DMCA.com Protection Status
title="৭

বহিষ্কৃত লতীফ সিদ্দিকী এখনও আওয়ামী লীগের মাথা ব্যাথার কারন

1410753720মন্ত্রীসভা এবং দল থেকে আপাতঃ বহিষ্কৃত আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফিরুন, তা চায় না আওয়ামী লীগ। তবে তাঁর ভারতের কলকাতায় অবস্থান করা নিয়েও দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি আছে বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লতিফ সিদ্দিকী প্রতিবেশী দেশ ভারত ছেড়ে অন্য কোনো দেশে গেলে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা খুশি হবেন। তবে তাঁর সঙ্গে দল কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে আপাতত কোনো যোগাযোগ করা হবে না। তিনি যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাতেও সাড়া দেওয়া হবে না। বরং এমন পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি করা হবে, যাতে তিনি নিজে থেকেই দেশে না ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে করা একটি মামলায় গত বুধবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি এরই অংশ। সরকার ও দলের এ অবস্থানের কথা বিভিন্ন মাধ্যমে লতিফ সিদ্দিকী ইতিমধ্যে জেনেছেনও।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন  বলেন, দল যা করার করেছে। বাকিটা করবে ২৪ অক্টোবরের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে। এখন দেশে আসা না-আসা লতিফ সিদ্দিকীর ব্যক্তিগত ব্যাপার। আর তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো আইনের নিজস্ব গতিতে চলবে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতাদের মতে, লতিফ সিদ্দিকী দেশে আসার অর্থই হচ্ছে ধর্মভিত্তিক দল, সংগঠন ও সরকারবিরোধীদের হাতে ইস্যু তুলে দেওয়া। সরকার ও আওয়ামী লীগ এই মুহূর্তে এ ঝুঁকি নেবে না। ২৪ অক্টোবর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের পরবর্তী বৈঠকে তাঁর প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

সরকারের একজন মন্ত্রী বলেন, প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি বিপর্যস্ত থাকায় এই মুহূর্তে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সরকারের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। এ অবস্থায় হজ ও মহানবী (সা.)-কে নিয়ে মন্তব্য সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। বিশেষ করে ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে সরকার উদ্বেগের মধ্যে পড়ে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী বিদেশে থাকা অবস্থায়ই লতিফের মন্ত্রিত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা দ্রুত গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশনা দেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আরব দেশগুলোর মনোভাব নিয়ে সরকার সব সময় কিছুটা অস্বস্তিতে থাকে। হজ যেহেতু সৌদি আরবের একটা বড় উৎসব, তাই লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যে সৌদি সরকার যাতে আহত না হয়, সে বিষয়ে সরকার কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিল। তাই ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও গত শুক্রবার বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে সরকার ও দলের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে।

অবশ্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগের যা করণীয় তা করা হয়ে গেছে। এখন তিনি দেশে আসবেন, নাকি বিদেশে থাকবেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে দল বা সরকারের কিছু করার নেই।

লতিফ সিদ্দিকীর পরিণতির পর আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা এখন রাজনীতি কিংবা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সতর্ক রয়েছেন। একজন মন্ত্রী এই প্রতিবেদককে বলেন, আগামী কিছুদিন বক্তৃতাবাজি বন্ধ। কোন কথা বিপদ ডেকে আনে, বলা তো যায় না।

এদিকে লতিফ সিদ্দিকী বাদ যাওয়ার ফলে দলের সভাপতিমণ্ডলী ও মন্ত্রিসভা—দুই জায়গাতেই পদ খালি হয়েছে। সভাপতিমণ্ডলীর পদ নিয়ে তেমন প্রতিযোগিতা নেই। তবে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়ার আশায় অনেক নেতাই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। সরকারের গত আমলে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছিলেন এমন অন্তত পাঁচ-ছয়জন নেতা নিয়মিত গণভবনে যাতায়াত করছেন বলেও জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ সভাপতিমণ্ডলী ১৫ সদস্যবিশিষ্ট। এর মধ্যে লতিফ সিদ্দিকী বহিষ্কার ও জোহরা তাজউদ্দীন মারা গেছেন। ফলে সভাপতিমণ্ডলীর দুটি পদ শূন্য আছে। দলীয় একটি সূত্র জানায়, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর দুটি শূন্যপদ পূরণের সম্ভাবনা আছে। এরপর দলের জাতীয় কমিটির সভা হবে। দশম সংসদ হওয়ার পর জাতীয় কমিটির বৈঠক হয়নি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!