রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার নীলক্ষেত এলাকার কম্পিউটার প্রিন্টের দোকানে অনেকটা প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে জাল সনদপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্র। অশিক্ষিত ব্যক্তিদের হাতেও কয়েকশ’ টাকার বিনিময়ে অনার্স, মাস্টার্সের ‘সনদপত্র’ দিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
সাধারণভাবে দেখলে বোঝারই উপায় নেই- এগুলো জাল। এসব সনদপত্র নিয়ে অনেকে চাকরিও করছেন।
জাতীয় পরিচয়পত্র হারালে সংশ্লিষ্ট অফিসে দীর্ঘ লাইনে না দাঁড়িয়ে সহজেই অনেকেই এখান থেকে নিচ্ছেন ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র। জরুরি প্রয়োজনে মাত্র কয়েক মিনিটে পাওয়া যাচ্ছে এসব পরিচয়পত্র।
দীর্ঘদিন ধরে চলছে এসব অপকর্ম। মাঝে-মধ্যে অভিযানও চলে। কিন্তু তারপরও নীলক্ষেতের এ জাল সনদ বাণিজ্য সচল আছে বছরের পর বছর। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূল হোতারা ধরা না পড়ায় এ বাণিজ্য থামছে না। অভিযানের সময় দু’চারজন ধরা পড়লেও নীলক্ষেতের অনেকেই এ অপকর্মে জড়িত।
বৃহস্পতিবার র্যাবের অভিযানে ধরা পড়েছে এমন একটি চক্র। নীলক্ষেতের মিউনিসিপ্যাল মার্কেটে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) ও বিভিন্ন পরীক্ষার সনদপত্র তৈরির অভিযোগে সাতজনকে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। দণ্ডিতরা হলেন- আরিফ, উজ্জ্বল, আলমগীর হোসেন, মঞ্জুর।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন র্যাব ২-এর মেজর নাসির উদ্দিন আহমেদ এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক গোলাম মোস্তফা।
নীলক্ষেত এলাকার কয়েকজন পুস্তক ব্যবসায়ী পরিচয় গোপনের শর্তে বলেন, বাকুশাহ মার্কেট ও মিউনিসিপ্যাল মার্কেটের একটি অংশ থেকে পাঁচটি কম্পিউটারসহ একটি চক্রকে আটক করেছে র্যাব। অভিযানের খবর পেয়ে অনেক কারবারী আগেই সটকে পড়েছে। আবার হাতেনাতে ধরতে না পাড়ায় কয়েকজনকে দণ্ড দিতে পারেননি আদালত।
সূত্র জানায়, নীলক্ষেত এলাকায় অন্তত ২০ জন কারবারী জাল সনদপত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে। রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, পল্টন, যাত্রাবাড়ী, বাংলাবাজার-লক্ষ্মীবাজার, ফার্মগেট ও মোহাম্মদপুর এলাকায় তাদের এজেন্ট রয়েছে। জাল সনদের এ কারবার পরিচিতজনদের মাধ্যমেই হয়।
র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে নীলক্ষেত মিউনিসিপ্যাল মার্কেটে অভিযান চালানো হয়। এসময় বিপুল পরিমাণ জাল জাতীয় পরিচয়পত্র এবং বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স/ডিগ্রি ও মাস্টার্সের বিপুল পরিমাণ ভুয়া নম্বরপত্র (মার্কশিট) ও সনদপত্র (সার্টিফিকেট) জব্দ করা হয়। ওই কারবারের সঙ্গে জড়িত সাতজনকেই ধরা সম্ভব হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাঁচটি সিপিইউ, পাঁচটি মনিটর ও পাঁচটি প্রিন্টারও জব্দ করা হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘দণ্ডিত চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে জাল সনদপত্রের কারবার করছিল। তারা আসল সনদপত্রের মতোই দেখায় এমন একটি কাগজে বিভিন্ন ব্যক্তির তথ্য জুড়ে দিয়ে কালার প্রিন্ট দিয়ে জাল সনদপত্র বানাতো। এসব সনদপত্র দুইশ, পাঁচশ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকায়ও বিক্রি হতো।’
এই অপকর্ম বন্ধ ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান র্যাবের এই ম্যাজিস্ট্রেট।