বুধবার দুপুর দেড়টা থেকে সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, সচিবসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। উপলক্ষ সিডিএর নির্মাণাধীন নগরীর মুরাদপুর-লালখান বাজার ফ্লাইওভার প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন তিনি।
অনুষ্ঠানস্থলে এসএসএফ, পিজিআর, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্য দাঁড়িয়ে আছেন সারিবদ্ধভাবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ভূমিপ্রতি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান, সাবেক মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীন এমপি, পটিয়ার আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ শামসুল হক চৌধুরী, চন্দনাইশের সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সাতকানিয়ার সাংসদ ড. আবু রেজা নদভী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীহের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালামসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
কড়া নিরাপত্তা, একাধিক টিভি ক্যামেরা ও মন্ত্রী-এমপিদের সামনে একাজটি যিনি করেছেন তিনি হচ্ছেন সিডিএ চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালাম। ২০০০ সালের দিকে তিনি চট্টগ্রামের শিল্পগ্রুপ ওয়েল গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিতি পেলেও পরবর্তীতে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর হাত ধরে নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আলোচনায় আসেন।
এরপর তিনি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের শতবর্ষী সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বারের বিপরীতে ‘চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার’ নামে আরেকটি ব্যবসায়ী সংগঠন দাঁড় করান। যেটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও তিনি।দুপুর সোয়া ২টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর সেনানিবাস থেকে এসে থামে মুরাদপুরে। প্রধানমন্ত্রী গাড়ি থেকে নামার সঙ্গেই সঙ্গেই মন্ত্রী-এমপিদের কাতারে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো শার্ট পরিহিত একব্যক্তি হঠাৎ করেই পা ছুঁয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত এসএসএস সদস্যরা প্রথমে সামনে এগিয়ে গেলেও পরে তার পরিচয় ও এই বিশেষ ভক্তি দেখে কিছু বলেননি। এরপর প্রধানমন্ত্রী নির্ধারিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফ্লাইওভার উদ্বোধন করেন।
এরপর রাজনীতির মাঠে অনেক জল ঘোলা করে তার রাজনৈতিক গুরু মহিউদ্দিন চৌধুরী থেকে দূরে সরে গিয়ে যোগ দেন নতুন করে মহিউদ্দিন বিরোধী শিবির গড়ে তোলা সাবেক মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীনের সঙ্গে। এরই মাঝে নিজেই মহিউদ্দিন-দানু কমিটির গত মেয়াদে নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদকের পদ পাওয়া আব্দুচ ছালাম বাগিয়ে নেন ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক বিবেচনায় সিডিএ চেয়ারম্যানের পদ। স্বয়ং মহিউদ্দিন চৌধুরী ও শ্রমিক লীগের বিরোধিতা সত্ত্বেও পরপর চার দফা প্রশাসনিক কাঠামোর এই চেয়ারম্যান পদে বসানো হয় নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী আব্দুচ ছালমকে।
প্রকাশ্যে জনসম্মুখে প্রধানমন্ত্রী পা ছুঁয়ে সালাম করা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীসহ চট্টগ্রামের অনেক নেতার মাঝে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। এনিয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালামের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে সালাম করা আমার কর্তব্য, তাই করেছি।’ দীর্ঘক্ষণ চুপ করে থাকার পরও তিনি আর কোনো কথা না বলে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।