন দলের সংস্কার কাজ চলছে আর তার ছেলে তারেক রহমান দেশে এসেই রাজনৈতিক কারিশমা দেখাতে সক্ষম হবে।



বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন তারেক রহমান দেশে ফিরলে দলের তরুণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চারণ হওয়ার সম্ভাবনা যেমন আছে, তেমনি রয়েছে আশঙ্কাও। তিনি নিজেই বিএনপির ভেতর বিভক্তির কারণও হয়ে উঠতে পারেন। কারণ উইকিলিকসে প্রকাশিত ২০০৮ সালের এক আমেরিকান কূটনীতিক তারবার্তায় জানা গেছে, বিএনপির রাজনীতিতে তলানিতে নামার জন্য তারেক রহমান এবং তার কুখ্যাত সহযোগীরাই দায়ী’।

‘এছাড়া এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের প্রতি ইন্ডিয়া সরকারের সমর্থন তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বেশ স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠেছে। ইন্ডিয়ার আশঙ্কার কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের ইসলামপন্থী দল। এদেরকে নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা সরকারের সাথেই হাত মেলাতে চাইছে ইন্ডিয়া। বাংলাদেশের ইসলামী উগ্রপন্থী দলগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য নিজেদের ভূরাজনৈতিক ও অর্থনীতিক স্বার্থে হাসিনা সরকারের সাথে সম্পর্ক তৈরীতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে ইন্ডিয়ার নরেন্দ্র মোদীর নের্তৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। এদিকে চীন-জাপানও তাদের স্ব স্ব স্বার্থে আওয়ামী সরকারের সাথেই সম্পর্ক গড়তে দেখা যাচ্ছে। এমনকি এই দৌঁড়ে পিছিয়ে নেই রাশিয়াও’।

‘ভোটারবিহীন নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এলেও এই মুহূর্তে সরকার পরিচালনায় আওয়ামী লীগ বেশ স্বস্তিদায়ক অবস্থানেই আছে। কারণ দেশে নাই কোন শক্তিশালী বিরোধী দল। তাই এখন শেখ হাসিনার উপরই নির্ভর করছে তিনি ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন দেবেন না কি দেবেন না। যতটা আশা করা যায় আগে থেকেই জয় নিশ্চিত করতে পারলেই নির্বাচন দেবেন শেখ হাসিনা’।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!