একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে ১০টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
রায়ে ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
১১ নং অভিযোগ: শহীদ জসিম উদ্দিনসহ ছয়জনকে অপহণের পর নির্যাতন করা হয়। এতে জসিমসহ পাঁচজন নিহত হন এবং পরে লাশ গুম করা হয়।
১২ নং অভিযোগ: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ তিনজনকে অপহরণ করে নির্যাতন করা হয়। এতে দু’জন নিহত হন এবং তাদের লাশ গুম করা হয়।
এছাড়া ২ নম্বর অভিযোগে ২০ বছর, ৩ নম্বরে ৭ বছর, ৪ নম্বরে ৭ বছর, ৬ নম্বরে ৭ বছর, ৭ নম্বরে ৭ বছর, ৯ নম্বরে ৭ বছর, ১০ নম্বরে ৭ বছর, ১৪ নম্বরে ১০ বছরসহ মোট ৭২ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগে মীর আসেম আলীকে খালাস দেয়া হয়েছে।
এর আগে সকাল ৯টার দিকে কড়া নিরাপত্তায় তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।
সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে রায় ঘোষণা শুরু করেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। রায় পড়ার সময় ট্রাইব্যুনালে কাসেম আলীকে উদ্বিগ্ন দেখা গেছে।
বিচার কার্যক্রম চলাকালে মীর কাসেম আলী গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। রায় ঘোষণার জন্য গতকাল শনিবার তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়ায় দুই দফায় ৭২ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে জামায়াত। বৃহস্পতিবার চলে প্রথম দফার হরতাল। রোববার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল। সেই হরতালের মধ্যেই মীর কাসেমের রায় দেয়া হলো আজ।
মীর কাসেম আলী জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। ইবনে সিনা ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও ইসলামী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক তিনি।
মীর কাসেম আলীকে গত বছর ১৭ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মামলার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করে রায়টি অপেক্ষমান রাখেন। মামলাটি প্রথমে ট্রাইব্যুনাল-১-এ ছিল। পরে তা ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্থানান্তর করা হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে দু’টি অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যু দেয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার পর পরই উত্তেজিত হয়ে পড়েন মীর কাসেম।
রায় ঘোষণার পর উত্তেজিত মীর কাসেম আলী আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আরে শয়তান- এটি মিথ্যা ঘটনা, মিথ্যা স্বাক্ষী, কালো আইন, ফরামায়েশি রায়। সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, মিথ্যা পরাজিত হবে। শিগগিরই শিগগিরই…।’
তিনি আঙুল উঁচিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় এসব কথা বলতে থাকেন। তখন দায়িত্বরত পুলিশ তাকে মীর কাসেম আলীকে নিচে নামিয়ে আনে। পরে তাকে ট্রাইব্যুনাল হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে মীর কাসেমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেছেন, ‘রায়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি, সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আইনানুগভাবে রায় দেয়া হয়নি। তাই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করবো।’
রোববার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রথম ট্রাইব্যুনাল একটি দ্বিধাবিভক্ত রায় দিয়েছেন। এর আগে কখনো এমন রায় দেয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘এই মামলায় মীর কাসেমের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন যেসব সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের কেউ বলেননি যে, ৫ নভেম্বরের পরে তিনি চট্টগ্রামে ছিলেন। ঘটনার সময়ে তিনি যে ঢাকায় ছিলেন সে ব্যাপারে আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে।’
তরুণ মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনকে অপহরণের পর হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগে মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। অন্যান্য অভিযোগে তাকে ৭২ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।