সরকারের ড্যামকেয়ার (বেপরোয়া) ভাব পতনের কারণ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘দেশে আজ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকেই অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে। এর জন্য অনেকাংশে দায় সরকারের। তাদের উচিত হবে, এ সমস্যা থেকে উত্তরণে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করা। সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। তবে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় আপত্তি থাকলে সরকার নিজেরাও আলোচনা করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারে।
’রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসায় গতকাল দৈনিক প্রথম বাংলাদেশের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ইনাম আহমেদ চৌধুরী। সাবেক এই সচিব বলেন, ‘দেশে এখন রাজনৈতিক সংকট চলছে। এটা সরকার মনে না করলেও দেশবাসী খুবই উদ্বিগ্ন। অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে? অনেকে বলছেন, বিএনপি আন্দোলন করতে পারছে না। হরতাল নেই, অবরোধ নেই। আমি মনে করি, এই পর্যবেক্ষণ ঠিক নয়। আমার প্রশ্ন, সহিংসতার অভাবই আন্দোলনের অনুপস্থিতি? প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ভাষা যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে হবে, তার কোনো মানে নেই। এখন আর অতীত ঘাঁটাঘাঁটি করে লাভ নেই।
আমাদের সবারই উচিত হবে, ভবিষ্যৎ উন্নয়নে এক হয়ে কাজ করা।’ তিনি বলেন, ‘সরকার যদি ভাবে, এভাবেই তারা চালিয়ে যাবে। তাহলে তারা ভুল পথে আছে। মানুষের মধ্যে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ দানা বেঁধে উঠছে। অতীতেও আমরা এটা দেখেছি। পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন সফল হয়েছে। বাংলাদেশেও সেই আন্দোলন সফল হবে। আমি মনে করি, বিএনপি সত্যিকারের পথে জনগণকে নিয়ে আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে।’ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বে দিয়েছে ছাত্রজনতা।
গণতান্ত্রিক আন্দোলন এভাবেই আসে। তারপর কোনো একটি দল নেতৃত্বে এসে ওই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এখন সরকারের মধ্যে থাকা জাতীয় পার্টিও বলছে, দেশে একদলীয় শাসন চলছে। সমস্যার সৃষ্টি হলে চোখ বুঝে থাকলে তা মিটে যায় না, সরকারকে তা মনে রাখতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ গণতন্ত্র থেকে লাইনচ্যুত হয়ে যাবে। এটা অশনি সংকেত।’বিগত ৫ জানুয়ারি দেশে ভোটবিহীন নির্বাচন হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এটা শুধু আমরাই বলছি না, সারা বিশ্বও এ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাই সবার অংশগ্রহণে আমরা সত্যিকারের একটি নির্বাচন চাই। যা হয়েছিল ’৯৬ সালে।
কিন্তু সরকার সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় ওই নির্বাচনের কথা বললেও এখন তারা তা চাচ্ছে না। এটা মোটেই ঠিক হচ্ছে না।’তিনি বলেন, ‘আমরা যদি গণতান্ত্রিক উপায়ে সমস্যার সমাধান করতে না পারি, তাহলে দেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে বাধ্য। তাতে শুধু আমাদের রাজনীতির ক্ষতি হবে তা নয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতির সম্মুখীন হব। রাজনৈতিক সমস্যার কারণে অর্থনৈতিক, সামাজিক, কৃষি ও শিল্প খাতেও সমস্যার সৃষ্টি হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও রপ্তানিতে যে কী ধরনের বিপর্যয় হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।’বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘অনেকেই বলে থাকেন, বিএনপি আন্দোলন করছে না।
আমার কাছে মনে হয়, এটা সঠিক পর্যবেক্ষণ নয়। সারা দেশে গণসংযোগের মাধ্যমে জনগণকে জানানো হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে জনগণকে তাদের দাবির প্রতি ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের আশা-আকাক্সক্ষা ধূলিসাৎ করে সরকার এখন একদলীয় শাসন কায়েম করছে। অতীতের মতো এখনো তারা ভুল পথে হাঁটছে। আজ বিএনপি কী চাচ্ছে না চাচ্ছে তা নয়, দেশের জনগণ কী চাচ্ছে সেটাই দেখার বিষয়। বিএনপি একটি মানুষের বাহন মাত্র। বাংলাদেশের মানুষের মূল্যবোধের স্বীকৃতি দিতে হবে। বিএনপি সেই স্বীকৃতির নেতৃত্ব দেবে।
’ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘হামলা-মামলা, গুম-খুনের রাজনীতি, অত্যাচার-নিপীড়ন দেশের জনগণ আর সহ্য করবে না। কেউ আইন লঙ্ঘন করলে অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু প্রয়োগকারী সংস্থাকেও মনে রাখতে হবে, তাদের এমন কাজ করা উচিত যাতে মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা আসে। অন্যায়ভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করা ঠিক নয়। এটা গণতান্ত্রিক পন্থা নয়।’ঢাকা কলেজের সাবেক এই জিএস বলেন, ‘প্রয়াত অধ্যাপক পিয়াস করিমকে নিয়ে সরকার যা করল তা ছিল ভ্রান্তিমূলক। সরকারের একজন মন্ত্রীও বললেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লিফলেট বিতরণ করেছেন।
কিন্তু একটি চক্রের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে তার লাশ শহীদ মিনারে নিতে না দেওয়া খুবই দুঃখজনক। তা ছাড়া নয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে সেখানে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা খুবই অন্যায়। এটা অবিশ্বাস্য ব্যাপারও।’ ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘শহীদ মিনার কোনো দলের নয়, কারও নিজস্ব সম্পত্তি নয়। এটা বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক, স্বপ্ন ও জাতির প্রতীক। আজ বিএনপি যেতে পারবে না, কাল আওয়ামী লীগ যেতে পারবে না, এটা ঠিক নয়। এটাও কিন্তু রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকেই এসেছে।’