নবগঠিত কমিটি নিয়ে ছাত্রদলে সৃষ্ট অস্থিরতা নিরসনে নিজেদের দাবি নিয়ে বিক্ষুদ্ধ নেতারা এবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসায় গেলেন। সংগঠনটির নতুন কমিটির শীর্ষ দুই নেতাকে বাদ এবং বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি নিয়ে মঙ্গলবার মহাসচিবের বাসায় যান তারা। তবে দাবি পূরণের আশ্বাসের পরিবর্তে মহাসচিবের ‘কড়া কথায়’ হতাশ হয়েছেন ওইসব নেতা। এ সময় তারা ফের আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নেন।
তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দেশের ক্রান্তিলগ্ন সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
গত ১৪ অক্টোবর রাজিব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণার পর থেকে ওই কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ জানিয়ে আসছে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। একই সঙ্গে তারা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি তোলেন।
সূত্র জানান, আব্বাসের সঙ্গে কয়েকদফা বৈঠকের পর তিনি জানিয়ে দিয়েছেন এ ব্যাপারে তার আর কিছু করার নেই। প্রয়োজনে তিনি দলের অন্য দায়িত্বশীলদের সঙ্গেও কথা বলতে আন্দোলনরত নেতাদের পরামর্শ দেন। এর প্রেক্ষিতে দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে মির্জা আলমগীরের সঙ্গে তাদের অভিযোগ ও দাবি নিয়ে তার বাসায় যান পদবঞ্চিত নেতারা।এ ইস্যুতে সংগঠনটির দুটি পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে ১৯ অক্টোবর সংঘর্ষ ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় করা ভাংচুর হয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় কোন্দল মেটাতে দলটির হাইকমান্ড স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস ও যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে দায়িত্ব দেন।
মহাসচিবের বাসায় গিয়েছেন এমন একজন নেতা বলেন, প্রায় আধঘণ্টা মহাসচিবের বাসায় অবস্থান করলেও তিনি আশ্বস্ত হওয়ার মতো কিছু বলেননি। বরং ছাত্রদলের সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দেন। এর কারণ হিসেবে যুক্তি দেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এই কমিটি অনুমোদন করেছেন। সেহেতু তিনি এর পরিবর্তন করবেন না।
ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাদের অভিযোগ, মহাসচিবের কথায় তারা আন্দোলন স্থগিত করেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি যেভাবে কথা বলছেন, তাতে তারা মর্মাহত। তারা মহাসচিবকে বলেন, ছাত্রদলের নতুন যে কমিটি করা হয়েছে, তাতে ৮০ ভাগ শক্তি খর্ব করা হয়েছে। তাদের দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে দল কার্যকর ফল পাবে না।
ছাত্রদলের ওই নেতা আরো জানান, হরতাল ও বিএনপির দুটি বড় কর্মসূচি থাকায় ৯ নভেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে তারা আবার আন্দোলনে নামবে।
ছাত্রদলের বিক্ষুদ্ধ নেতা তারিকুল ইসলাম টিটু দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের মুভমেন্ট সংগঠনকে বাঁচানোর জন্য। আমরা কমিটিতে পদ পেতে আন্দোলন করছি না। ছাত্রদলে যাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে তাদের বাদ দেওয়ার দাবি করেছি আমরা। একই সঙ্গে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে স্বপদ থেকে অব্যাহতি চাই।’
তিনি জানান, মার্চ ফর ডেমোক্রেসি ও অন্যান্য কর্মসূচিতে রাজীব ও আকরামের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক আছে। তাদের বাদ নিয়ে প্রয়োজনে আরো কম বয়সী নেতৃত্ব দিলেও আপত্তি থাকবে না। তবে এরা থাকতে পারবে না।
মহাসচিবের বাসায় বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদলের নেতাদের মধ্যে আবু সাঈদ খান, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, জাবেদ হাসান শাহিন, তারিকুল ইসলাম টিটু, ফেরদৌস আহম্মেদ মুন্না, নুরুজ্জামান মুক্তি লিংকন, হাবিবুর রহমান সুমন, রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ, আনিসুর রহমান সুজন, আহবুবুল আলম আযম, রবিউল ইসলাম সবুজ, মাহবুবুর রহমান পলাশ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।