পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- এমন ইঙ্গিতপূর্ণ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার।
শুক্রবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। পত্রিকাটির ছাপা সংস্করণের (প্রিন্ট এডিশন) প্রথম পৃষ্ঠায় চার কলামজুড়ে ছাপা হয় সংবাদটি। অনলাইন এডিশনেও সমান গুরুত্বের সঙ্গে তা প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিলে তার ফল মারাত্মক হবে, বললেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কারও নাম করেননি ঠিকই, তবে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে যেভাবে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের নাম জড়িয়েছে, তাতে এই সতর্কবার্তার পরোক্ষ লক্ষ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বলেই অনেকের ধারণা।’
গতকাল প্রধানমন্ত্রী সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন শেখ হাসিনা।
আনন্দবাজার জানায়, তার বাড়ি গণভবনে হাসিনা বলেন, ভারতবিরোধী জঙ্গিদের উৎখাত করেছে তার সরকার। এবার ভারতের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার পালা। কোনো কোনো জঙ্গি ভিন দেশে গিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশের কাছে বিস্তারিত তথ্য আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে ওই ঘটনার সঙ্গে জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ পেয়েছে ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। জানা গেছে, সেখানে তৈরি হওয়া বিস্ফোরকের অন্যতম গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ। এমনকী, খোদ হাসিনাকে হত্যা করে অভ্যুত্থান ঘটানোর পরিকল্পনাও ষড়যন্ত্রকারীদের ছিল বলে জানা গেছে। এনআইএ-র তিন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হাসিনা অবশ্য বলেন, এই খবরে তিনি উদ্বিগ্ন নন। তার সহাস্য মন্তব্য, ‘আমি তো এক্সটেনশনে চলছি। বহু আগেই আমার মরে যাওয়ার কথা। কিন্তু মরিনি। এখন আর মরার ভয় পাই না।’
এতে আরো বলা হয়, খাগড়াগড় কাণ্ডে জঙ্গিদের মদদদাতা হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের নাম উঠে এসেছে। অভিযোগ, জঙ্গিদের নিরাপদ ঘাঁটি গাড়ার ব্যাপারে সাহায্য করেছিলেন তৃণমূলের কেউ কেউ। এমনকী, তৃণমূলের এক রাজ্যসভার সাংসদ জেএমবি-জঙ্গিদের সাহায্য করতে সারদার টাকা বাংলাদেশে পাচার করেছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই দিল্লিকে অবহিত করেছে ঢাকা। সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের বার্ষিক অধিবেশেনের ফাঁকে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলাদা বৈঠকে বাংলাদেশের জঙ্গিদের সঙ্গে ভারতের যোগ নিয়ে তথ্যাদিও দিয়েছেন হাসিনা।
আনন্দবাজারের দাবি, বৃহস্পতিবার সরাসরি তৃণমূলের নাম না-করলেও হাসিনার মন্তব্য, ‘জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়াটা যে কী মারাত্মক, সবাইকে তা উপলব্ধি করতে হবে।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ, পরে আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় তিনি বলেন, ‘যখন খবর পাই পশ্চিমবঙ্গেই আশ্রয় নিয়ে জঙ্গিরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে, সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে, মানুষের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে, খুব খারাপ লাগে।’
এতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিমবঙ্গের মানুষের অকুণ্ঠ সহযোগিতা এবং সে জন্য বাংলাদেশের মানুষের কৃতজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে হাসিনার আশা, ‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কিছুতেই এ জিনিস সহ্য করবেন না। তারাই তাদের মাটি থেকে জঙ্গিদের নিকেশ করবেন।’
প্রতিবেদনে জানানো হয়, আনন্দবাজারের সঙ্গে কথা বলার সময় ভারত-বিরোধী জঙ্গি দমনে অতীতে বাংলাদেশ যে সক্রিয়ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, সে কথাও মনে করিয়ে দেন হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারতীয় জঙ্গিদের আমরা সমূলে উৎখাত করেছি। অনেকের অনেক প্রভাবশালী বন্ধু ছিল। আমরা কাউকে রেয়াত করিনি। আমরা আমাদের অঙ্গীকার পালন করেছি। ভারতের মানুষ এ বার তাদের মাটি থেকে বাংলাদেশের জঙ্গি ঘাঁটিগুলি উচ্ছেদ করুক। ও দেশের যেসব মানুষ এই জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিক।’
পশ্চিমবঙ্গ সরকারও এ কাজে সাহায্য করবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা ।
শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্ত নিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় গোয়েন্দাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তদন্তের ব্যাপারে ভারতকে সব রকম সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ। তদন্তের কাজে সাহায্য করতে শিগগিরই ভারতে যাবেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। শেখ হাসিনার কথায়, ‘এখান থেকে তাড়া খেয়ে জঙ্গিরা এখন পড়শি দেশে আশ্রয় নিয়েছে। কারা এদের আশ্রয় দিয়েছে, কী চক্রান্ত চলেছে, এসব নিয়ে অনেক খবর আমাদের কাছে রয়েছে। তবে সব কথা এখনই বলা যাবে না।’