হজ্জ এবং মহানবী(সঃ)কে নিয়ে কটূক্তি করা লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অবিবেচকের মতো’ কথা সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে দেরি করিনি। যেটা আমি বলেছি সেটাই করব। তাকে মন্ত্রিসভায় রাখব না।’
কবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইন অনুযায়ী সবই হবে। একজন মন্ত্রীকে বিদায় দিতে হলে কিছু নিয়ম মানতে হবে। আমি নির্দেশ দিলে রিজাইন (পদত্যাগ) করতে হবে। নইলে বিদায় করে দিতে হবে। কিন্তু বিদায় দিতে হলে রাষ্ট্রপতির কাছে ফাইল পাঠাতে হবে। রাষ্ট্রপতি হজে গেছেন। আমি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে ফাইল তৈরি করে রাখতে বলেছি, তারা ফাইল তৈরিও করেছে। অফিস খুললেই লতিফ সিদ্দিকীর ফাইল কার্যকর হবে।’
শুক্রবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১০ দিনের সফর শেষে গত বৃহস্পতিবার দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তার লিখিত বক্তব্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে যোগ দেয়ার অভিজ্ঞতা এবং বিভিন্ন কর্মসূচির কথা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে বাদ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক দল। গঠনতন্ত্র মেনে চলে। তাকে বাদ দিতে হলে তা নিয়ে দলে আলোচনা করতে হবে। কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে অভিযোগগুলো তুলে ধরে আলোচনা করতে হবে। কমিটির সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে আশা করি না কমিটির সদস্যরা আপত্তি করবে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকীর ওই বক্তব্য নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই আলোচনা-সমালোচনা চলছে। লতিফের বক্তব্য নিয়ে সরকার অস্বস্তিতে নেই দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বেকায়দায় পড়েছে বলে আমি মনে করি না। উনি (লতিফ) বেকায়দায় রয়েছেন, নিজেই বিপদে পড়েছেন। উনি যা বলেছেন এজন্য ওনাকেই খেসারত দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কে কি বলল না বলল তা বড় কথা নয়, জনগণের ওপর আমার ভরসা আছে। সাধারণ মানুষ ভুল করেন না, তারা আমার মূল ভরসার জায়গা। আওয়ামী লীগ ও সরকার বিপদে নেই।’
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সম্মেলনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশ এবার সমাদৃত হয়েছে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস দমন এবং নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে আমাদের সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন বিশ্ব নেতারা। একই সঙ্গে তারা আমাদের দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নেরও প্রশংসা করেছেন।
বিনিয়োগবান্ধব দেশ গড়তে উন্নত দেশগুলো বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এমডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এসব সাফল্য অর্জনে জাতিসংঘে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাত্সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন।
গত নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের সংলাপের আহ্বান এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক চাপের কথা মনে করিয়ে দিয়ে এক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান এবার জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে তেমন কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবার কিন্তু আর কিছু বলেন-টলেন নাই। বোধ হয় কোনো সমস্যা দেখতে পাচ্ছে না।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সংলাপের দাবি নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খুনি, ধর্ষক, লুটেরাদের সঙ্গে সংলাপ করার মতো দৈন্য দশায় তার সরকার পড়েনি। তিনি বলেন, ‘কার সঙ্গে সংলাপ করব? কেউ যদি আপনাকে খুন করার চেষ্টা করে, তাহলে আপনি তার সঙ্গে সংলাপ করতে পারবেন?’
গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার সংলাপের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের স্বার্থে সেই চেষ্টাও করেছি।’ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির কঠোর আন্দোলনের হুমকির জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই আন্দোলন মোকাবিলা করার ক্ষমতা সরকারের আছে।
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের হুমকি তো আমরা শুনেই যাচ্ছি। আর উনার (খালেদা) আন্দোলন মানে হলো মানুষ খুন করা। তারা যদি আবারো আন্দোলনের নামে মানুষ খুন করে, তাহলে জনগণকে বলব, শুধু সরকার কেন, দেশবাসীসহ সকলকে মিলে সেটা প্রতিহত করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই ভেবেছিলেন যে বিএনপির বর্জনের মধ্যে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হয়ে গেলে দেশে গৃহযুদ্ধ বেধে যাবে। কোনো কিছু হয়েছে? হয়নি। কারণ বিএনপির মানুষ খুন করা আন্দোলন কেউ গ্রহণ করে নাই। মানুষ খুন করার আন্দোলন দেশবাসী গ্রহণ করে নাই। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তিনি আরো কঠোর আন্দোলন নিয়ে নামুক না, আসুক! তারপর দেখা যাবে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক মানুষের জীবন ঝুঁকিতে থাকে। সবার মতো আমারও ঝুঁকি থাকতে পারে। খুনিরা এই মাটিতে আমার মা, বাবা, ভাই, এমনকি ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেলকেও ছেড়ে দেয়নি। ঝুঁকির কথা মাথায় রেখেই আমি এসেছি। আমি কোনো ঝুঁকির পরোয়া করি না। ঝুঁকি না নিলে আপনারা গণতন্ত্র ফিরে পেতেন না। তিনি বলেন, এদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা সব কিছু ত্যাগ করেছেন। তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা বাবার স্বপ্ন ছিল। বাবার স্বপ্নের বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সেভাবে গড়ে তুলতে চাই। কে কী বললো তাতে কিছু আসে যায় না।
সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসনির্ভর দুটি বিতর্কিত বইয়ে বিশেষ কোনো ব্যক্তির লেখার ধরনের সঙ্গে মিল রয়েছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি প্রকাশকের ‘দায়িত্বহীনতা’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, যে যার আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখে যাচ্ছেন। যারা লিখেছেন সে সময় তাদের বয়স কত ছিল? আর সেটা প্রকাশকরা কীভাবে প্রকাশ করেন। তাছাড়া, দুটি বইয়ের লেখা একজনের বলেই মনে হয়।