দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ অনুসন্ধানঃ কোরবানীর ঈদ তো এলো, কিন্তু ঈদ সাথে নিয়ে এসেছে আতঙ্কও। বরাবরের মতো এবারও কোরবানীর পশুকে দেওয়া হরমোন-ইনজেকশনের স্বাস্থ্যঝুঁকির আতঙ্কে আছেন সাধারণ মানুষ। এই ইনজেকশন দেওয়া হয় মূলত গরু মোটা করার জন্য। কিন্তু আসলেই কি কোরবানীর পশুকে মোটা করতে ইনজেকশনের মাধ্যমে হরমোন দিলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু আছে? আর, এই ধরণের ইনজেকশন দেওয়ার পর ওই কোরবানীর পশুর মাংস খেলে আসলেই কোন ক্ষতি হয় কি?
এরই মধ্যে মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, কুমিল্লা, নোয়াখালী, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, ফরিদপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, মাদারীপুর, ময়মনসিংহ এবং ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে ক্ষতিকর ওইসব ওষুধ ও রাসায়নিক সেবনের মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। এছাড়া, ইন্ডিয়া থেকে আমদানি করা কোরবানীর পশুতেও হরমোন-ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে ব্যাপক হারে।
কোরবানীর আগে পশু মোটা করার দুটো পদ্ধতি আছে। একটি হচ্ছে খাবারের সাথে এক ধরণের হরমোন (স্টেরয়েড)মিশিয়ে দেওয়া, অপরটি হচ্ছে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রোটিন হরমোন শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া। হরমোন মানুষের শরীরের জন্য উপকারী। কিন্তু কোন কারণে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলেই বিপদ। হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে, মানুষের শরীরে নানান ধরণের ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে। ক্যান্সার ছাড়াও তৈরী হয় স্বাস্থ্যঝুঁকি। একারণেই ক্রেতাদের মনে সন্দেহ থেকে যায়, ইনজেকশন দেওয়া গরুর মাংস খেলে তা কি তাদের শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেওয়ার মতো বিপদজ্জনক হবে, নাকি হবে না। আর এই সন্দেহ থেকেই সৃষ্টি হয় আতঙ্ক।
গবাদী পশুর শরীরে হরমোনের হেরফের ঘটিয়ে এগুলোর আকার বাড়িয়ে ফেলার প্রযুক্তি আবিষ্কার হয় কমপক্ষে আশি বছর আগে। কিন্তু যথাযথ প্রযুক্তির অভাবে তা ব্যবহার সম্ভব হচ্ছিল না। আবিষ্কারেরও বিশ বছর পর বাণিজ্যিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পশু মোটাতাজাকরণে হরমোনের ব্যবহার শুরু হয়। প্রথমদিকে ডাইথাইলস্টিবোস্টেরল নামের একটি হরমোনের বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, এই হরমোনটি ক্যান্সার সৃষ্টি করে। ফলে, সত্তরের দশকে এই হরমোনটির ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর বিজ্ঞানীরা তুলনামূলকভাবে মোটাতাজাকরণের জন্য ব্যবহারযোগ্য ও স্বাস্থ্যবান্ধব হরমোন আবিষ্কার করেছেন। বিজ্ঞানীদের দাবি, কোন পশুতে স্টেরয়েড হরমোন ব্যবহারের ফলে এর মাংসের গুণগতমান সাধারণ পশুর মাংসের মতোই থাকে। ফলে, ইনজেকশন দেওয়া গরুর মাংসের সাথে সাধারণ মাংসের পার্থক্য করা যায় না।
এছাড়া, মানুষের শরীরে যে হরমোন নিঃসরণ হয় তার তুলনায় ইনজেকশন দেওয়া গরুর মাংসে যে পরিমাণ স্টেরয়েড থাকে তার তুলনায় খুবই নগন্য। স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসম্মত জীবন-যাপন করলে হরমোন ইনজেকশন দেওয়া গরুর মাংসে স্বাস্থ্যঝুঁকি কম থাকে। একইভাবে, ভালোভাবে রান্না করা গরুর মাংস খেলেও ঝুঁকির পরিমাণ কমে যায়।